Ajker Patrika

অল্প খরচে বেশি লাভ সরিষাখেতে মধু চাষ

ফেনী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৮
Thumbnail image

ফেনীতে সরিষাখেতে বসানো হয়েছে মৌ-বাক্স। কিছুদিন পরপর খেত থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে মধু। খেতে মৌমাছির আনাগোনায় সরিষার ফলনও ভালো হয়েছে। সদর উপজেলার সরিষাখেতে মধু উৎপাদন করে সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। এতে তাঁরা আর্থিকভাবেও লাভবান হয়েছেন। ফলে এলাকার কৃষকের মধ্যে সরিষা ও মধু চাষে আগ্রহ বাড়ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর সরিষার চাষ বেড়েছে। গত বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবার ৮৭০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে সরিষার। অল্প পরিশ্রম, কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সরিষা চাষে দিনদিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসুমে কৃষকদের সরিষার পাশাপাশি মধু চাষে উদ্বুদ্ধ করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে একজন মৌ-চাষি মেজবাহ উদ্দিন শামীমকে প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার টাকার মৌ-চাষের সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। যেখানে রয়েছে চারটি দোতলা মৌ-বাক্স, মধু সংগ্রহের মেশিন, ড্রাম প্রভৃতি।

সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের শিবপুর এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা ও মো. ইউছুপ এবার চার একর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। তাঁদের সরিষাখেতের পাশে মেজবাহ উদ্দিন শামীম উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মধু সংগ্রহে স্থাপন করেছেন মৌ-বাক্স। তিনি ইতিমধ্যে মধু আহরণ শুরু করেছেন। এবার সরিষার খেতে তিনি সাতটি বাক্স বসিয়েছেন। প্রতি বাক্সে খরচ মিটিয়ে তাঁর এক মাসে ১১ হাজার টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি।

মেজবাহ উদ্দিন শামীম বলেন, তিনি প্রতি বছর সরিষা, সূর্যমুখী, গ্রীষ্ম ও শীতকালীন ফসল, লিচু ও ধনিয়া মাঠে মধু সংগ্রহ করেন। তিনি কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও পরামর্শ পেয়ে আসছেন। প্রথম পর্যায়ে ৫০টি বাক্স নিয়ে মৌ-চাষ শুরু করেছিলেন। এখন মৌমাছির বংশ বৃদ্ধি করে ১০৭টি মৌ-বাক্স হয়েছে। তিনি প্রতি সাত দিন পর চার কেজি মধু আহরণ করতে পারেন।

ফাজিলপুর ইউনিয়নের সরিষাচাষি মো. ইউছুপ বলেন, ‘আমি এবার এক একর জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এতে আমার ৫-১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবাদের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন এসেছে। এক হেক্টর জমিতে দুই থেকে আড়াই টন সরিষা পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, প্রতি কেজি সরিষা ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। তিন কেজি সরিষা থেকে এক কেজি তেল এবং এক কেজি খৈল পাওয়া যায়। খৈল গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক কেজি তেলের দাম ২০০-২২০ টাকা এবং এক কেজি খৈল ২৫-৩৫ টাকায় বিক্রি করা যায়। সরিষার পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে মৌ-চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম বলেন, প্রান্তিক একজন উদ্যোক্তা মধু চাষ করেছেন। সরিষার পাশাপাশি মধু চাষ করলে পরাগায়ন ভালো হয়। এতে সরিষার ফলনও ভালো হয়। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ে, অন্যদিকে অল্প খরচে মধু চাষ করে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমীন আক্তার বলেন, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে সরিষার চাষাবাদ ও ফলন হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে। সরিষাখেতে মৌ-চাষে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন চাষিরা। সরিষার খেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে পরাগায়নে ফসলের পুষ্টি বৃদ্ধি হয়। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছি ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের রবিশস্যের ফলন বৃদ্ধি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত