Ajker Patrika

কালো হওয়া কি আমার অপরাধ

আনিছুর লাডলা
Thumbnail image

‘বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাকে নির্যাতন করত। আমার অপরাধ ছিল, আমি দেখতে কালো। গায়ের রং কালো হওয়ায় স্বামী আমাকে নিয়ে সংসার করতে চায় না। শুনেছি সে ঢাকায়ও বিয়ে করেছে। আমি সংসার করার জন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। তারপরও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অ্যাসিড দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। কালো হওয়ায় শ্বশুর-শাশুড়ি আমার গায়ে অ্যাসিড দিয়েছে। কালো হওয়া কি আমার অপরাধ? আমি সংসার করতে চাই।’ এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন অ্যাসিডদগ্ধ গৃহবধূ মাহমুদা বেগম।

অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার গৃহবধূ মাহমুদা বেগম (২৪) এখন তাঁর শরীরে অ্যাসিডের ক্ষত নিয়ে বিচারের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁর বাবার বাড়িতে। ২৯ আগস্ট জামালপুর সদর এলাকা থেকে মূল আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মাহমুদা ও তাঁর পরিবারের। তাঁরা সরকারের কাছে ন্যায়বিচার ও 
শাস্তির দাবি জানান।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের কেতকীবাড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে মাহমুদা। তাঁর সঙ্গে প্রায় চার বছর আগে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকুড়ি গ্রামের আতোয়ার রহমানের পুত্র হামিদুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী হামিদুল, শ্বশুর আতোয়ার, শাশুড়ি হামিদাসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাহমুদাকে কারণে-অকারণে নির্যাতনের পাশাপাশি তালাকের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। মাহমুদার স্বামী হামিদুল ঢাকায় থাকেন। আর মাঝেমধ্যে বাড়িতে যান।

গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্বশুর আতোয়ার রহমান, শাশুড়ি হামিদা বেগমসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন মাহমুদার গায়ে অ্যাসিড ঢেলে দেন। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মাহমুদাকে উদ্ধার করে প্রথমে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ জুলাই মাহমুদার বাবা আব্দুল মালেক বাদী হয়ে হাতীবান্ধা থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার পর ওই দিন রাতেই পুলিশ আছিয়া বেগম নামে ওই গৃহবধূর এক ননদকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করে। এরপর অন্য আসামিরা আত্মগোপনে চলে যান। ঘটনার ৪৫ দিন পর ২৯ আগস্ট মামলার প্রধান আসামি ওই গৃহবধূর শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আঙুর এবং ওসি শাহা আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জামালপুর সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আতোয়ার রহমান ও হামিদা বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজন মাহমুদার শ্বশুর-শাশুড়ি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত