Ajker Patrika

বাঙালির প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসব

ওসমান গণি
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৩২
Thumbnail image

বাঙালির প্রধান সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে অমর একুশে বইমেলা। দেশের বাঙালি, প্রবাসী বাঙালি সবাই এই সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশ নেয়। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে সবার ঠিকানা—মিলনমেলার স্থান একুশের বইমেলা প্রাঙ্গণ।

এবারে অমর একুশের বইমেলায় ৬৩৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন সংগঠন আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। বইমেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমর একুশে বইমেলার দ্বার উন্মোচন করবেন।

বইমেলায় এবার তিনটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে:

১. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বাদ দিয়ে বাংলা একাডেমি স্পনসর নিয়ে সরাসরি কাজ করছে। তাতে একাডেমি জবাবদিহির মধ্যে থাকবে, যা এত দিন ছিল না।

২. মেট্রোরেল চালু হওয়ার কারণে উত্তরা, মিরপুরের বইপ্রেমীরা সহজেই বইমেলায় আসতে পারবে, যা এত দিন ঢাকা শহরে জানজটের কারণে সম্ভব ছিল না।

৩. ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন-সংলগ্ন গেট খোলা থাকবে। বারবার চেষ্টা করেও এত দিন খোলা রাখা সম্ভব হয়নি। ঢাকার মানবিক পুলিশ অফিসার হাবিবুর রহমানের হস্তক্ষেপে তা এবার সহজেই সম্ভব হয়েছে। এই গেট দিয়ে গাড়ি নিয়েও প্রবেশ করা যাবে।

মেলায় প্রকাশকেরা পালন করেন মুখ্য ভূমিকা। এই মেলা বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। ‘মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্ত চেতনা—দুয়ের প্রত্যয়ে আমাদের প্রকাশনা’ স্লোগান নিয়ে আমরা প্রকাশনায় নতুন ধারা সৃষ্টি করে সৃজনশীল সাহিত্যের সর্বাধিক বই প্রকাশ করেছি। ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ ছাড়াও রচনাবলি, প্রবন্ধ, রাজনীতি, ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথাসহ সৃজনশীল সব শাখায় আমাদের প্রকাশনা রয়েছে। প্রকাশনা শুধু ব্যবসা নয়, সমাজ বিনির্মাণেও প্রকাশকের ভূমিকা রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

গত বছর আমরা ১৩০টি বই প্রকাশ করেছি। এবারও আমাদের শতাধিক বই প্রকাশিত হবে। আমাদের প্রধান লেখকের তালিকায় রয়েছেন—শেখ হাসিনা, আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, রফিকুল ইসলাম, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সলিমুল্লাহ খান, হাসনাত আবদুল হাই, পান্না কায়সার, মোনায়েম সরকার, ড. মোহাম্মদ হান্নান, ড. এম আবদুল আলীম, আসাদুজ্জামান আসাদ—যাঁদের প্রায় সব বই আমরা প্রকাশ করেছি, তাঁদের বই তো থাকবেই।

আরও কয়েকটি বইয়ের নাম জানিয়ে রাখি—‘বাংলাদেশ উইল গো আ লং ওয়ে’ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু; ‘রচনাবলি’ হুমায়ুন আজাদ; ‘শেখ মুজিব: বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু’ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন; ‘মুক্তিযুদ্ধের কত স্মৃতি, কত কথা’ মোনায়েম সরকার; ‘শ্রেষ্ঠ উপন্যাস’ আনোয়ারা সৈয়দ হক; ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র’ রফিকুর রশীদ; ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ সৈয়দ আবুল মকসুদ; ‘বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ’ এম আবদুল আলীম; ‘মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুরা’ ড. মোহাম্মদ জহরুল ইসলাম; ‘মুক্তিযুদ্ধসমগ্র ২’ আসাদুজ্জামান আসাদ; ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাসসমগ্র’ সুজন বড়ুয়া; ‘জার্মানি: অতীত ও বর্তমান’ ড. মুকিদ চৌধুরী; ‘মাহবুবুল হক সম্মাননাগ্রন্থ’ সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ সম্পাদিত; ‘একাত্তরে রাজশাহী উপশহর: গণহত্যা, নির্যাতন ও গণকবর’ মেসবাহ কামাল; ‘অন্য চোখে বঙ্গবন্ধু’ ড. ডি এম ফিরোজ শাহ্; ‘সমরে-সংস্কৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ এবং কবির মুখোমুখি কবি’ শিমুল সালাহ্উদ্দিন; ‘১৯৭১ দিনপঞ্জি’ মো. মোজাম্মেল হক ইত্যাদি।

অমর একুশে বইমেলায় হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয়। সব বই-ই বই নয়। এটা কাম্য নয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আমাদের মানসম্পন্ন বই প্রকাশে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। দরকার মানবিক মানুষ। পাইরেট বই মেলায় বিক্রি নিষিদ্ধ। আমরা পাইরেসি-মুক্ত বইমেলাই চাই।

বই হোক মানবিক মানুষ তৈরির হাতিয়ার।

লেখক: ওসমান গণি,মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকাশক আগামী প্রকাশনী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত