Ajker Patrika

মিরপুর টেস্টে যে বিরল দৃশ্য দেখা গেল

বোরহান জাবেদ, ঢাকা
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৩, ১২: ০১
মিরপুর টেস্টে যে বিরল দৃশ্য দেখা গেল

চার স্লিপ, এক গালি, পয়েন্ট, শর্ট লেগ, শর্ট কাভার রেখে বোলিং করছেন বাংলাদেশের এক পেসার। এ ছবি বাংলাদেশের যেকোনো সমর্থকের কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠার কথা। দৃশ্যটার অবতারণা যদি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম হয়, নিশ্চয়ই ভ্রু কুঁচকে উঠবে! মিরপুরে এমন দৃশ্য কি কখনো কল্পনাতেও দেখা গেছে? উত্তর ‘না’ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

না দেখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, এটা খুব একটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। মিরপুরের উইকেটের সঙ্গে রহস্যের একটা যোগসূত্র আছে। এটা কখন বোলার আর কখন ব্যাটারকে বন্ধু বানাবে, ক্রিকেটাররাও দ্বিধায় থাকেন। এত কিছুর মধ্যেও পেসাররা এখানে বরাবরই ‘সৎসন্তান’! বাংলাদেশের পেসার হলে তো কথাই নেই। তবে সময় বদলেছে। ইবাদত হোসেন-তাসকিন আহমেদরা বদলে দিয়েছেন। তাঁদের জন্য দেশের মাঠে বাংলাদেশ এখন সবুজাভ উইকেটে খেলার সাহস দেখায় বাংলাদেশ। ব্যাটারকে ছাতার মতো ঘিরে ধরা ফিল্ডিং সাজায়।

এমন আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে তাসকিন-ইবাদত-শরীফুল পেসারত্রয়ী গতকাল আফগানিস্তান ব্যাটারদের চোখে সর্ষে ফুল দেখিয়েছেন। গতকাল সকালেই বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দেন দুই আফগান পেসার নিজাত মাসুদ ও ইয়ামিন আহমেদজাই। ১৪৬ রানে আফগানদের দুমড়েমুচড়ে দেওয়ার পথে ২ পেসার নিয়েছেন ৬ উইকেট। লম্বা বিরতিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ফিরে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপার তো ছিলই, সঙ্গে ভাগ্যের ছোঁয়া না পাওয়ায় শুধু তাসকিনই উইকেটশূন্য থেকেছেন। বাকি ৪ উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন দুই স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
তবে ৪ উইকেট নিয়ে দিনের সবচেয়ে সফল বোলার ইবাদত। দিনের খেলা শেষে তিনি নিজেই শুনিয়েছেন মিরপুর উইকেটে পেসারদের সাফল্যের গল্প, ‘আমার দেখা এই প্রথম এ ধরনের উইকেট (দেশে) আমরা পেয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, তিনজন ফাস্ট বোলার এ রকম উইকেটে খেলল। এটা আমাদের অনেক বড় সৌভাগ্য।’ আফগানদের বিপক্ষে যে সাহস দেখানো গেছে, এটা বাকি দলের বিপক্ষে দেখাতে পারবে তো বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট? আশাবাদী হতে দোষ নেই। ইবাদতও হচ্ছেন। তাঁর আশা, ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তাঁদের ওপর টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসা না থাকার কারণ নেই।

ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যেমন ইবাদতদের চ্যালেঞ্জ, সাহস তৈরি হওয়ার জায়গাটাও তাঁরাই তৈরি করেছেন। তিন বছরে প্রতিপক্ষকে বাংলাদেশ দলকে সমীহ করতে বাধ্য করছেন। দেশে-বিদেশে সাফল্যে এনে দিচ্ছেন। গত বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে ইবাদতের সেই স্বপ্নের স্পেল কিংবা সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডেতে তাসকিনের ৫ উইকেট—পেস বোলিংয়ে নতুন দিনের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়যাত্রার সর্বশেষ সংযোজন গতকাল আফগানদের বিপক্ষে ইবাদতদের বোলিং।

টেস্টে জয়ের প্রধান শর্ত, তুলে নিতে হবে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট। আর ২০ উইকেট তুলে নিতে থাকতে হবে দুর্দান্ত এক পেস বোলিং বিভাগ। বাংলাদেশ দলের পেস আক্রমণ যত ভালো করতে থাকবে, ততই দেখা যাবে টেস্ট জয়ের স্বপ্ন। কয়েক বছরে লাল বলে বাংলাদেশ বোলিং লাইনআপের নেতা ইবাদত তাই বলছেন, ‘তিন বছর ধরে আমাদের পেস বিভাগ বেশ ভালো উন্নতি করছে। বলছি না আমরা এখনই ভালো হয়ে গেছি। কিন্তু শেষ তিন বছর ধরে আমরা চেষ্টা করেছি, আমাদের উন্নতির ধারা ওপরের দিকে নিয়ে যাওয়ার। বিশ্ব ক্রিকেটে এখন ফাস্ট বোলিং দিয়ে দাপট দেখানোর যে মানসিকতা, ওটা আমরাও করার চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত