Ajker Patrika

পাল্টে গেছে পটুয়াখালীর চিত্র

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ২১: ৩৭
পাল্টে গেছে পটুয়াখালীর চিত্র

পটুয়াখালী জেলার নাম শুনলেই একসময় ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের কথা মনে পড়ত। তবে গত এক দশকে চারটি উন্নয়নকাজে পাল্টে গেছে জেলার চিত্র।

এসব উন্নয়নকাজের একটি হলো পটুয়াখালীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর নির্মিত সেতু। এ ছাড়া পটুয়াখালীর দুর্গম রাঙ্গাবালী উপজেলা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। কাজ চলছে রামনাবাদ নদীর তীরে পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা সব প্রকল্পের।

একসময় ঢাকা থেকে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটা যেতে বেশ কিছু ফেরি পার হতে হতো। তবে সেসব এখন অতীত। সর্বশেষ পায়রা সেতু নির্মাণ করায় এখন ঢাকা থেকে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে পদ্মা নদী ছাড়া আর কোনো ফেরি পার হতে হয় না। এত দিন লেবুখালী ফেরিঘাট ছিল একটি বিড়ম্বনার স্থান। তবে সেতু নির্মাণ করায় এ এলাকা এখন সমৃদ্ধ জনপদ এবং ভ্রমণের স্থানে পরিণত হয়েছে।

পায়রা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে ১ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এর নির্মাণকাজ শেষ করেছে।

এদিকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে দীর্ঘ বছর বিদ্যুৎ না থাকা পটুয়াখালীর দুর্গম উপজেলা রাঙ্গাবালী। সাগর তীরবর্তী এবং নদীবেষ্টিত হওয়ায় ওই উপজেলা দীর্ঘদিন অন্ধকারে ছিল। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয় এ উপজেলায়। উপজেলার ১৯ হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার শাহ্ মো. রাজ্জাকুর রহমান।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে প্রায় এক হাজার একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সর্ব বৃহৎ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি সি চিন পিং এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের প্রথম অংশে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে আরও ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান; যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে জানান প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এর আগে ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারের জন্য নির্মিত আবাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সে সময় প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ১৩০ পরিবারের মাঝে বাড়ির চাবি হস্তান্তর করেন।

পায়রা সমুদ্রবন্দরের কারণে কৃষি ও মৎস্যনির্ভর কলাপাড়া উপজেলা বর্তমানে বাণিজ্যিক উপজেলায় পরিণত হয়েছে। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এ বন্দরের ফলক উন্মোচন করেন। আর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরে আনুষ্ঠানিক পণ্য খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে একটি চীনা জাহাজ প্রথম পায়রা বন্দরে নোঙর করে।

বর্তমানে রামনাবাদ চ্যানেলে প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা সমুদ্রবন্দরের জেটিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। আর বন্দরকে কেন্দ্র করে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কাজ করছেন অনেকেই।

পটুয়াখালী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘দেশের অনেক ব্যবসায়ী এ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাচ্ছেন। অনেকেই জমি কিনে তা ডেভেলপ করছেন। পাশাপাশি পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরে তৈরি হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। সব মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে এই জেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অনেক জেলাকে ছাড়িয়ে যাবে।’

পটুয়াখালীর পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতের ঘোষণা দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। পটুয়াখালীর মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন।’

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পটুয়াখালীর উন্নয়ন সবার চোখে পড়ার মতো। পটুয়াখালী হবে উন্নয়নের রোল মডেল। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক জেলা হবে পটুয়াখালী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত