Ajker Patrika

স্বপ্নদ্রষ্টা অগ্রণীর ‘দুয়ার’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

এজেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে অগ্রণী ব্যাংকের ‘দুয়ার’। বর্তমানে মাস্টার এজেন্ট-আউটলেট মডেল অনুসারে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্যাংকটি। এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে মাস্টার এজেন্ট এবং সাপোর্ট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে ফিনটেক প্রতিষ্ঠান ‘দুয়ার’-এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যক্রম।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং গাইডলাইন প্রকাশ করলে ওই বছরের ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং পাইলট প্রজেক্ট শুরু করে অগ্রণী ব্যাংক। নাম দেওয়া হয় ‘অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং’। ব্যাংকিং সেবা সহজ, সুলভ ও নিরাপদে গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের মে মাসে বাণিজ্যিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং লাইভ কার্যক্রম শুরু করে ব্যাংকটি।

অন্যান্য ব্যাংকের মতো খুব বেশি প্রচারণায় না এসেও কিছুটা নীরবেই দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং। বর্তমানে প্রায় ২৭০টি উপজেলায় ৪৬০টি ইউনিয়নে ৫১০টি আউটলেট নিয়ে গ্রাহকসেবা দিচ্ছে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং। ৯৩ শতাংশ গ্রাম এলাকায় স্থাপিত হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। নিয়মিত হাট, বাজার ও জনবহুল এলাকার পাশাপাশি দুর্গম বিল, হাওর, পাহাড় ও চরাঞ্চলেও ব্যাংকের আউটলেট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে যাচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক।

নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নেও ব্যাংকটি ভূমিকা পালন করছে, যেখানে প্রায় ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী আউটলেটসমূহে মোট কর্মীর ৪০ শতাংশের অধিক নারী টেলার, ম্যানেজার ও মাঠকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও সংখ্যাটি কম নয়, বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ ৬৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে ব্যাংকটির, যার মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশই নারী।

রেমিট্যান্সপ্রবণ এলাকায় আউটলেট স্থাপন করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসতেও কাজ করছে দুয়ার ব্যাংকিং। স্কুল ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা এখন প্রায় ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া নিয়মিত স্কুলভিত্তিক সামাজিক কর্মসূচি ও আলোচনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সম্পর্কে ধারণা ও সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ইউটিলিটি বিল প্রদানের সেবাও পাচ্ছে গ্রাহক। তথ্যমতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে বিকল্প এ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে। বর্তমানে ব্যাংকটির আউটলেট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার গ্রাহক নিয়মিত ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি আউটলেট থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৬০০ জন গ্রাহককে ঋণ বিতরণ করেছে দুয়ার ব্যাংকিং। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজারের অধিক গ্রাহক নিয়মিত সরকারি ভাতা গ্রহণ করছেন, যা তাঁদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

অন্যদিকে অগ্রণী ব্যাংকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সরকারি সোনালী ব্যাংকও বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং করছে। ২০২০ সালে দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির এজেন্ট সংখ্যা ৪৭টি, যার মধ্যে ৪৬টি গ্রামীণ আউটলেট। অন্যদিকে গ্রাহক সংখ্যা ২ হাজার ৪০০টি এবং গ্রাহক আমানত ১১ কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী, এখনো আউটলেটসমূহ থেকে কোনো রেমিট্যান্স ও ঋণ বিতরণ করা হয়নি। আশা করা যায়, অতি শিগগির ব্যাংকটি যথোপযোগী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে সফলতা অর্জনে সক্ষম হবে, একই সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিং বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত