Ajker Patrika

‘আমাকে পশুর মতো মারে, আমি মরেই যাব’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৩: ৩৮
‘আমাকে পশুর মতো মারে, আমি মরেই যাব’

কুড়িগ্রামে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় এক শিশুকে। দাম্পত্য জীবনে সে সুখী হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতনে তা পূর্ণ হয়নি। তার কথায়, ‘আমি যদি না বাঁচি, তাহলে সংসারের মায়া করে কী লাভ? আমাকে যেভাবে পশুর মতো মারে, তাতে আমি মরেই যাব। ওই সংসারে থাকলে আমাকে মেরে ফেলবে।’

ওই গৃহবধূকে বিয়ের পর থেকে অত্যাচার করা হচ্ছিল। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর স্বামী আর শাশুড়ি তাকে নির্যাতন করে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে ঘরবন্দী করে রাখেন। এর দুই দিন পর প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে গত ৩১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বাবার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছে সে।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাড়ি কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঝুনকারচর গ্রামে। ২০১৮ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাল্যবিবাহের শিকার হয় সে। সদরের ধরলা সেতুর পূর্ব পারে মাধব গ্রামের হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর গত তিন বছরে দুই সন্তানের জন্ম দিয়েছে সে। কিন্তু দুই সন্তানের মা হওয়ার আনন্দ মলিন হয় স্বামী-শাশুড়ির ধারাবাহিক নির্যাতনে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ গৃহবধূ আর সংসার করতে চাচ্ছে না। সে চাইছে অভিযুক্ত স্বামী-শাশুড়ির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

নির্যাতিত গৃহবধূ জানায়, বিয়ের পর থেকে কথায় কথায় শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় সে। কিন্তু দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সহ্য করে আসছিল। এর আগে কয়েকবার নির্যাতনের শিকার হয়ে বাবার বাড়ি চলে এলেও স্বামীর বাড়ির লোকজন ভুল স্বীকার করে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন না কমে আরও বাড়ে।

সর্বশেষ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে গৃহবধূ বলে, ‘আমার শাশুড়ি দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে স্বামীকে দিয়ে আমাকে মারধর করতে বলেন। স্বামী চুল ধরে লাথি মারতে থাকেন। লাঠি দিয়ে পেটান। মাটিতে ফেলে আমার গলায় ও পেটে লাথি মারতে থাকেন। আমি যন্ত্রণায় তাঁর পা ধরে নিস্তার চাইলেও তিনি আরও মারতে থাকেন। পেটে লাথি মারায় আমার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে ঘরের দরজা বন্ধ করে আমাকে বন্দী করে রাখা হয়।’

গৃহবধূর মা বলেন, ‘মেয়ের দুইটা বাচ্চার কথা চিন্তা করে বারবার ওকে বুঝিয়ে সংসারে পাঠাইছিলাম। কিন্তু এভাবে আর না। এত মারলে মেয়েটা তো মরে যাবে। আমরা আইনের আশ্রয় চাই। আমরা সঠিক বিচার চাই।’

মেয়েকে বাল্যবিবাহ দেওয়া নিজেদের সবচেয়ে বড় ভুল স্বীকার করে গৃহবধূর মা আরও বলেন, ‘এখন সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছি। কিন্তু আমরা বিচার চাই।’

এদিকে স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমানকে মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

শাশুড়ি হাজেরা বেগম বলেন, ‘স্বামীর কথা শোনে না, এই জন্য মারধর করা হয়।’ তবে তিনি নিজে কোনো নির্যাতন করেননি বলে দাবি করেছেন। এর আগেও কয়েকবার নির্যাতন করার বিষয়টি শাশুড়ি স্বীকার করেছেন।

জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহানা আক্তার বলেন, ‘আমরা ওই গৃহবধূকে নির্যাতনের বিষয়টি এখনো অবগত নই। আমাদের কাছে এলে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তার ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

শিশুশিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে শিক্ষককে গণপিটুনি, প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ বক্সে আশ্রয়

এলাকার খবর
Loading...