Ajker Patrika

বোরোতে ব্লাস্ট রোগের হানা

রকিব হাসান নয়ন, মেলান্দহ
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৫৯
বোরোতে ব্লাস্ট রোগের হানা

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় বোরো ধানের খেতে ব্লাস্ট রোগ হানা দিয়েছে। ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধানগাছ ভালো থাকলেও শিষ মরে যাচ্ছে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে, কৃষকদের আগে থেকেই কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলা হয়েছিল। যারা কীটনাশক প্রয়োগ করেননি, তাঁদের জমিতে এই ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ধানের পোকা দমনে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের বিভিন্ন বোরো ধানখেত ঘুরে দেখা গেছে, দূর থেকে খেত দেখলে মনে হয় ধান পেকে কাটার সময় হয়েছে। কিন্তু তা নয়, খেতে ছত্রাকজনিত ও ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে বোরো ধানের শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় পোকা পাতা ছিদ্র করছে। এ ছাড়া ধানের পাতা শুকিয়ে বাদামি রং ধারণ করছে।

মেলান্দহ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধান চাষ হয়েছে ২০ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ কম হয়েছে।

স্থানীয় কৃষকেরা বলেছেন, গত কয়েক দিন বোরো ধানের খেতে শিষ বের হওয়া শুরু হয়েছে। শিষ বের হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই শিষের গোড়ায় কালো হয়ে যায়। তারপর থেকেই আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ শিষ সাদা হয়ে যাচ্ছে। ধানগাছ ভালো থাকলেও শিষ মরে যাচ্ছে। আদ্রা ও নাংলা ইউনিয়নেই প্রায় ৩০০ একর জমিতে এমন রোগ দেখা দিয়েছে।

আদ্রা ইউনিয়নের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ভালো ফলনের আশায় ব্রি ২৮ জাতের ধান লাগিয়েছি। গত কয়েক দিন শিষ বের হওয়া শুরু হয়েছে। তাঁর দুই-এক দিন পর থেকেই ধানের শিষ সাদা রঙের হয়ে যাচ্ছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় ধান পেকে গেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখি শিষ সাদা হয়ে মারা গেছে।’

আদ্রা গ্রামের শিক্ষক শেখ ফরিদ বলেন, ‘চলতি বছর বোরো মৌসুমে আমি তিন বিঘা জমিতে ব্রি-ধান ২৮ আবাদ করেছি। আমি ভেবেছিলাম বোরো ধানের ভালো ফলন হবে এবং কিছুটা লাভবান হব। কিন্তু ধানে যেভাবে ব্লাস্ট রোগে আক্রমণ করেছে এখন এক বিঘা জমিতে এক মণ ধানও হবে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ইতিমধ্যে সব জমির ধানের শিষ সাদা হয়ে গেছে। এসব খেতে বিভিন্ন কোম্পানির দামি দামি কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হয়নি।

বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম বলেন, ‘তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমি বোরো ধান চাষ করেছি। এ জমিতে ধান চাষ করতে গিয়ে অন্তত ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে এবারে ৬ হাজার টাকারও বেশি কীটনাশক প্রয়োগ করেছি। তারপরও ধান বাস্ট রোগে আক্রান্ত।’

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, কীটনাশকের দোকানদারদের পরামর্শে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক তিন-চারবার প্রয়োগ করেও ধানের এ রোগ প্রতিরোধ হয়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল বলেন, ‘আমরা কৃষকদের আগে থেকেই বলেছি কীটনাশক প্রয়োগ করতে। যারা কীটনাশক প্রয়োগ করেনি, তাদের জমিতে এ ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ধানের পোকা দমনে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব সময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত