Ajker Patrika

খাদ্যের দামে বিপাকে খামারিরা

মো. নাজিম উদ্দিন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
আপডেট : ১৩ জুন ২০২২, ০৮: ৪৬
খাদ্যের দামে বিপাকে খামারিরা

ঈদুল আজহার মাসখানেক বাকি। এরই মধ্যে বাড়তি প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার খামারিরা। তবে কাঁচা ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতায় বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতিতে পশুপালনে বিপাকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে দানাদার গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই খামারে বিনিয়োগ কমিয়ে ‍দিয়েছেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে সাধারণত দুভাবে পশু প্রস্তুত হয়ে থাকে। এক. খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণ পদ্ধতিতে। দুই. বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতিতে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কেরানীগঞ্জ উপজেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৩০ হাজার। বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতি ছাড়াও কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে এ বছর ইতিমধ্যে উপজেলার ছোট-বড় ৫৬২টি খামারে হৃষ্টপুষ্টকরণ পদ্ধতিতে প্রস্তুত হচ্ছে ৫ হাজার ৮৩৪টি পশু। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৩৬টি দেশি ষাঁড়, ১৬৫টি বলদ, ১৬৯টি গাভি, ৯৪টি মহিষ, ৩৫৯টি ছাগল ও ১১১টি ভেড়া।

জানা যায়, কাঁচা ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতায় বাসাবাড়িতে গৃহস্থালি পদ্ধতিতে পশুপালন করতে সাধারণ মানুষকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া দানাদার গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক খামারিই বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে গোখাদ্যের মূল্য বেশি হলেও উপজেলায় পশু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর হরমনের প্রয়োগ নেই বলে দাবি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় উপজেলার রুহিতপুর ইউনিয়নের খামারি শহিদুল ইসলাম রাজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার খামারে ৪টি মহিষ ও ৭০টি ষাঁড় হৃষ্টপুষ্ট করা হচ্ছে। দানাদার খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমরা বেশি পশু লালনপালন করতে পারিনি। গবাদিপশুর খাদ্যের জোগান দিতে না পেরে অনেক খামারিই বছরের মাঝামাঝি সময়ে খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত বছর লাইভ ওয়েটে (ওজনে) পশু বিক্রি করেছি। তবে এ বছর খরচ বেড়ে যাওয়ায় সে সুযোগ থাকছে না। এ বছর ভালো দাম না পেলে লোকসানে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।’

উপজেলার তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর এলাকার বাসিন্দা সমীর পাল বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার আমল থেকেই গরু-বাছুর লালনপালন করি। সারা বছর গরু লালনপালন করে গাভির দুধ বিক্রি করে সংসার চালাই। পাশাপাশি কোরবানির সময় বিক্রির জন্য বাড়িতেই কয়েকটি ষাঁড় লালনপালন করি। আগে লাভও হতো বেশ, তবে এখন আর আগের মতো তেমন লাভ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে মাঠে গরু চরাতে নিয়ে গেলে কাঁচা ঘাস খেয়েই গরুর পেট ভরে যেত। আর এখন অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ফসলের মাঠ ভরাট করে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করায় গরুর কাঁচা ঘাসেও ঘাটতি পড়েছে। এখন আমাদের মতো গরিব লোকের পক্ষে আর গরু-বাছুর পালন করা সম্ভব নয়। বড় লোকেরা এখন শখ মেটাতে গরু পালন করে।’

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মনছুর আহমেদ বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন কেরানীগঞ্জের খামারিরা। এ এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে খামারে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। কেরানীগঞ্জের কোনো খামারেই গরু মোটাতাজাকরণে ক্ষতিকর স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের ব্যবহার নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর প্রায় ৩০ হাজার কোরবানির পশুর চাহিদা মেটাতে ইতিমধ্যে কেরানীগঞ্জে প্রস্তুত হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার পশু। ঈদুল আজহার সপ্তাহখানেকের মধ্যে এলাকার খামারগুলোতে আরও কিছু গবাদিপশু আসবে। তবে কৃষিজমি কমে যাওয়ায় গরুর কাঁচা ঘাসের দুষ্প্রাপ্যতা সৃষ্টি হয়েছে, পাশাপাশি দানাদার গোখাদ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত