Ajker Patrika

সব অনিয়মই যেন স্পিডবোটে

সাগর হোসেন তামিম, মাদারীপুর
আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৮: ৫৯
সব অনিয়মই যেন স্পিডবোটে

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলায় যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাংলাবাজার-মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ফেরিঘাট। প্রতিদিন এ নৌপথে হাজার হাজার যাত্রী ঢাকা ও ঢাকা থেকে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে যাতায়াত করেন।

বেশির ভাগ যাত্রী দ্রুত পদ্মা পার হওয়ার জন্য স্পিডবোটে ওঠেন। কিন্তু যাত্রী পারাপারে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাই করেন না স্পিডবোটের চালকেরা। অতিরিক্ত যাত্রী বহন, চালকের খামখেয়ালিপনা, অদক্ষ চালক দিয়ে স্পিডবোট চালানো হয়। এতে প্রায় ঘটে দুর্ঘটনা। এমনকি অধিকাংশ স্পিডবোটে যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরতে বলা হয় না।

জানা গেছে, দ্রুত সময়ে পদ্মা পার হওয়া যায় বলে সবার কাছে স্পিডবোট বেশ জনপ্রিয়। তবে যাত্রীদের অভিযোগ রয়েছে, এ নৌপথে চলাচলকারী স্পিডবোটগুলোতে যাত্রীসেবা বলতে কিছুই নেই। রয়েছে যাত্রী হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ।

নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লঞ্চে নিয়মনীতি মানা হলেও বিপরীত ঘটনা দেখা যায় স্পিডবোটে। বাড়তি ভাড়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, কম বয়সী চালকের দৌরাত্ম্য, বৈরী আবহাওয়ার মাঝে ও রাতের অন্ধকারে চলাচল এখনো। ফলে স্পিডবোট দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। বর্তমানে নৌপথে উভয় ঘাটে শতাধিক স্পিডবোট রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গত বছরের ৫ মে স্পিডবোটের সঙ্গে বাল্কহেডের মুখোমুখি সংঘর্ষে ৩৩ যাত্রী মারা যান। এতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দেওয়া হয় চালকদের প্রশিক্ষণ। এতে উত্তীর্ণ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ স্পিডবোটের তালিকা করা হয়। সেই তালিকা অনুযায়ী বাংলাবাজার থেকে শিমুলিয়া ঘাটে ৫৭টি এবং বাংলাবাজার থেকে মাঝিরকান্দি ঘাট মিলয়ে মোট এক শ স্পিডবোট চলাচল করা কথা। তবে অধিকাংশ বোটে লাইফ জ্যাকেট থাকলেও তা নোংরা আর ব্যবহারের অনুপযোগী।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ জুন শিমুলিয়া থেকে কাঁঠালবাড়ি ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া একটি স্পিডবোট ঢেউয়ের আঘাতে ২০ যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। সে সময় বৈরী আবহাওয়ার কারণে পদ্মা উত্তাল ছিল। দুর্ঘটনাটি শিমুলিয়া ঘাটের কাছাকাছি হওয়ায় তৎক্ষণাৎ অন্য বোটে ডুবে যাওয়া যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচ যাত্রী আহত হন। এতে মালামাল হারিয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৫ জুলাই ফের দুর্ঘটনার শিকার হয় আরেকটি স্পিডবোট। ফেরির সঙ্গে ধাক্কা লেগে স্পিডবোটটি উল্টে যায়। এতে সুফিয়া খাতুন নামে এক নারী ইউপি সদস্যের মৃত্যু হয়।

সরেজমিন শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণত ২০ জন যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন স্পিডবোটে নেওয়া হচ্ছে ২৩-২৫ জন। ১৪ জনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বোটে নেওয়া হচ্ছে ১৭-১৯ জন যাত্রী। ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক যাত্রী বহনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মুনাফা মূল কারণ বলে জানা যায়।

স্পিডবোটচালক গফুর মিয়া বলেন, ‘আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যে কারণে আমরা পদ্মায় স্পিডবোট চালাতে পারছি। অনেক সময় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরতে বললেও তাঁরা তা মানেন না। এতে আমাদের কিছু করার নেই।’

উজ্জ্বল হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘কোনো নিয়ন-নীতি নেই ঘাটে। বাংলাবাজার ঘাটে কিছুটা নিয়ম মানলেও শিমুলিয়ায় তার বালাই নেই। প্রতিদিন তাঁরা ইচ্ছেমাফিক ভাড়া কম-বেশি করেন। লোকজন বাড়লেই ভাড়া দ্বিগুণ করেন। আর আমরাও বিপদে পড়ি।’

বাংলাবাজার ঘাটের স্পিডবোট সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হাওলাদার বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি যাত্রীদের ভালো সেবা দিতে। কিন্তু অনেক সময় যাত্রীরা তাড়াহুড়া করেন। এতে তাঁরা লাইফ জ্যাকেট পরেন না। আর আমরা কোনো সময়ই ভাড়া বাড়াই না। তবে শিমুলিয়া ঘাটের বিষয় জানি না। আর প্রতিটি স্পিডবোটের নিবন্ধন রয়েছে। চালকরাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।’

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের পুলিশ পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, ‘যাত্রীদের সব ধরনের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। অনেক সময় যাত্রী বেশি হলে সি-বোটে ভাড়া বেশি নেয় বলে শুনেছি। যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক সি-বোটকে জরিমানাও করা হয়। আইনের মধ্য থেকেই আমাদের চলতে হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২

ইউএনওর সামনেই ৪ জামায়াত নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতারা

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত