Ajker Patrika

সবার চাওয়া ‘ভোট’ হোক

সাখাওয়াত ফাহাদ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০১
সবার চাওয়া ‘ভোট’ হোক

শেষ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আরও সরগরম। নগরীর রাস্তাঘাট, দোকানপাট, মার্কেট, শহীদ মিনার, গণপরিবহন সবখানেই চলছে ভোটের আলাপ। শেষ মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। আজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচার। ভোটের হিসাব মেলাতে আলোচনায় ব্যস্ত ভোটাররাও। কারণ, বিগত সময়ে উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও শহরজুড়ে সমস্যার অভাব নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তার পাশে ময়লার স্তূপ, ধুলো, তীব্র যানজট, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রবের পাশাপাশি ট্যাক্স বৃদ্ধির কারণে বিরক্ত নগরবাসী।

নগরের খানপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ৪০ বছর ধরে চায়ের দোকান করেন আবদুল কাদির। তাঁর দোকানের সামনে একসময় খাল ছিল। কিন্তু সেই খাল ভরাট করে দোকানপাট করা হয়েছে। দোকানের সামনের রাস্তার অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। রাস্তাঘাটের কিছুটা উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই অপ্রতুল। কাদির মনে করেন, বেকায়দায় পড়বেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। তিনি বলেন, ‘একটা এলাকায় একই দলের ৫-৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। ভোট তো এমনিতে ভাগ হইয়া যাইব। তবে হাতি-নৌকায় ভালো প্রতিযোগিতা হইব।’

শুরু থেকেই শহরজুড়ে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করলেও সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নির্বাচন ঘিরে জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে ভোটের হিসাবনিকাশ। মনের কথা মনে রেখে ভোটাররা মুখে বলছেন ভিন্ন কথা। হঠাৎ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যাওয়া, ইভিএমের মাধ্যমে নতুন পদ্ধতিতে ভোট, স্থানীয় সন্ত্রাস, বিরোধী নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশের অভিযানে কিছুটা আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।

তবে এসবের মধ্যেও এবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী চাষাঢ়া এলাকার শরীফ সুপার মার্কেটের জুতা ব্যবসায়ী মো. নান্নু মিয়া। তিনি বলেন, ‘আইভি ম্যাডামও ভালো মানুষ, তৈমুর সাহেবকেও খারাপ বলা যাবে না। নারায়ণগঞ্জের অবস্থা এখন আর আগের মতো নাই। আশা করা যায় ভোট সুষ্ঠু হবে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা আসবে বলে মনে হচ্ছে না।’

তবে বিরোধী প্রার্থীকে হেনস্তা করে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ড্রেজার কলোনিতে নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি বলেন, ‘আমার এজেন্ট ও নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করছে। গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করছে। এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার নির্বাচনের সমন্বয়ককে ২০১৩ সালের মামলায় আটক করা হয়েছে।’

তবে এতে নেতা-কর্মীরা ভীত নয় বরং আরও বেশি একতাবদ্ধ জানিয়ে তৈমুর আলম বলেন, পুলিশ-প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। আমাদের যে হয়রানি করা হচ্ছে তা বন্ধ করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুরোধ করেছি।’ এ সময় তিনি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান।

গতকাল শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের দেওভোগ এলাকায় প্রচারের সময় নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমি চাই, আমার ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে যেতে পারে। কোনো সন্ত্রাসী যেন ঝামেলা পাকাতে না পারে।’ প্রশাসনকে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

তৈমুরের অভিযোগ অস্বীকার করে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জায়েদুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তাই নির্বাচনের আগে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, সাজাপ্রাপ্তদের গ্রেপ্তার, অন্য আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসাসহ নানাবিধ কার্যক্রম চলছে। কাউকে উদ্দেশ্য করে গ্রেপ্তার বা হেনস্তা করা হচ্ছে না।’

নির্বাচন ঘিরে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রত্যেকটা কেন্দ্রে ন্যূনতম ২৫ জন পুলিশ সদস্য থাকবে। আনসার, র‍্যাব থাকবে ৷ প্রত্যেক ওয়ার্ডে ৩টি মোবাইল টিম, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। ভোট এবং ভোটারদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন।’

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ এবং বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নারায়ণগঞ্জ জেলার আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সব প্রার্থীর জন্যই ভালো। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো গোলযোগ হয়নি। সবাই নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা করছে। এতে মনে হচ্ছে ভোটাররাও নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা, এবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন সেলিনা হায়াৎ আইভী।’

স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার এবং এর যথার্থতা প্রমাণ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য ও অবস্থান, নির্বাচন কমিশন ও প্রার্থীদের আশ্বাস, জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধী মতের অবস্থান শক্তিশালী করা এবং জনগণের মনের ক্ষোভ প্রশমিত করতে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই নানাবিধ প্রতিকূলতার মধ্যেও সবার আগে সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে সমস্যা তার সমাধান চান তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত