Ajker Patrika

মিমের শঙ্কাই সত্যি হলো বাঁচতে পারলেন না তিনি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২২, ১২: ২২
Thumbnail image

‘আব্বা তুমি কোথায়, তাড়াতাড়ি আসো, আমাকে বাঁচাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলল।’

স্বামীর নির্যাতন থেকে বাঁচতে গত শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে বাবার কাছে ফোন করে এভাবেই আকুতি জানান মনিরা খাতুন মিম (২৩)। এ সময় মনিরার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে মনিরার স্বামী সজিব মোল্লা শ্বশুরকে বলেন, ‘টাকা না দিলে মেয়ের লাশ পাবেন।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে এভাবেই নিজের একমাত্র মেয়েকে নির্যাতনের অভিযোগ করলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাতলামারী এলাকার দিনমজুর মনিরুল ইসলাম।

মেয়ের শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের নওদাআজমপুর গ্রাম থেকে গতকাল রোববার সকালে খবর আসে মনিরা খাতুন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। স্থানীয়দের দেওয়া সংবাদের ভিত্তিতে মিরপুর থানা-পুলিশ মনিরার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনার পর থেকে মনিরা খাতুনের স্বামী সজিব মোল্লা অনিক (২৮), তাঁর বাবা শরিফ মোল্লা (৪৭) ও মা রাজেনা খাতুন (৪২) পলাতক রয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, মিমের স্বামী সজিব কিছুদিন পরপর যৌতুকের জন্য মিমকে মারধর করত। এ নিয়ে প্রায়ই তাঁদের মধ্যে কলহ লেগে থাকত। গত দুদিন ধরে সজিবের মা রাজেনা খাতুন মিমকে খেতে পর্যন্ত দেননি। শনিবার বিকেলে তাঁরা মিমকে মারধর করেন। পরে স্থানীয়রা তাঁদের বাধা দেন। পরে প্রতিবেশীরা রাতে আবার চিৎকার শুনতে পান। সকালে সবাই জানতে পারেন; মিম রাতে মারা গেছেন।

নিহত মিমের পিতা মনিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত সোয়া ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে তাঁর কাছে মিম কল করেন। ফোন দিয়ে বলেন ‘বাবা ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে এসে নিয়ে যাও, আমাকে বাঁচাও।’ তাৎক্ষণিক জামাই অনিক মনিরার কাছ থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘আমার বিশ হাজার টাকা দরকার। কোথায় পাবেন তা জানি না। তবে আমাকে টাকা দেন, না হলে আপনার মেয়েকে মারতে মারতে মেরে ফেলব।’

তিনি আরও বলেন, সজিব মোল্লা এলাকায় প্রতারণা করে বিভিন্ন মানুষের কাজ করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন। পরে কাজ করতে না পারায় তাঁরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দেন। আর সেই টাকা তাঁর কাছ থেকে নেওয়ার জন্য মেয়ের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচার করতে থাকেন। এই কাজে সজিব মোল্লার মা-বাবাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

নিহত মনিরার ছোট মেয়ের বরাত দিয়ে মনিরুল দাবি করেন, ওঁরা (সজিব মোল্লা ও তাঁর পরিবার) শনিবার রাতে নির্যাতনের পর তাঁর মেয়েকে খুন করে আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।

মনিরুল বলেন, বিয়ের পরে সজিব মোল্লাকে এক লাখ টাকা দিয়েছেন। আবারও টাকা চাইলে তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। সজিব মোল্লা টাকার জন্য মাঝে মধ্যেই তাঁর মেয়েকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতেন।

আমলা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে। পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে নিহত মিমের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি পলাতক রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত