Ajker Patrika

স্থায়ী হোক সম্প্রীতির বন্ধন

সম্পাদকীয়
স্থায়ী হোক সম্প্রীতির বন্ধন

বাঙালির দুর্গাপূজা নানা রূপ ও রূপান্তরের মধ্য দিয়ে কেবল ধর্মের বিষয়ে না থেকে সমাজ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়েছে। সর্বজনীন দুর্গাপূজা যত না ধর্মীয়, তার চেয়ে অনেক বেশিসামাজিক উৎসব। বিংশ শতাব্দীতে শারদোৎসবের সেই সামাজিক চরিত্র ক্রমেই বিকশিত হয়। এর ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতটি স্মরণীয়।

বঙ্কিমচন্দ্রের কল্পনায় ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে দুর্গতিনাশিনী দুর্গা ও দেশজননী একাকার হয়ে গিয়েছিলেন। দেবী যে কেবল রাজন্যবর্গের আরাধ্যা নন, বাবুদের আমোদের উপকরণমাত্র নন, তিনি যে আরও কিছু—দুর্গা দেশজননীরূপে কল্পিত হওয়ায় তা জনসাধারণ ক্রমে বুঝতে পারলেন। দেশজননীরূপে দুর্গা রাজার পূজা ও বাবুদের পূজার মণ্ডপ অতিক্রম করেছিলেন। রাজারা অস্তমিত, বাবুরা বিগত, বিশ শতকে চাকরিজীবী বাঙালিই জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।

সর্বজনীন পূজার তাঁরাই উদ্যোক্তা। কালক্রমে এই পূজা সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই পূজার পুঁজি রাজার ধন নয়, এই পূজার চালিকা শক্তি সাধারণের চাঁদা। চাঁদার জুলুমের নেতিবাচক দিকটি বাদ দিলে এমন পূজা বিরল ছিল না যেখানে পল্লির মানুষজন সাধ্যমাফিক চাঁদা দিতেন। ঠাকুরকে ঘিরে পল্লির সব ধর্মের মানুষ সামাজিকভাবে মিলতেন। এটা সবার অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা বঙ্গ-সংস্কৃতির আনন্দ। দেবী এখানে সংস্কৃতি ও সামাজিকতার মিলন-সহায়ক, পূজামণ্ডপ সর্বজনের।

আমাদের দেশে বহু যুগ ধরে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে দুর্গাপূজা সর্বজনীন উৎসব হিসেবেই পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু গত তিন দশকে আমাদের সমাজে বিরাট একটা রূপান্তর ঘটে গেছে। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের কারণে কখনো কখনো সম্প্রীতির পরিবেশ কিছুটা বিনষ্ট হয়েছে।

বড় মাছ যখন ছোট মাছকে গ্রাস করে, তখন তাকে মাৎস্যন্যায় বলা হয়। সংখ্যাগুরু সমাজের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যদি সংখ্যালঘু সমাজের ধর্মীয় পরিচিতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে মেরে ফেলতে চায়, তাকে তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা বলা যায় না। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ উদারতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসার অনাবিল উন্মুক্ত পরিবেশ; যা আমাদের সাংবিধানিক ম্যান্ডেট।

নানা ভয়-শঙ্কা সত্ত্বেও ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সাধারণ মানুষ এখনো শারদীয় উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন। এই উৎসবকে রক্ষা করা এবং নিরাপদ রাখা দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, সরকার, রাজনৈতিক দল সবারই কর্তব্য।

কেননা দেবী দুর্গাকে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের প্রতীক হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। সব অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভশক্তির উদ্বোধনকেই আরাধনা করা হয়।

অশুভ শক্তিকে বধ করার অঙ্গীকার নিয়ে দেবী দুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন। সেই কাজ সমাধা করে অভয় আর শান্তির বার্তা দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা কৈলাসে ফিরে যাবেন। আমরা রয়ে যাব। হয়তো অশুভশক্তির প্রেতাত্মারাও রয়ে যাবে। আসছে বছর দেবী দুর্গা আবার একই প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভক্তদের কাছে ফিরে আসবে। ভক্তের কল্পনা ও মনোবাসনার জগৎ অস্বীকার করার উপায় নেই। ভক্ত মৃণ্ময়ীর মধ্যে চিন্ময়ীকে কল্পনা করেন।

শারদীয়ার এই শুভলগ্নে আমাদের প্রত্যাশা—বিশ্বময় সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে স্থায়ী হোক সম্প্রীতির বন্ধন। সর্বত্র সম্প্রীতির অমিয় ধারা বহমান থাকুক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

পর্যটন শুরু কাল: সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চালাবেন না মালিকেরা

ময়মনসিংহের নান্দাইল: শত বছরের হাইত উৎসবে মাছশিকারিদের ঢল

সোয়া লাখের বদলে ৭৫০০ শরণার্থীকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান

অনিশ্চয়তায় ঢাকা বিআরটি কোম্পানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ