Ajker Patrika

জাসদের হাতছাড়া ২ ইউপি

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ২৩
জাসদের হাতছাড়া ২ ইউপি

দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে কুষ্টিয়ার মিরপুর এবং ভেড়ামারা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন। হাসানুল হক ইনুর সংসদীয় আসন হওয়া সত্ত্বেও এই দুটি ইউপি নির্বাচনে জাসদের ভরাডুবি হয়েছে।

দুই উপজেলার মধ্যে শুধু ভেড়ামারার একটি ইউপিতে জাসদের প্রার্থী চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো ইউপিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারেননি জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থীরা।

দ্বিতীয় ধাপে কুষ্টিয়া জেলার যে দুটি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই দুটি উপজেলা মিলে কুষ্টিয়া-২ সংসদীয় আসন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এই আসনের সাংসদ। এ কারণে জেলার মধ্যে মিরপুর ও ভেড়ামারাকে জাসদের ঘাঁটি হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচনে জাসদের ঘাঁটিতেই মশালের ভরাডুবি হয়েছে। ভোট ডাকাতিরে কারণে জাসদের এই ভরাডুবি হয়েছে বলে অভিযোগ জাসদ নেতাদের। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মানুষ নৌকার প্রতি আস্থাশীল হয়ে নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে জাসদের এই ভরাডুবি।

নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, মিরপুর উপজেলার ১১ ইউপিতে ১০ জন প্রার্থী মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও একটিতেও জয় পাননি তাঁরা। অপরদিকে হাসানুল হক ইনুর নিজের এলাকা ভেড়ামারার ৬ ইউপির মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছেন মশাল প্রতীকের প্রার্থী।

গতবারের ইউপি নির্বাচনে জাসদের সমর্থিত প্রার্থীরা মশাল প্রতীক নিয়ে মিরপুরের ৩টি এবং ভেড়ামারার দুটি মিলিয়ে মোট ৫টি ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন ৬ ইউপিতে।

কিন্তু এবারের দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভেড়ামারার চাঁদগ্রাম ইউপিতে জয়লাভ করেন জাসদ সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল হাফিজ তপন। আর দু-একটি ইউপি ছাড়া অন্য কোথাও তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারেননি জাসদের মশাল প্রতীকের প্রার্থীরা।

এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় ‍মূলত এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় জাসদ এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং জাসদ শরিক দল হলেও মিরপুর এবং ভেড়ামারার চিত্র উল্টো। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ এবং জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় দুই দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষমতার প্রতিযোগিতাও এখানে চরমে। কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ।

নির্বাচনে জাসদের ভরাডুবির ব্যাপারে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন বলেন, ‘যে ১৭ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেসব ইউপিতে আমাদের প্রার্থীরা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের দিন প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। মানুষের ভোটের মূল্যায়ন হয়নি। এবারে যেহেতু রাতে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে যায়নি সেহেতু রাতের আঁধারে কিছু না হলেও দিনে দুপুরে ভোট ডাকাতি হয়েছে।’

তবে অন্য কথা বলছে আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, ‘ইনু জাতীয় নির্বাচনে এই এলাকা থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। কারণ তিনি জানেন তাঁর দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচন করলে মানুষ তাঁকেও প্রত্যাখ্যান করতে পারে।’

রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব আরও বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন আসলেই তিনি মশাল প্রতীক নিয়ে তাঁর নেতা–কর্মীদের নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেন। নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার জন্যই তিনি এই কাজ করেন। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষের আস্থা নৌকার ওপর। তাই যখনই নৌকার বিরুদ্ধে তিনি মশাল দাঁড় করিয়েছেন তখনই মশালের ভরাডুবি হয়েছে।’

মিরপুর উপজেলায় ১১ ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ছয়জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে চারজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি একটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। অপরদিকে ভেড়ামারা উপজেলার ৬ ইউপির নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের তিনজন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসাবে আনারস প্রতীকের দুজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মশাল প্রতীক নিয়ে একজন নির্বাচিত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত