Ajker Patrika

ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সস্ত্রীক নিহত

কলকাতা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ০৮
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সস্ত্রীক নিহত

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ভারতের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত (৬৩), তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াতসহ ১৩ জন নিহত হয়েছেন। তামিলনাডু রাজ্যের সুলুর থেকে গতকাল বুধবার দুপুরে ওই রাজ্যের ওয়েলিংটন শহরে প্রতিরক্ষা কলেজের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কিছু পরই হেলিকপ্টারটি নীলগিরি পাহাড়ের ওপর বিধ্বস্ত হয়। হেলিকপ্টারটিতে ১৪ জন আরোহী ছিলেন।

জেনারেল বিপিন রাওয়াত সস্ত্রীক নিহত হওয়ার খবর গতকাল সন্ধ্যায় এক টুইটে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। এর আগে ২০১৫ সালে নাগাল্যান্ডে একবার হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন জেনারেল বিপিন। তবে সেবার প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। ভারতীয় বিমানবাহিনী আরও জানিয়েছে, গতকালের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ১৪ আরোহীর মধ্যে কেবল বেঁচে গেছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিং। তাঁর শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তিনি ওয়েলিংটনে সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু হয়েছে।

সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধিতে ২০১৯ সালে ভারত সরকার চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি করে। এর পরপরই ওই পদে বিপিন রাওয়াতকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নবগঠিত সামরিকবিষয়ক দপ্তরের প্রধানের দায়িত্বও পালন করছিলেন। এর আগে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্যমতে, ওয়েলিংটনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গতকাল নয়াদিল্লি থেকে সস্ত্রীক তামিলনাড়ুর সুলুরে যান সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বিপিন রাওয়াত।

এরপর চেপে বসেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার এমআই-১৭ ভি৫-এ। দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারটিতে জেনারেল বিপিন রাওয়াত, তাঁর স্ত্রী, তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কমান্ডোরা ছিলেন। এ ছাড়া পাঁচজন ক্রুও ছিলেন। এই হেলিকপ্টারে সাধারণত ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সফর করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্ঘটনার খবর পেয়েই তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ভারতের বিমানবাহিনীর প্রধান ভি আর চৌধুরীও দ্রুত পৌঁছান। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তারপর তিনি ও ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে জেনারেল রাওয়াতের দিল্লির বাসভবনে গিয়ে স্বজনদের শোক জানিয়ে আসেন। আজ বৃহস্পতিবার ভারতের পার্লামেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর কথা। আজই তাঁর মরদেহ দিল্লি নেওয়ার কথা।

প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে জানানো হয়, জেনারেল বিপিন রাওয়াত বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে সুলুরে ভারতীয় বিমানঘাঁটি থেকে হেলিকপ্টারে করে ওয়েলিংটনের উদ্দেশে রওনা হন। গন্তব্য থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে থাকতে নীলগিরি পাহাড়ের ওপর হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। দুর্ঘটনার খবরটি প্রথম পাওয়া যায় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হঠাৎ করেই আগুনের গোলা দেখে তাঁরা ছুটে যান দুর্ঘটনাস্থলে। অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগান। প্রথমে দুজনকে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পাহাড়ের ওপর ঘন জঙ্গলে। হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়েই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ঘটনাস্থলের গাছপালাও ভেঙে পড়ে এর আঘাতে।

জেনারেল বিপিন রাওয়াতের মৃত্যুর খবর প্রকাশ হতেই শোক জানাতে শুরু করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকে। টুইটারে এক শোকবার্তায় নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বিপিন রাওয়াত ছিলেন একজন অসাধারণ সৈনিক। ভারত তাঁর অনন্য সেবার কথা কোনো দিন ভুলবে না।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন পাকিস্তানের বালাকোটে ঢুকে ভারতের কমান্ডোরা জইশ-ই-মোহাম্মদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়, সে সময় বিপিন রাওয়াত ভারতের সেনাপ্রধান। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার কয়েক দিন পরই ওই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালে বিপিন রাওয়াতের তত্ত্বাবধানেই মিয়ানমারে সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ সেনা নিহত হওয়ার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখায় সার্জিক্যাল স্ট্রাইক পরিচালনা করে। সে সময় বিপিন রাওয়াত ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান। দিল্লি থেকে তিনি পুরো অভিযানের পরিকল্পনা ও নজরদারি করেন। এর তিন মাস পরই তিনি সেনাপ্রধান হন। বিপিন রাওয়াত ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে যোগ দেন ১৯৭৮ সালে।

ভারতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় এর আগেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াইএসআর রেড্ডি ও অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দোর্জি খুন্ডু তাঁদের অন্যতম। এ ছাড়া বর্তমান বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার বাবা ভারতের সাবেক মন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়া এবং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছেলে সঞ্জয় গান্ধী প্রাণ হারিয়েছেন উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায়। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত