Ajker Patrika

শীত-কুয়াশায় ধুঁকছে ফসল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
Thumbnail image

হাড়কাঁপানো শীতের সঙ্গে দাপট বেড়েছে ঘন কুয়াশার। এতে যেমন স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন, তেমনি মাঠজুড়ে থাকা রবিশস্যসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কয়েক দিনের কুয়াশায় এরই মধ্যে অনেক ফসলে দেখা দিয়েছে রোগবালাই। অনেক স্থানে পেঁয়াজের পাতায় দেখা দিয়েছে পচন। পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রক্ষা করা যাচ্ছে না বোরো বীজতলা। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চললে রবিশস্য ও বোরোর আবাদে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা কৃষকদের। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

টানা এক সপ্তাহ ধরে ঠাকুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কৃষকেরা জানিয়েছেন, কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা। এ কারণে চলতি মৌসুমে ব্যাহত হতে পারে বোরো চাষ। গতকাল শনিবার সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বোরো ধানের বীজতলা হলুদ হয়ে গেছে। কিছু কিছু জমিতে চারা মরে যাচ্ছে।

শালের হাট গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বোরো বীজতলা হরেক রকমের পলিথিনে ঢেকে দিয়েছি। বীজতলা রক্ষায় কীটনাশক স্প্রে করেও তেমন কোনো ফল পাচ্ছি না। গাছ হলুদ হয়ে গেছে।’

উত্তরের আরেক জেলা নওগাঁয় শীতকালীন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কৃষকেরা জানিয়েছেন, ফসল রক্ষায় কীটনাশক ব্যবহার করেও কাজ হচ্ছে না। লালমনিরহাটেও শত শত একর বোরো ধান ও অন্যান্য বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

রংপুরে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে আলুখেতে লেট ব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। এতে গাছে ছত্রাক ধরে পাতা ও কাণ্ড পচে যাচ্ছে। অতিরিক্ত শীত পড়ায় বোরো ধানের বীজতলা বিবর্ণ হয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে পচন রোগ।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে শীতের তীব্রতায় বীজতলা ও রবিশস্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তাঁর তিন বিঘা খেতের সরিষার দানা বাঁধতে পারছেন না।

চাঁদপুরে ঘন কুয়াশায় বোরো বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সাতক্ষীরায় ঘন কুয়াশায় রবিশস্যের পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে আমের মুকুলের। মেহেরপুরের গাংনীতেও তীব্র শীত ও কুয়াশায় হলুদ হয়ে যাচ্ছে বোরোর বীজতলা।

ফরিদপুরে পেঁয়াজের পাতায় পচন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে পচন থেকে পেঁয়াজের পাতা রক্ষায় কীটনাশক ছিটাতে দেখা গেছে কৃষকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, এতে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা লাল হয়ে গেছে। এ ছাড়া আলু, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির গাছ নষ্ট হচ্ছে।

বগুড়ায় আলুর খেতে মড়ক লেগেছে বলে জানান অনেক কৃষক। তবে সেখানে বীজতলা এখনো স্বাভাবিক রয়েছে। মাদারীপুরে বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে সদর উপজেলার হাজীর হাওলা গ্রামের লাল মিয়া, মোবারক হোসেনসহ একাধিক কৃষক জানান, দুই দিন ধরে মাদারীপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা পড়েছে। এতে করে বীজের ক্ষতি হয়েছে। অনেক বীজের রং হলদে হয়ে গেছে। শীতের তীব্রতা না কমলে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হবে তাঁদের।

মেহেরপুরে তীব্র শীতে ফসলে ছত্রাক ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। বাড়ছে পোকার ও ছত্রাকের আক্রমণ। সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, কুয়াশা ও শীতে বীজতলা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। 

এ ছাড়া বরিশাল, গাইবান্ধা, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ, খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি, সাতক্ষীরার কলারোয়া, যশোরের ঝিকরগাছা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শীত ও কুয়াশায় বোরোর বীজতলা ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

আবহাওয়ার বিরূপ পরিস্থিতিতে কৃষকের করণীয় সম্পর্কে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার সময় স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। সকালের জমে থাকা পানি বের করে আবার নতুন পানি দেওয়া ও চারার মাথায় জমে থাকা শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। তাহলে বোরোর চারায় কোনো ক্ষতি হবে না। আর রোগবালাইয়ের ক্ষেত্রে কৃষকদের ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ বাড়তি পরিচর্যার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধিরা]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত