Ajker Patrika

৩০ শহীদের স্মরণে তিন মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিফলক

মির্জাপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মার্চ ২০২২, ১২: ১১
Thumbnail image

মহান মুক্তিযুদ্ধে মির্জাপুরে শহীদ হওয়া ৩০ বীর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মাণের কাজ চলছে। এই উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিজ অর্থায়নে তাঁরা এই নির্মাণকাজ করছেন বলে জানা গেছে।

তাঁরা হলেন কালীহাতি উপজেলার আলাউদ্দিন সিদ্দিকী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও রুহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা পবিত্র কুমার সরকার, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ ও ভাতগ্রাম গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মহেন্দ্র কুমার সিকদার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার সাবেক প্রকৌশলী ও সিংজুরী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার সরকার।

জানা গেছে, স্মৃতিফলকটির উচ্চতা ১৮ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। এটির নির্মাণ ব্যয় এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক ছাড়িয়েছে। যার পুরোটাই জোগান দিচ্ছেন ওই তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

এ বিষয়ে পবিত্র কুমার সরকার জানান, স্মৃতিফলকে শহীদের নাম-ঠিকানা লেখা থাকবে; যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এসব বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে জানতে পারেন। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের সকালে স্থানীয়ভাবে স্মৃতিফলকটি উন্মোচন করা হবে। এ ছাড়া ১৮ মে যে দিন সেই গণহত্যা চালানো হয়, সেদিন বড় একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মহেন্দ্র কুমার সিকদার বলেন, সেদিনের সেই শহীদদের বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে তাঁরা তিনজনে মিলে এই উদ্যোগ নিয়েছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী সন্তোষ কুমার সরকার বলেন, ৩০ শহীদের কারও নাম সরকারিভাবে কোনো জায়গায় লেখা নেই। তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো স্বীকৃতিও পাননি। তাঁদের দাবি সরকার যেন সেসব শহীদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলে শহীদ মিনার নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন বিষয়টি তাঁর জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যাঁরা শহীদ হয়েছেন, সেসব পরিবারের সদস্যরা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আবেদন করে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে পারেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, এলাকার তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শহীদ স্মরণে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু বলেন, ‘তিনজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিলে শহীদদের স্মরণে নিজ অর্থায়নে স্মৃতিফলক নির্মাণ খুবই ভালো উদ্যোগ। শহীদদের স্মরণ করে তাঁদের এই উদ্যোগ চির অম্লান হয়ে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাতগ্রাম, রুহিতপুর, মহদীনগর, চরপাড়া, পাঠানপাড়া, ত্রিমোহন, সিংজুরী গ্রামের ৩০ জন গ্রামবাসীকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাঁদের দোসররা ধরে নিয়ে হত্যা করে।

তাঁরা হলেন উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের জগবন্ধু রায়, একই গ্রামের দামোদর দাস, কিশোর রায়ের ছেলে গৌরাঙ্গ ও তাঁর ভাই সুখরঞ্জন রায়। ভাতগ্রাম গ্রামের ভজন মজুমদার ও আশুতোষ রায়। একই গ্রামের কেদার নাথ খাঁ, উদ্ধব ও তাঁর ভাই রাখাল তরফদার, কালিপদ, হরে কৃষ্ণ সিং, তাঁর ভাই মদন মোহন সিং, কালিপদ সরকার, সুনীল সূত্র ধর, মাধব চন্দ্র খাঁ, চিন্তাহরণ, পূর্ণ শিকদার, জ্ঞানেন্দ্র সরকার, পবিত্র খাঁ, সন্তোষ সরকার, সিংজুরী গ্রামের অক্ষয় সরকার, মহদীনগর গ্রামের দ্বীপেন চক্রবর্তী। একই গ্রামের পাগলা মন্ডল, মাখন সরকার, চরপাড়া গ্রামের নীরদ সরকার। একই গ্রামের নিমাই মন্ডল, রমন মন্ডলের ছেলে রাধা চরণ মন্ডল, পাঠানপাড়া গ্রামের পবন মন্ডল, রুহিতপুর গ্রামের হরেন্দ্র ভৌমিক, ত্রিমোহন গ্রামের হরিদাস চক্রবর্তী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত