Ajker Patrika

আলীকদমে সুপেয় পানির সংকট

শাহ আলম, আলীকদম (বান্দরবান)
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ২৮
Thumbnail image

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ধীর গতির কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। এদিকে সংকটাপন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ করছে না স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে প্রায় দুই দশক ধরে আলীকদমের প্রধান নদী মাতামুহুরী নাব্যতা-সংকটে ভুগছে। পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর দুই পাশে বৃক্ষনিধনসহ পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। এতে পানির উৎস নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী উইলিয়াম মারমা জানান, পাহাড়ি প্রত্যন্ত এলাকায় পানির উৎস ঝিরি, ঝরনা ও কুয়া। এলাকার ঝিরি ও ঝরনাগুলো আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন শুষ্ক মৌসুমে এগুলো শুকিয়ে যায়। পাহাড়ে এখন নির্বিচারে বৃক্ষনিধন ও বন উজাড় করা হচ্ছে। গাছপালা না থাকলে তো পাহাড়ে পানি পাওয়া যাবে না।

উপজেলার উত্তর পালংপাড়া, সিলেটিপাড়া, পানবাজার, পূর্ব পালংপাড়া, বাসস্টেশন, খুইল্যা মিয়াপাড়া, ছাবের মিয়াপাড়া, থানাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাবার পানির সংকটে এলাকার জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থানে রিংওয়েল থেকে এক কলস পানির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় নারীদের খালি হাতে ফিরে যেতে হয়।

উপজেলা সদরে পানির সংকট নিরসনে ২০১১ সালের জুনে পানি শোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ গত বছর মে থেকে শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলা সদর ও আশপাশে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে যেসব রিংওয়েল ও টিউবওয়েল বসিয়েছে, তা সঠিকভাবে স্থাপন করা হয়নি। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের এডিপির বরাদ্দ ও এলজিইডি থেকে বেশির ভাগ রিংওয়েল-টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে জুন-জুলাইয়ে। এ সময় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। মাটির ৩০ থেকে ৪০ ফুট গভীরেই পানি পাওয়া যায়। ফলে প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে এসব টিউবওয়েলে পানি পাওয়া যায় না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, ভৌগোলিক কারণে সমতলের মতো প্রকল্প গ্রহণ করে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রায় পাথুরে হওয়ায় নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয় না। পাহাড়ে বিস্তৃত প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় পানির উৎস হ্রাস পেয়েছে।

স্থানীয় সংবাদকর্মী এস এম জিয়াউদ্দিন জুয়েল বলেন, পাহাড়ের গাছপালা এবং নদী-ছড়া, ঝিরি-ঝরনার পাথরগুলোই মূলত পানি ধরে রাখে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এবং স্থানীয় উন্নয়নকাজে ব্যাপক হারে পাথর উত্তোলনের ফলে পাহাড়ে পানির উৎস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া লাভের আশায় পাহাড়ে লাগানো সেগুনগাছ প্রচুর পানি শোষণ করে। এতে মাটির গুণাগুণও নষ্টসহ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।

স্থানীয় প্রবীণ সাংবাদিক মো. কামরুজ্জামান জানান, কয়েক বছর আগে উপজেলার রেপাড়পাড়া বাজার পয়েন্ট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দুপ্রুঝিরি মুরুংপাড়ার পাশে একটি পাহাড়ি ঢালুতে জিএফএস পদ্ধতিতে পানি সরবরাহের প্রকল্প বাস্তবায়ন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দেখভাল না থাকায় জিএফএসের তামাক চাষেও ব্যবহৃত হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ মুহিবুল্লাহ জানান, বন-পাহাড়ে লাগানো কিছু গাছপালা অনেক পানি টেনে নিচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড়ধস এবং জনবসতি বাড়ার কারণেও অনেক পানির উৎস ধ্বংস হয়ে গেছে।

বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, ছয় মাসের মধ্যে আলীকদম উপজেলা পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উপজেলা সদরের আশপাশে পানির সংকট কেটে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত