Ajker Patrika

ভোটের প্রচারকে ছাপিয়ে আলোচনায় ফোনালাপ ফাঁস

তানিম আহমেদ, সাবিত আল হাসান ও শরিফুল ইসলাম তনয়, নারায়ণগঞ্জ
আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ৫৩
ভোটের প্রচারকে ছাপিয়ে আলোচনায় ফোনালাপ ফাঁস

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে প্রচার চালানোর দাবি করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। গত শনিবার এমন একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি গত দুই দিন মহানগরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল। তবে, অডিও ফাঁসের ঘটনাকে শাপেবর হিসেবে দেখছেন মেয়র প্রার্থী আইভীর অনুসারীরা।

গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া সেই অডিওতে শোনা যায়, খোকন সাহা সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর কাছ থেকে আইভীর নির্বাচনী কাজে খরচের জন্য ৫ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। সেখানে খোকন সাহাকে বলতে শোনা যায়, ‘সবকিছু ঠিক আছে। আমার একটু টাকাপয়সা লাগব। তোমায় কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলে দিই। তোমার পক্ষে কেউ নাই। তোমার নামের ওপর অনেকেই অনেক কথা কয়। আমি তো দলের কাজ করতেছি। আইভীকে পাস করানোর জন্য কাজ করতেছি। কালকে ৫ লাখ টাকা পাঠায় দিবা।’

ফোনালাপের বিষয়ে গতকাল রোববার খোকন সাহা আজকের পত্রিকার কাছে দাবি করেন, ‘নান্নু আমার মক্কেল। আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সে হয়তো অস্বীকার করে। তার পক্ষে-বিপক্ষে মামলা আমি করি। আমি তাঁর কাছে প্রচুর টাকা পাব। নির্বাচন উপলক্ষে আমার টাকার দরকার ছিল, তাই আমি বলেছি। তাও ঘটনা ১০-১২ দিন আগে। সে আমার মক্কেল ও ছোট ভাই। আমি তার কাছে চাইতেই পারি টাকা। মামলার ডকুমেন্ট আছে আমার কাছে। এই ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁস করা অনৈতিক মনে করি। এই কাজ করে আমাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে।’

তবে খোকন সাহার দাবি পুরোপুরি অস্বীকার করেন রফিকুল ইসলাম নান্নু। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘ওনার কাছে কখনোই মক্কেল ছিলাম না আমি। উনি নির্বাচন করবেন, তাই চেয়েছেন। ওনার সঙ্গে আমার কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। ছোট ভাই-বড় ভাই এমন কোনো যোগাযোগও নেই। উনি অনৈতিকভাবেই টাকা চেয়েছেন আমার কাছে।’

বিষয়টি নিয়ে গতকাল নারায়ণগঞ্জের আইভীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের প্রায় সবারই একবাক্যে বলেছেন, এই অডিও ফাঁস নারায়ণগঞ্জের ভোটের রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ খোকন সাহা শুরু থেকেই আইভী বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

তাঁরা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সাংসদ শামীম ওসমানের অন্যতম আস্থাভাজন খোকন। গত দেড় বছর ধরে প্রকাশ্যই বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আইভীর সমালোচনা করেছেন তিনি। সেই খোকন সাহা এখন আইভীর পক্ষে প্রচারের জন্য আরেক দলীয় কর্মীর কাছে টাকা চাচ্ছেন এটাতো আইভীর পক্ষেই গেল। এতে ক্ষতি হলো তাঁরই। চাঁদাবাজ হিসেবেই চিহ্নিত হলেন এবার।

সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস এলাকায় কথা হয় পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আবদুল মতিন প্রধানের সঙ্গে। তিনি বলেন, অডিও ফাঁসের ঘটনায় লাভবান হবেন আইভী।

মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কোনো দিন কারও কাছে টাকা চাইনি। আর তিনি আমার হয়ে টাকা চাইবেন, এটা বরদাশত করব না। তাঁকে এমন কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি যে টাকা চাইতে হবে। এ কাজ করে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন তিনি। দল নিশ্চয়ই তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

এদিকে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি করেছে আওয়ামী লীগ। এতে প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা থেকে নেতারা নারায়ণগঞ্জে আসছেন। তাঁরা নেতা কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের কাছে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন।

নাসিক নির্বাচনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রচারণায় কাজ করতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকে সমন্বয়ক করে একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধান করে ওয়ার্ড ভিত্তিক আলাদা আলাদা কমিটি করেছে। দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতারা প্রায় প্রতিদিনই এসব এলাকায় নেতা কর্মীদের নিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। একই সঙ্গে নেতারা আওয়ামী লীগের কোন্দলের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছেন।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পর্যবেক্ষণ হলো, নারায়ণগঞ্জে চুনকা ও ওসমান পরিবারের দ্বন্দ্ব পুরোনো। আলী আহাম্মদ চুনকার মেয়ে আইভীর সঙ্গে খান সাহেব এম ওসমান আলীর নাতির শামীম ওসমানের বিরোধ রয়েছে। তাঁরা দুজনের বিভিন্ন সময়ে পরস্পরের বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। গত নির্বাচনের সময়ও বিষয়টি সামনে এসেছিল। কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে অনেকটাই বাধ্য হয়ে আইভীর প্রতি নিজের সমর্থনের কথা জানান শামীম ওসমান।

এবারও দুজনের পুরোনোর দ্বন্দ্বের কথা সামনে এসেছে বলে জানান সমন্বয়ের দায়িত্ব থাকা কেন্দ্রীয় আরেক নেতা। তাঁর মতে, আর গত দেড় বছর ধরেই নারায়ণগঞ্জের তাঁর অনুসারীরা প্রকাশ্য আইভীর সমালোচনাও করেছিলেন। সেটা মনোনয়ন পাওয়ার দিন পর্যন্ত বলবৎ ছিল। নারায়ণগঞ্জ মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কমিটিতে শামীম ওসমানের অনুসারীদের প্রাধান্য বেশি। তাই প্রচারে তাদের এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভোটের প্রচার তো মাত্র শুরু হলো। কয়েক দিন গেলে পুরো চিত্রটা বুঝতে পারব। তখন ব্যবস্থা নেব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত