Ajker Patrika

বুদ্ধদেবের ফলস্টাফ

সম্পাদকীয়
বুদ্ধদেবের ফলস্টাফ

কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তখন বুদ্ধদেব বসু কলকাতার রিপন কলেজে অধ্যাপনা করছিলেন। এখন সেই কলেজের নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। বুদ্ধদেব তখন ত্রৈমাসিক ‘কবিতা’ পত্রিকা সম্পাদনা করছেন। সেই পত্রিকায় কারও কবিতা ছাপা হলে তিনি নিজেকে ‘কবি’ বলে ভাবতে পারতেন। যেন কবি স্বীকৃতির জন্য ‘কবিতা’ পত্রিকায় কবিতা ছাপার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

ছুটি পেলেই বুদ্ধদেব বসু চলে আসতেন ঢাকায়। স্ত্রী প্রতিভা বসুর বাবার বাড়িতে বসত আড্ডা। সেই আড্ডায় কবিতা অনুরাগীরা যোগ দিতেন। চলত তর্ক-বিতর্ক, হইচই। কখনো ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে বাকল্যান্ড বাঁধের ওপর নবাববাড়ির পেছনে অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গায় বসে চলত সাহিত্য-আলোচনা। নবাববাড়ির ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত ১০টা বাজলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সবাই যে যাঁর বাড়ির দিকে ফিরতেন।

বুদ্ধদেব বসুর এক দারুণ কীর্তির কথা কিরণশঙ্কর শুনেছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক প্রফুল্লকুমার গুহের কাছ থেকে। প্রফুল্লকুমার গুহ পড়াতেন শেক্‌সপিয়ার। এমন তন্ময় হয়ে পড়াতেন যে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অমনোযোগী হওয়ার উপায় থাকত না।

সেই প্রফুল্লকুমার গুহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউটরিয়াল ক্লাস নিতেন কিরণশঙ্কর সেনগুপ্তদের। সেই ক্লাস নিতে গিয়েই বুদ্ধদেবের কথা বলেছিলেন তিনি। ঘটনাটা এমন: বুদ্ধদেব যে বছর পরীক্ষা দেন, ওই বছর একটি প্রশ্ন ছিল শেক্‌সপিয়ারের ‘হেনরি দ্য ফোর্থ’ নাটক থেকে। ফলস্টাফ চরিত্রটির প্রত্যাখ্যান (রিজেক্ট অব ফলস্টাফ) সম্পর্কে ছিল প্রশ্নটি। অধ্যাপক গুহ খুবই দরদ দিয়ে বিষয়টি পড়িয়েছিলেন। তিনি যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সেই ব্যাখ্যাসহ লিখেছিল অন্য ছাত্ররা। ব্যতিক্রম বুদ্ধদেব বসু। তিনি লিখেছেন একেবারে ভিন্ন জায়গা থেকে। অধ্যাপক গুহের ব্যাখ্যাকে বাতিল করে। অন্য অধ্যাপক হলে কী হতো কে জানে, নিজের ব্যাখ্যাকে অগ্রাহ্য করে যিনি নতুন ব্যাখ্যা লিখেছেন, তিনি কি আর ভালো নম্বর পেতেন? কিন্তু প্রফুল্লকুমার গুহ সেদিন এই প্রশ্নের উত্তরে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব বসুকেই। বলেছিলেন, ‘এত ভালো ইংরেজি, এত সুন্দর যুক্তি যে সর্বোচ্চ নম্বর না দিয়ে পারলাম না।’ 

সূত্র: কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, চল্লিশের দশকের ঢাকা, পৃষ্ঠা ৪০-৪১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত