অজয় দাশগুপ্ত
আরও অনেক কিছুর মতো ঢাকার বইমেলাটি বাংলাদেশ, দেশের বাঙালি ও প্রবাসী বাঙালিদের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। একটি দেশের উজ্জ্বলতার প্রতীক এই মেলা আমাদের অহংকার। এর ইতিহাস সবাই জানেন কি না, জানি না। মনে রাখতে হবে, ইতিহাস বিকৃতি আমাদের মজ্জাগত। তাই আমরা শুরুতেই বলে রাখব মুক্তধারা নামে যে প্রকাশনা সংস্থা আমাদের দেশে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা ভুলে গেলে চলবে না।
মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা এক টুকরো চটের ওপর কয়েকটি বই সাজিয়ে যে মেলার সূচনা করেছিলেন, সেই মেলা আজ পুরো জাতির দর্পণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা একাডেমির চত্বরে চটের ওপর যে মেলা শুরু হয়েছিল, সেই মেলা আজ কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শত শত বর্ণিল স্টল, দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষের ঢল এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হিসেবে এটি নিজের অবস্থান গড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে তখন যুদ্ধের যন্ত্রণা চলমান।
অনেক বিশিষ্ট লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিককে শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় অবস্থান করতে হয়েছিল। দেশের জন্য ভালো কিছু করার অপরাধে তাঁদের সবার কারাবাসের শাস্তি হয়েছিল। তাঁরা পালিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। নিয়মিতভাবে তাঁরা একত্র হতেন জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের কলকাতার অস্থায়ী বাসায়।
লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পীদের এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন চিত্তরঞ্জন সাহাও। নিয়মিত উপস্থিত থেকে দেশের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে তাঁদের উৎসাহ দিতেন। নির্বাসিত এই লেখকদের বই প্রকাশ করার দায়িত্ব তিনি নিজেই নিলেন। সে সময় চিত্তরঞ্জন সাহার ভূমিকায় এবং অন্যদের সহায়তায় ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ নামে কলকাতায় একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাটিই পরবর্তী সময়ে ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’তে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে তখন ধীরে ধীরে তাদের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়।
সময় অতিবাহিত হয়, অন্ধকার আর কালিমার ঘোর কেটে যায়। তখন সবে স্বাধীন হয়েছে দেশ। শিশু বাংলাদেশের ওপর তখনো প্রসব-পরবর্তী রক্ত লেগে আছে। চিত্তরঞ্জন সাহা কলকাতা থেকে সেই লেখকদের বই নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বর্ধমান হাউজের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর শরণার্থী লেখকদের ৩২টি বই নিয়ে বসে যান বিক্রি করতে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের প্রাথমিক উপাদান ছিল এই বইগুলো। সে জন্য বইয়ের ইতিহাসের পাশাপাশি দেশের ইতিহাসেও তাঁদের গুরুত্ব অনেক।
অন্যদিকে আরও কিছু ঐতিহাসিক তথ্য আমাদের চমৎকৃত করে। উদ্ধৃতি তুলে ধরছি: ‘বাংলাদেশে বইমেলার উদ্ভবের ইতিহাস খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমিতেও একসময় চাকরি করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান।
তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল “ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস”। এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো: “বুক” এবং “ফেয়ার”। কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন।’
সরদার জয়েনউদদীনকে আমি দেখেছি। স্বাধীনতার পরপর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত বইমেলার অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছড়া পাঠের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম আমি আর শাহাবুদ্দীন নাগরী। আমাদের সতীর্থ বাকি ছড়াকারদের বাদ দিয়ে রেডিওকেন্দ্রিক কয়েকজন ছড়াকার নিয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জয়েনউদদীন সাহেব জানতেন না। কিন্তু আমরা ছড়া পড়ব না এবং মঞ্চে গিয়ে প্রতিবাদ করব। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় আমার আগেই শাহাবুদ্দীন নাগরীর নাম ঘোষণা করা হলে সে তার লিখিত ছড়া পাঠ করে সুবোধ বালকের মতো ফিরে আসে।
কিন্তু আমি মাইকে প্রতিবাদ করায় অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে। সম্মিলিত প্রতিবাদের কারণে যে ঘটনা ঘটে তার একটা আলোচনার জন্য পরদিন আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। বইঘরের মালিক প্রয়াত শফি সাহেবের বাসায় সে আলোচনায় আমি প্রথম সরদার জয়েনউদদীনকে দেখি।
এই মানুষটির সঙ্গে আমার শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। তাঁর বুকভরা পুস্তকপ্রীতি আর বইমেলা করার যে ইচ্ছা, তখনই তা বোঝা গিয়েছিল। ইতিহাস বলছে: বড় আয়োজনে গ্রন্থমেলা করার তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
সুযোগটি পেয়েও যান। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় আলোচনা সভারও ব্যবস্থা ছিল। সেই সব আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম।
এই মেলায় সরদার জয়েনউদদীন একটি মজার কাণ্ড করেছিলেন। মেলায় যে রকম বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, উৎসুক দর্শকেরাও এসেছিলেন প্রচুর, বইয়ের বেচাকেনাও মন্দ ছিল না; কিন্তু তাঁদের জন্য ছিল একটি রঙ্গ-তামাশাময় ইঙ্গিতধর্মী বিষয়ও। মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল ‘আমি বই পড়ি না’। সরদার জয়েনউদদীন সাহেবের এই উদ্ভাবনা দর্শকদের ভালোভাবেই গ্রন্থমনস্ক করে তুলেছিল বলে অনুমান করি।
এখানেই সরদার জয়েনউদদীন থেমে থাকেননি। ১৯৭২ সালে তিনি যখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক, তখন ইউনেসকো ওই বছরকে ‘আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে। গ্রন্থমেলায় আগ্রহী সরদার সাহেব এই আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন।
ইতিহাস যা-ই বলুক, আজ ঢাকার একুশের বইমেলা বাংলা, বাঙালির প্রাণকেন্দ্র। আমি যতবার এই বইমেলায় গিয়েছি, ততবারই আমার মনে হয়েছে নতুন প্রজন্ম জানে না কত গৌরব আর আত্মত্যাগ আছে এর পেছনে। এটি কেবল বই বেচাকেনা বা বই ছাপানোর পর তা নিয়ে এসে সেলফি তোলার মেলা নয়। এই যে আমরা কথায় কথায় বলি, আমাদের দেশে কেন সংস্কৃতি আগের মতো ডানা মেলতে পারে না, কেন এত সংকীর্ণতা? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বইমেলা। কারণ পুস্তক মানুষের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের ধারক।
আমরা সক্রেটিসকে দেখিনি। আমরা তাঁর কোনো ভিডিও দেখিনি। আমরা গৌতম বুদ্ধকে পাইনি। আমরা চৈতন্য, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকেও সেভাবে দেখিনি। তাঁদের যেটুকু আমরা জানি, এর মাধ্যম বই। সে কারণে বইমেলা জরুরি। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এই মেলা মানে নবিশ লেখকের নতুন বইয়ের আধার নয়। তাদের বই বের হবে, অবশ্যই মেলায় আসবে। সেখান থেকে মানুষ বেছে নেবে।
সঙ্গে চাই বিষয় ও চিন্তার নতুনত্ব। কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রচুর লেখা হয়। প্রচুর বইও আছে। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আবিষ্কার, বিশ্বসাহিত্য ও দর্শনের সময়। এই জায়গাগুলোতে কাজ না হলে, বড় কাজ না হলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে। এমনকি সংগীতের ওপরও ভালো বই দেখি না। গান-বাজনার এমন আকালে এসব দরকারি; খুব বেশি প্রয়োজন।
আমাদের বইমেলা ও বাংলা একাডেমি প্রশ্নমুক্ত নয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কার বিষয়ে ভয়ানক সব প্রশ্নের সম্মুখীন। সেই সব চিন্তা যেন আমাদের বইমেলাকে আক্রমণ করতে না পারে। বইয়ের যোগে জয় হোক বাংলা, বাঙালির। জয়তু বইমেলা।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, কলামিস্ট
আরও অনেক কিছুর মতো ঢাকার বইমেলাটি বাংলাদেশ, দেশের বাঙালি ও প্রবাসী বাঙালিদের আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। একটি দেশের উজ্জ্বলতার প্রতীক এই মেলা আমাদের অহংকার। এর ইতিহাস সবাই জানেন কি না, জানি না। মনে রাখতে হবে, ইতিহাস বিকৃতি আমাদের মজ্জাগত। তাই আমরা শুরুতেই বলে রাখব মুক্তধারা নামে যে প্রকাশনা সংস্থা আমাদের দেশে ইতিহাস তৈরি করেছে, তা ভুলে গেলে চলবে না।
মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা এক টুকরো চটের ওপর কয়েকটি বই সাজিয়ে যে মেলার সূচনা করেছিলেন, সেই মেলা আজ পুরো জাতির দর্পণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলা একাডেমির চত্বরে চটের ওপর যে মেলা শুরু হয়েছিল, সেই মেলা আজ কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা, শত শত বর্ণিল স্টল, দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষের ঢল এবং দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান হিসেবে এটি নিজের অবস্থান গড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে তখন যুদ্ধের যন্ত্রণা চলমান।
অনেক বিশিষ্ট লেখক, শিল্পী ও সাংবাদিককে শরণার্থী হিসেবে কলকাতায় অবস্থান করতে হয়েছিল। দেশের জন্য ভালো কিছু করার অপরাধে তাঁদের সবার কারাবাসের শাস্তি হয়েছিল। তাঁরা পালিয়ে সেখানে অবস্থান করছিলেন। নিয়মিতভাবে তাঁরা একত্র হতেন জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের কলকাতার অস্থায়ী বাসায়।
লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পীদের এই আড্ডায় উপস্থিত থাকতেন চিত্তরঞ্জন সাহাও। নিয়মিত উপস্থিত থেকে দেশের জন্য কাজ চালিয়ে যেতে তাঁদের উৎসাহ দিতেন। নির্বাসিত এই লেখকদের বই প্রকাশ করার দায়িত্ব তিনি নিজেই নিলেন। সে সময় চিত্তরঞ্জন সাহার ভূমিকায় এবং অন্যদের সহায়তায় ‘স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ নামে কলকাতায় একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সংস্থাটিই পরবর্তী সময়ে ‘মুক্তধারা প্রকাশনী’তে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে তখন ধীরে ধীরে তাদের বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়।
সময় অতিবাহিত হয়, অন্ধকার আর কালিমার ঘোর কেটে যায়। তখন সবে স্বাধীন হয়েছে দেশ। শিশু বাংলাদেশের ওপর তখনো প্রসব-পরবর্তী রক্ত লেগে আছে। চিত্তরঞ্জন সাহা কলকাতা থেকে সেই লেখকদের বই নিয়ে আসেন বাংলাদেশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বর্ধমান হাউজের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর শরণার্থী লেখকদের ৩২টি বই নিয়ে বসে যান বিক্রি করতে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পের প্রাথমিক উপাদান ছিল এই বইগুলো। সে জন্য বইয়ের ইতিহাসের পাশাপাশি দেশের ইতিহাসেও তাঁদের গুরুত্ব অনেক।
অন্যদিকে আরও কিছু ঐতিহাসিক তথ্য আমাদের চমৎকৃত করে। উদ্ধৃতি তুলে ধরছি: ‘বাংলাদেশে বইমেলার উদ্ভবের ইতিহাস খুবই কৌতূহলোদ্দীপক। বইমেলার চিন্তাটি এ দেশে প্রথমে মাথায় আসে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীনের। তিনি বাংলা একাডেমিতেও একসময় চাকরি করেছেন। বাংলা একাডেমি থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তিনি গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ পান।
তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর বিদেশি বই সংগ্রহ করত। এর মধ্যে একটি বই ছিল “ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড অব বুকস”। এই বইটি পড়তে গিয়ে তিনি হঠাৎ দুটি শব্দ দেখে পুলকিত বোধ করেন। শব্দ দুটি হলো: “বুক” এবং “ফেয়ার”। কত কিছুর মেলা হয়। কিন্তু বইয়েরও যে মেলা হতে পারে এবং বইয়ের প্রচার-প্রসারের কাজে এই বইমেলা কতটা প্রয়োজনীয়, সেটি তিনি এই বই পড়েই বুঝতে পারেন।’
সরদার জয়েনউদদীনকে আমি দেখেছি। স্বাধীনতার পরপর জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র আয়োজিত বইমেলার অনুষ্ঠানে মঞ্চে ছড়া পাঠের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম আমি আর শাহাবুদ্দীন নাগরী। আমাদের সতীর্থ বাকি ছড়াকারদের বাদ দিয়ে রেডিওকেন্দ্রিক কয়েকজন ছড়াকার নিয়ে অনুষ্ঠান করার কথা জয়েনউদদীন সাহেব জানতেন না। কিন্তু আমরা ছড়া পড়ব না এবং মঞ্চে গিয়ে প্রতিবাদ করব। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের সন্ধ্যায় আমার আগেই শাহাবুদ্দীন নাগরীর নাম ঘোষণা করা হলে সে তার লিখিত ছড়া পাঠ করে সুবোধ বালকের মতো ফিরে আসে।
কিন্তু আমি মাইকে প্রতিবাদ করায় অনুষ্ঠানে ছেদ পড়ে। সম্মিলিত প্রতিবাদের কারণে যে ঘটনা ঘটে তার একটা আলোচনার জন্য পরদিন আমাকে ডেকে পাঠানো হয়। বইঘরের মালিক প্রয়াত শফি সাহেবের বাসায় সে আলোচনায় আমি প্রথম সরদার জয়েনউদদীনকে দেখি।
এই মানুষটির সঙ্গে আমার শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠতে সময় লাগেনি। তাঁর বুকভরা পুস্তকপ্রীতি আর বইমেলা করার যে ইচ্ছা, তখনই তা বোঝা গিয়েছিল। ইতিহাস বলছে: বড় আয়োজনে গ্রন্থমেলা করার তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
সুযোগটি পেয়েও যান। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় আলোচনা সভারও ব্যবস্থা ছিল। সেই সব আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৎকালীন প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল হাই, শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম।
এই মেলায় সরদার জয়েনউদদীন একটি মজার কাণ্ড করেছিলেন। মেলায় যে রকম বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন, উৎসুক দর্শকেরাও এসেছিলেন প্রচুর, বইয়ের বেচাকেনাও মন্দ ছিল না; কিন্তু তাঁদের জন্য ছিল একটি রঙ্গ-তামাশাময় ইঙ্গিতধর্মী বিষয়ও। মেলার ভেতরে একটি গরু বেঁধে রেখে তার গায়ে লিখে রাখা হয়েছিল ‘আমি বই পড়ি না’। সরদার জয়েনউদদীন সাহেবের এই উদ্ভাবনা দর্শকদের ভালোভাবেই গ্রন্থমনস্ক করে তুলেছিল বলে অনুমান করি।
এখানেই সরদার জয়েনউদদীন থেমে থাকেননি। ১৯৭২ সালে তিনি যখন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক, তখন ইউনেসকো ওই বছরকে ‘আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে। গ্রন্থমেলায় আগ্রহী সরদার সাহেব এই আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন।
ইতিহাস যা-ই বলুক, আজ ঢাকার একুশের বইমেলা বাংলা, বাঙালির প্রাণকেন্দ্র। আমি যতবার এই বইমেলায় গিয়েছি, ততবারই আমার মনে হয়েছে নতুন প্রজন্ম জানে না কত গৌরব আর আত্মত্যাগ আছে এর পেছনে। এটি কেবল বই বেচাকেনা বা বই ছাপানোর পর তা নিয়ে এসে সেলফি তোলার মেলা নয়। এই যে আমরা কথায় কথায় বলি, আমাদের দেশে কেন সংস্কৃতি আগের মতো ডানা মেলতে পারে না, কেন এত সংকীর্ণতা? এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে বইমেলা। কারণ পুস্তক মানুষের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের ধারক।
আমরা সক্রেটিসকে দেখিনি। আমরা তাঁর কোনো ভিডিও দেখিনি। আমরা গৌতম বুদ্ধকে পাইনি। আমরা চৈতন্য, লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকেও সেভাবে দেখিনি। তাঁদের যেটুকু আমরা জানি, এর মাধ্যম বই। সে কারণে বইমেলা জরুরি। একই সঙ্গে আমি মনে করি, এই মেলা মানে নবিশ লেখকের নতুন বইয়ের আধার নয়। তাদের বই বের হবে, অবশ্যই মেলায় আসবে। সেখান থেকে মানুষ বেছে নেবে।
সঙ্গে চাই বিষয় ও চিন্তার নতুনত্ব। কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রচুর লেখা হয়। প্রচুর বইও আছে। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আবিষ্কার, বিশ্বসাহিত্য ও দর্শনের সময়। এই জায়গাগুলোতে কাজ না হলে, বড় কাজ না হলে আমাদের কপালে দুঃখ আছে। এমনকি সংগীতের ওপরও ভালো বই দেখি না। গান-বাজনার এমন আকালে এসব দরকারি; খুব বেশি প্রয়োজন।
আমাদের বইমেলা ও বাংলা একাডেমি প্রশ্নমুক্ত নয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কার বিষয়ে ভয়ানক সব প্রশ্নের সম্মুখীন। সেই সব চিন্তা যেন আমাদের বইমেলাকে আক্রমণ করতে না পারে। বইয়ের যোগে জয় হোক বাংলা, বাঙালির। জয়তু বইমেলা।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী, কলামিস্ট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪