রাজীব কুমার সাহা
দীপাবলি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ উৎসব। এক কথায় দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। প্রতিবছরই দুর্গাপূজার আনন্দ-উচ্ছ্বাস মিইয়ে যাওয়ার আগেই দীপাবলি আসে। বিজয়ার ভাসানে পাঁচ দিনের আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগবিধুর চেতনায় আবিষ্ট
হয় মন, সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্নে বিভোর হয়। বিশদভাবে বললে বলতে হয়, দীপাবলি শুধু সনাতনধর্মীদের নয়, শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। আর এখন এই অনুষ্ঠান সর্বজনীন।
দীপাবলি একই সঙ্গে দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, দীপালি, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা ও যক্ষরাত্রি নামেও পরিচিত। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষেরা মর্ত্যে আগমন করেন, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ওই দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়ে থাকে। কেউ কেউ রাতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় সলতে-প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালায়; কেউবা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায় (অনেকে এটি কার্তিক মাসজুড়ে করে থাকেন)। একে বলা হয় আকাশপ্রদীপ প্রজ্বালন।
বাংলাদেশে দীপাবলির দিনে কালীপূজা হয়। তাই দীপাবলি আর কালীপূজা একই সূত্রে গাঁথা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, ত্রিনিদাদ-টোব্যাগো, মরিশাস, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিজি এবং সুরিনামে দীপাবলির দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলিতে কালীপূজা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে এই দিনে গণেশপূজা ও লক্ষ্মীপূজাও করা হয়। জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে দীপাবলির দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন। দীপাবলির দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দজি অমৃতসরে ফিরে আসেন; সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বাহান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখেরা পালন করেন; তাঁরা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলে থাকেন।
রামায়ণ অনুসারে দীপাবলির দিনে ত্রেতা যুগে শ্রীরাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রীরামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশিতে আতশবাজি ফোটায়। অনেকে মনে করে দীপাবলির আলোকসজ্জা এবং আতশবাজি ত্রেতা যুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অপরাপর সব অঞ্চলে প্রচলিত-পরিচিত-বিস্তৃত হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দীপাবলি মূলত পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। দীপাবলির আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী’, এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশীর পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এই দিনই মূল দীপাবলি উৎসব হিসেবে উদ্যাপিত হয়। এ দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীরা শক্তির দেবী কালীর পূজা করে থাকেন।
বিষ্ণুপুরাণ মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান। দীপাবলির দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালোবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বালন করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুত অযুত প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
দীপাবলির তৃতীয় দিন কার্তিকা শুদ্ধ। এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে। চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া। একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, কপালে ফোঁটা দেয়, হাতে রাখি বেঁধে দেয়। আর পঞ্চম দিনই দীপাবলি উৎসবের মধ্য দিয়ে তিথির পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রতিটি সর্বজনীন আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদ্যাপন করে। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো প্রজ্বালনের দিন। নিজের ভেতর-বাইরের সব অজ্ঞতা ও অন্ধকারকে দীপশিখায় বিদূরিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন, তবুও মূল কথা এক। প্রকৃতপক্ষে দীপাবলি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বালনের দিন; আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
দীপাবলি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ উৎসব। এক কথায় দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। প্রতিবছরই দুর্গাপূজার আনন্দ-উচ্ছ্বাস মিইয়ে যাওয়ার আগেই দীপাবলি আসে। বিজয়ার ভাসানে পাঁচ দিনের আনন্দ-বিদায়ে অবচেতনে হলেও যে বিয়োগবিধুর চেতনায় আবিষ্ট
হয় মন, সেই মন দীপাবলিকে সামনে রেখেই আবার আনন্দের স্বপ্নে বিভোর হয়। বিশদভাবে বললে বলতে হয়, দীপাবলি শুধু সনাতনধর্মীদের নয়, শিখ এবং জৈন ধর্মাবলম্বীদেরও অনুষ্ঠান। আর এখন এই অনুষ্ঠান সর্বজনীন।
দীপাবলি একই সঙ্গে দেওয়ালি, দীপান্বিতা, দীপালিকা, দীপালি, সুখরাত্রি, সুখসুপ্তিকা ও যক্ষরাত্রি নামেও পরিচিত। মহালয়ায় শ্রাদ্ধগ্রহণের জন্য যমলোক ছেড়ে যে পিতৃপুরুষেরা মর্ত্যে আগমন করেন, তাঁদের পথ প্রদর্শনার্থে উল্কা জ্বালানো হয়। এ কারণে ওই দিন আলোকসজ্জা ও বাজি পোড়ানো হয়ে থাকে। কেউ কেউ রাতে নিজগৃহে দরজা-জানালায় সলতে-প্রদীপ, মোমবাতি জ্বালায়; কেউবা লম্বা বাঁশের মাথায় কাগজের তৈরি ছোট ঘরে প্রদীপ জ্বালায় (অনেকে এটি কার্তিক মাসজুড়ে করে থাকেন)। একে বলা হয় আকাশপ্রদীপ প্রজ্বালন।
বাংলাদেশে দীপাবলির দিনে কালীপূজা হয়। তাই দীপাবলি আর কালীপূজা একই সূত্রে গাঁথা। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, ত্রিনিদাদ-টোব্যাগো, মরিশাস, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিজি এবং সুরিনামে দীপাবলির দিন সরকারি ছুটি থাকে। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দীপাবলিতে কালীপূজা হয়। কোনো কোনো অঞ্চলে এই দিনে গণেশপূজা ও লক্ষ্মীপূজাও করা হয়। জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর ৫২৭ অব্দে দীপাবলির দিনে মোক্ষ (নির্বাণ) লাভ করেন। দীপাবলির দিনে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দজি অমৃতসরে ফিরে আসেন; সম্রাট জাহাঙ্গীরকে পরাজিত করে গোয়ালিওর দুর্গ থেকে বাহান্ন হিন্দু রাজাকে মুক্ত করে তাঁর এই প্রত্যাবর্তনকে শিখেরা পালন করেন; তাঁরা এই দিনকে ‘বন্দী ছোড় দিবস’ও বলে থাকেন।
রামায়ণ অনুসারে দীপাবলির দিনে ত্রেতা যুগে শ্রীরাম রাবণ বধ করে চৌদ্দ বছরের বনবাস শেষে অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন করেন। শ্রীরামের চৌদ্দ বছর পরের প্রত্যাবর্তনে রাজ্যজুড়ে প্রদীপ জ্বালানো হয়। প্রজারা খুশিতে আতশবাজি ফোটায়। অনেকে মনে করে দীপাবলির আলোকসজ্জা এবং আতশবাজি ত্রেতা যুগে রাম-রাজ্যে ঘটে যাওয়া সেই অধ্যায়কে সামনে রেখেই অপরাপর সব অঞ্চলে প্রচলিত-পরিচিত-বিস্তৃত হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দীপাবলি মূলত পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব। দীপাবলির আগের দিনের চতুর্দশীকে (এই দিনকে দীপাবলি উৎসবের প্রথম দিন বলা হয়) বলা হয় ‘নরকা চতুর্দশী’, এই দিনে শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করেছিলেন। চতুর্দশীর পরের অমাবস্যা তিথি দীপাবলি উৎসবের দ্বিতীয় দিন। এই দিনই মূল দীপাবলি উৎসব হিসেবে উদ্যাপিত হয়। এ দিন রাতে শাক্ত ধর্মের অনুসারীরা শক্তির দেবী কালীর পূজা করে থাকেন।
বিষ্ণুপুরাণ মতে, বিষ্ণুর বামন অবতার অসুর বলিকে পাতালে পাঠান। দীপাবলির দিনে পৃথিবীতে এসে অন্ধকার ও অজ্ঞতা বিদূরিত করতে, ভালোবাসা ও জ্ঞানের শিখা প্রজ্বালন করতে অসুর বলিকে পৃথিবীতে এসে অযুত অযুত প্রদীপ জ্বালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
দীপাবলির তৃতীয় দিন কার্তিকা শুদ্ধ। এই দিন অসুর বলি নরক থেকে বেরিয়ে পরিশুদ্ধ হয়ে বিষ্ণুর বরে পৃথিবী শাসন করে। চতুর্থ দিন হচ্ছে ভ্রাতৃ দ্বিতীয়া। একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। এই দিন বোনেরা ভাইকে নিমন্ত্রণ করে, কপালে ফোঁটা দেয়, হাতে রাখি বেঁধে দেয়। আর পঞ্চম দিনই দীপাবলি উৎসবের মধ্য দিয়ে তিথির পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রতিটি সর্বজনীন আনন্দের উৎসব মন্দের বিরুদ্ধে ভালোর জয়কে উদ্যাপন করে। আলোকসজ্জার এই দিবস অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলো প্রজ্বালনের দিন। নিজের ভেতর-বাইরের সব অজ্ঞতা ও অন্ধকারকে দীপশিখায় বিদূরিত করার দিন। দেশ থেকে দেশে এই দিনের মাহাত্ম্য ভিন্ন ভিন্ন, তবুও মূল কথা এক। প্রকৃতপক্ষে দীপাবলি প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসার চিরন্তন শিখা প্রজ্বালনের দিন; আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সেই পরমব্রহ্মে লীন হওয়ার দিন।
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪