মানবর্দ্ধন পাল

‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মারক বাঙালির চেতনার উৎসব, প্রাণের উৎসব, মননের উৎসব একুশের বইমেলা। আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাধীনতার মর্মমূল ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে এই একুশের বইমেলা। তাই এর ভাবসম্পদ এবং গুরুত্ব অন্য কোনো মেলার মতো নয়। একুশের বইমেলা কেবল বই-বাণিজ্যের মেলা নয়, বইয়ের বিপণনের মেলা নয়, প্রকাশনার বিজ্ঞাপনও নয়—তা মাসব্যাপী বাঙালির মনন-সম্ভারের মহোৎসব। এর সোনালি ফসল আমাদের মেধা-সাম্রাজ্যের ধীমান কবি-লেখকদের চেতনার ফুল। বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উৎসব পয়লা বৈশাখের মতোই একুশের বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষের মহোৎসবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বায়ান্ন বছরে শিক্ষামনস্ক ও সংস্কৃতিমান বাঙালির প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে একুশের বইমেলা। এই বইমেলা ভাষা আন্দোলনের স্মারক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন। একুশের রক্তস্নাত চেতনায় ঋদ্ধ এই বইমেলা। জাতীয় মননের প্রতীক হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা এখন বিশ্ব বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ। তাই প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক-পাঠক বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে আসেন। এ উপলক্ষে আসেন ভিনদেশি বাঙালি কবি-লেখকেরাও—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের। তাঁদের বইও এ দেশের প্রকাশকেরা কেউ কেউ ছাপেন বলে তাঁদের আগমন হয় স্বতঃস্ফূর্ত। তাতে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে একুশের বইমেলা।
আমি মফস্বলের মানুষ, তবে প্রতিবছরই বইমেলায় যাই। করোনাকালের দুই বছর ছাড়া বিশ বছর ধরে বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছি। নিজের বইয়ের প্রকাশনা থাক বা না-থাক, বইমেলায় যাই একাধিক কারণে। নতুন বই সাধ্যমতো কেনা তো আছেই, স্টল ঘুরে দেখার মধ্যেও আছে আনন্দ! বইয়ের বিষয়, লেখক-পরিচিতি, ফ্ল্যাপের বক্তব্য, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, প্রচ্ছদের রং-ডিজাইন, নতুন বইয়ের গন্ধ ইত্যাদি সবই আমাকে আকর্ষণ করে। উপরি পাওনা হিসেবে মিলে যায় অনেক খ্যাতিমান লেখকের দেখাও। এবার যেমন পাওয়া গেল লন্ডনপ্রবাসী খ্যাতিমান এক লেখক দম্পতিকে—সেলিম জাহান ও শামীম আজাদ। একজন জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মধুক্ষরা গদ্যশিল্পী, অন্যজন কবিতায় এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। দেখা হলো কথাশিল্পী মোহিত কামাল এবং আমেরিকাপ্রবাসী আহমদ মাযহারের সঙ্গেও। দেখা হলো নারী-মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক লিনু হকের সঙ্গে। ভারতীয় কবি-বন্ধুদের মধ্যে দেখা হলো কলকাতার কাজল চক্রবর্তী, শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার দিলীপ দাসের সঙ্গে। দেখা ও কথা হলো টিভিতে টক শোর পরিচিত মুখ নজরুল কবীরের সঙ্গে। তা ছাড়া প্রতিবছর বইমেলায় পরিচিত হওয়া যায় অদেখা কিন্তু পাঠসঙ্গী খ্যাতিমান লেখক ও নবীন কবি-লেখকদের সঙ্গে। উপরি পাওনা থাকে দু-চারজনের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের সৌজন্যসংখ্যা। এসবের আকর্ষণই প্রতিবছর আমাকে টেনে নিয়ে যায় বইমেলায়।
একটা সময় গেছে, প্রতি শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দল বেঁধে মেলায় গিয়ে গভীর রাতে ফিরেছি বইয়ের বোঝা নিয়ে। মেলা থেকে আমি তাৎক্ষণিক বই খুব কমই কিনি। টেঁকের জোর কম বলে দেখে, চেখে এবং বুঝে বই কেনাই আমার স্বভাব। সবাই কিংবা অনেকেই হয়তো তেমনিভাবেই কেনেন। তবে আমি ঘনিষ্ঠ ও কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কিনি, যাতে উভয়েই ব্যবহার করতে পারি। এ কারণে প্রথম দিন মেলায় গিয়ে প্যাভিলিয়ন ও বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে শুধু ক্যাটালগ সংগ্রহ করি। বাসায় এসে প্রয়োজন ও পছন্দের বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করি। এরপর মেলার শেষ সপ্তাহে তালিকা ধরে বই কিনি। তাতে অর্থের কিছুটা সাশ্রয়ও হয়। পছন্দের সব বইই তো কেনা হয় না, দাম এবং সংগতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়!
প্রমথ চৌধুরীর সেই আপ্তবাক্যটি সবাই জানেন—বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না। এই একুশ শতকের মূল্যস্ফীতির যুগে বাস করলে তিনি কী বলতেন জানি না! তবে বই কিনে তিনি জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ অর্জনের কথা ভেবেই সে কথা বলেছিলেন। বিত্তবান, ব্যবসায়ী, কোটিপতি, মিল-কারকানার মালিকেরা বই পড়েন না, কেনেনও না। নিরক্ষর দীনদরিদ্র নিম্নবর্গের মানুষেরও বই কেনার সংগতি নেই। এ কথা সেই যুগেও যেমন সত্য ছিল, এখনো তা-ই। এবার একুশে পদকপ্রাপ্ত ক্ষণজন্মা জিয়াউল হক বা পলান সরকার কজনই বা হতে পারেন! তাঁরা তো যুগে-যুগে জন্মগ্রহণ করেন না!
বই কেনেন মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট চাকরিজীবী এবং সচেতন শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের একাংশ। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন আর বই পড়ে না! প্রাইভেট পড়া ও পড়ানোর ইঁদুরদৌড়ে তারা এখন এমন ব্যস্ত থাকে যে ‘আউট বই’ পড়ার তাদের সময় কোথায়! আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বহুবার অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একবার বইমেলায় যাওয়ার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শিক্ষকদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাইনি! অথচ প্রতিবছর দেখেছি, শিক্ষাসফরের নামে বনভোজনে কলেজ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ে তাদের উদ্বাহু নৃত্য!
বইমেলা তো মূলত লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের বৎসরান্তিক মিলনমেলা। প্রকাশকের হাত ধরে লেখকের সৃজনশীল কর্ম পাঠকের কাছে উৎসবের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় বইমেলা। বইমেলা তো বাণিজ্য মেলার মতো বিচিত্র পণ্যের সমাহারে উজ্জ্বল নয় যে সব ধরনের মানুষের সমাগম হবে! পাঠের প্রতি আকর্ষণ, বই সংগ্রহের মোহ এবং জ্ঞানার্জনের স্পৃহা না থাকলে তো বইমেলার প্রতি সবার উৎসাহ থাকার কথা নয়! তবু লক্ষ করা যায়, উপচেপড়া ভিড়ে মেলাপ্রাঙ্গণ ধূলিধূসর ও টালমাটাল! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এত বড় মেলাপ্রাঙ্গণ, তবু যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! কিন্তু ভেতরের সত্য তেমন সুখকর নয়!
অধিকাংশ প্রকাশকই বলে থাকেন, ক্রেতা নেই, বেচাবিক্রি নেই, গ্রাহক নেই। ব্যবসায়ীদের ধর্মই অসন্তুষ্টি। ভালো বেচাবিক্রি হলেও তাঁরা স্বীকার করেন না। বলেন, ‘চলছে মোটামুটি!’ কিন্তু এ কথা সত্যি যে মেলা মানে তো শুধু বিপণিবিতানে গ্রাহকদের কেনাবেচা নয়, দর্শনার্থীদের স্থানও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাংসের চেয়ে আলু বেশি হলে ব্যঞ্জন যেমন স্বাদ হারায়, তেমনি ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি হলেও মেলা মাহাত্ম্য হারায়। সেই দর্শকেরা যদি গ্রন্থদর্শক হতো, তবে আপত্তির তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ দর্শকের মধ্যে তা-ও লক্ষ করা যায় না! বই নেড়েচেড়ে দেখার মধ্যেও যে আনন্দ আছে, তাও অনেক দর্শকের মধ্যে অনুপস্থিত। অনেকে বইমেলায় যায় দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, রেস্টুরেন্টে চা-নাশতা খেতে, জটলা করে সেলফি তুলতে এবং সস্তা বিনোদনের লক্ষ্যে। সেদিন স্বচক্ষেই দেখলাম, একদল তরুণী জনৈক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিককে দেখে স্টলে ঢুকে তাঁর বইসহ লেখকের সঙ্গে ছবি তুলে বইটি রেখে দিব্যি চলে গেল। এসবের কারণে প্রকৃত বইপ্রেমিকেরা নির্বিঘ্নে দেখে-চেখে-বুঝে বই সংগ্রহ করতে পারেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সব দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বইমেলার চেতনা, গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য বিঘ্নিত না হয়ে পারে না।
ক্রমান্বয়ে বইমেলায় প্রকাশক বাড়ছে, স্টল বাড়ছে এবং বাড়ছে মেলার পরিধিও। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় এই, অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকদের সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে! ফলে সামগ্রিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি। তাই একটি জরিপে জানা যায়, বেরোনোর পথে মেলায় আসা মানুষদের মধ্যে মাত্র ৭ ভাগের হাতে বইয়ের প্যাকেট দেখা যায়! এই জরিপের তথ্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে দুর্ভাবনায় আক্রান্ত করে বৈকি! বাঙালি বই কিনে না, কিন্তু লাইন ধরে সিনেমার টিকিট কিনে—এই সত্য সৈয়দ মুজতবা আলী বহু বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন বোধ করি এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে। তাই বইমেলায় গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকেরা রেস্টুরেন্টে হাজার টাকা খরচ করবে কিন্তু দুই শ টাকা দিয়ে একটি বই কিনবে না! রবীন্দ্রনাথ না কিনুক, গোপাল ভাঁড়ের রঙ্গরসিকতা বই তো কেনা যায়! বিভূতিভূষণের বই না কিনুক, বাল্যশিক্ষা-জাতীয় একটি শিশুতোষ বইও তো কেনা যায় পরিবারের শিশুটির জন্য! কিন্তু না, প্রতিদিন ঘুরেফিরে, আড্ডা মেরে, চা-পানি খেয়ে চলে আসবে! আমি এমন একাধিক পরিবারের কথা জানি, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভোরে সপরিবারে বইমেলায় গিয়ে ঘুরেফিরে, খেয়েদেয়ে রাতে ফিরে এসেছে, কিন্তু একটি বইও কেনেনি। অবশ্য প্রকৃত বিনোদনের দুর্ভিক্ষের এই নগরে-মহানগরে সাধারণের জন্য কীই-বা আছে! তবু বইমেলার এক মাসে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে, তারা সবাই যদি একটি করেও বই কিনত; তবে কোনো প্রকাশকের কাছে কোনো বই থাকত কি না, সন্দেহ!
লেখক: মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মারক বাঙালির চেতনার উৎসব, প্রাণের উৎসব, মননের উৎসব একুশের বইমেলা। আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাধীনতার মর্মমূল ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে এই একুশের বইমেলা। তাই এর ভাবসম্পদ এবং গুরুত্ব অন্য কোনো মেলার মতো নয়। একুশের বইমেলা কেবল বই-বাণিজ্যের মেলা নয়, বইয়ের বিপণনের মেলা নয়, প্রকাশনার বিজ্ঞাপনও নয়—তা মাসব্যাপী বাঙালির মনন-সম্ভারের মহোৎসব। এর সোনালি ফসল আমাদের মেধা-সাম্রাজ্যের ধীমান কবি-লেখকদের চেতনার ফুল। বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উৎসব পয়লা বৈশাখের মতোই একুশের বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষের মহোৎসবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বায়ান্ন বছরে শিক্ষামনস্ক ও সংস্কৃতিমান বাঙালির প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে একুশের বইমেলা। এই বইমেলা ভাষা আন্দোলনের স্মারক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন। একুশের রক্তস্নাত চেতনায় ঋদ্ধ এই বইমেলা। জাতীয় মননের প্রতীক হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা এখন বিশ্ব বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ। তাই প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক-পাঠক বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে আসেন। এ উপলক্ষে আসেন ভিনদেশি বাঙালি কবি-লেখকেরাও—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের। তাঁদের বইও এ দেশের প্রকাশকেরা কেউ কেউ ছাপেন বলে তাঁদের আগমন হয় স্বতঃস্ফূর্ত। তাতে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে একুশের বইমেলা।
আমি মফস্বলের মানুষ, তবে প্রতিবছরই বইমেলায় যাই। করোনাকালের দুই বছর ছাড়া বিশ বছর ধরে বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছি। নিজের বইয়ের প্রকাশনা থাক বা না-থাক, বইমেলায় যাই একাধিক কারণে। নতুন বই সাধ্যমতো কেনা তো আছেই, স্টল ঘুরে দেখার মধ্যেও আছে আনন্দ! বইয়ের বিষয়, লেখক-পরিচিতি, ফ্ল্যাপের বক্তব্য, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, প্রচ্ছদের রং-ডিজাইন, নতুন বইয়ের গন্ধ ইত্যাদি সবই আমাকে আকর্ষণ করে। উপরি পাওনা হিসেবে মিলে যায় অনেক খ্যাতিমান লেখকের দেখাও। এবার যেমন পাওয়া গেল লন্ডনপ্রবাসী খ্যাতিমান এক লেখক দম্পতিকে—সেলিম জাহান ও শামীম আজাদ। একজন জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মধুক্ষরা গদ্যশিল্পী, অন্যজন কবিতায় এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। দেখা হলো কথাশিল্পী মোহিত কামাল এবং আমেরিকাপ্রবাসী আহমদ মাযহারের সঙ্গেও। দেখা হলো নারী-মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক লিনু হকের সঙ্গে। ভারতীয় কবি-বন্ধুদের মধ্যে দেখা হলো কলকাতার কাজল চক্রবর্তী, শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার দিলীপ দাসের সঙ্গে। দেখা ও কথা হলো টিভিতে টক শোর পরিচিত মুখ নজরুল কবীরের সঙ্গে। তা ছাড়া প্রতিবছর বইমেলায় পরিচিত হওয়া যায় অদেখা কিন্তু পাঠসঙ্গী খ্যাতিমান লেখক ও নবীন কবি-লেখকদের সঙ্গে। উপরি পাওনা থাকে দু-চারজনের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের সৌজন্যসংখ্যা। এসবের আকর্ষণই প্রতিবছর আমাকে টেনে নিয়ে যায় বইমেলায়।
একটা সময় গেছে, প্রতি শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দল বেঁধে মেলায় গিয়ে গভীর রাতে ফিরেছি বইয়ের বোঝা নিয়ে। মেলা থেকে আমি তাৎক্ষণিক বই খুব কমই কিনি। টেঁকের জোর কম বলে দেখে, চেখে এবং বুঝে বই কেনাই আমার স্বভাব। সবাই কিংবা অনেকেই হয়তো তেমনিভাবেই কেনেন। তবে আমি ঘনিষ্ঠ ও কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কিনি, যাতে উভয়েই ব্যবহার করতে পারি। এ কারণে প্রথম দিন মেলায় গিয়ে প্যাভিলিয়ন ও বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে শুধু ক্যাটালগ সংগ্রহ করি। বাসায় এসে প্রয়োজন ও পছন্দের বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করি। এরপর মেলার শেষ সপ্তাহে তালিকা ধরে বই কিনি। তাতে অর্থের কিছুটা সাশ্রয়ও হয়। পছন্দের সব বইই তো কেনা হয় না, দাম এবং সংগতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়!
প্রমথ চৌধুরীর সেই আপ্তবাক্যটি সবাই জানেন—বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না। এই একুশ শতকের মূল্যস্ফীতির যুগে বাস করলে তিনি কী বলতেন জানি না! তবে বই কিনে তিনি জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ অর্জনের কথা ভেবেই সে কথা বলেছিলেন। বিত্তবান, ব্যবসায়ী, কোটিপতি, মিল-কারকানার মালিকেরা বই পড়েন না, কেনেনও না। নিরক্ষর দীনদরিদ্র নিম্নবর্গের মানুষেরও বই কেনার সংগতি নেই। এ কথা সেই যুগেও যেমন সত্য ছিল, এখনো তা-ই। এবার একুশে পদকপ্রাপ্ত ক্ষণজন্মা জিয়াউল হক বা পলান সরকার কজনই বা হতে পারেন! তাঁরা তো যুগে-যুগে জন্মগ্রহণ করেন না!
বই কেনেন মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট চাকরিজীবী এবং সচেতন শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের একাংশ। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন আর বই পড়ে না! প্রাইভেট পড়া ও পড়ানোর ইঁদুরদৌড়ে তারা এখন এমন ব্যস্ত থাকে যে ‘আউট বই’ পড়ার তাদের সময় কোথায়! আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বহুবার অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একবার বইমেলায় যাওয়ার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শিক্ষকদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাইনি! অথচ প্রতিবছর দেখেছি, শিক্ষাসফরের নামে বনভোজনে কলেজ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ে তাদের উদ্বাহু নৃত্য!
বইমেলা তো মূলত লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের বৎসরান্তিক মিলনমেলা। প্রকাশকের হাত ধরে লেখকের সৃজনশীল কর্ম পাঠকের কাছে উৎসবের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় বইমেলা। বইমেলা তো বাণিজ্য মেলার মতো বিচিত্র পণ্যের সমাহারে উজ্জ্বল নয় যে সব ধরনের মানুষের সমাগম হবে! পাঠের প্রতি আকর্ষণ, বই সংগ্রহের মোহ এবং জ্ঞানার্জনের স্পৃহা না থাকলে তো বইমেলার প্রতি সবার উৎসাহ থাকার কথা নয়! তবু লক্ষ করা যায়, উপচেপড়া ভিড়ে মেলাপ্রাঙ্গণ ধূলিধূসর ও টালমাটাল! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এত বড় মেলাপ্রাঙ্গণ, তবু যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! কিন্তু ভেতরের সত্য তেমন সুখকর নয়!
অধিকাংশ প্রকাশকই বলে থাকেন, ক্রেতা নেই, বেচাবিক্রি নেই, গ্রাহক নেই। ব্যবসায়ীদের ধর্মই অসন্তুষ্টি। ভালো বেচাবিক্রি হলেও তাঁরা স্বীকার করেন না। বলেন, ‘চলছে মোটামুটি!’ কিন্তু এ কথা সত্যি যে মেলা মানে তো শুধু বিপণিবিতানে গ্রাহকদের কেনাবেচা নয়, দর্শনার্থীদের স্থানও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাংসের চেয়ে আলু বেশি হলে ব্যঞ্জন যেমন স্বাদ হারায়, তেমনি ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি হলেও মেলা মাহাত্ম্য হারায়। সেই দর্শকেরা যদি গ্রন্থদর্শক হতো, তবে আপত্তির তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ দর্শকের মধ্যে তা-ও লক্ষ করা যায় না! বই নেড়েচেড়ে দেখার মধ্যেও যে আনন্দ আছে, তাও অনেক দর্শকের মধ্যে অনুপস্থিত। অনেকে বইমেলায় যায় দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, রেস্টুরেন্টে চা-নাশতা খেতে, জটলা করে সেলফি তুলতে এবং সস্তা বিনোদনের লক্ষ্যে। সেদিন স্বচক্ষেই দেখলাম, একদল তরুণী জনৈক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিককে দেখে স্টলে ঢুকে তাঁর বইসহ লেখকের সঙ্গে ছবি তুলে বইটি রেখে দিব্যি চলে গেল। এসবের কারণে প্রকৃত বইপ্রেমিকেরা নির্বিঘ্নে দেখে-চেখে-বুঝে বই সংগ্রহ করতে পারেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সব দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বইমেলার চেতনা, গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য বিঘ্নিত না হয়ে পারে না।
ক্রমান্বয়ে বইমেলায় প্রকাশক বাড়ছে, স্টল বাড়ছে এবং বাড়ছে মেলার পরিধিও। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় এই, অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকদের সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে! ফলে সামগ্রিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি। তাই একটি জরিপে জানা যায়, বেরোনোর পথে মেলায় আসা মানুষদের মধ্যে মাত্র ৭ ভাগের হাতে বইয়ের প্যাকেট দেখা যায়! এই জরিপের তথ্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে দুর্ভাবনায় আক্রান্ত করে বৈকি! বাঙালি বই কিনে না, কিন্তু লাইন ধরে সিনেমার টিকিট কিনে—এই সত্য সৈয়দ মুজতবা আলী বহু বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন বোধ করি এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে। তাই বইমেলায় গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকেরা রেস্টুরেন্টে হাজার টাকা খরচ করবে কিন্তু দুই শ টাকা দিয়ে একটি বই কিনবে না! রবীন্দ্রনাথ না কিনুক, গোপাল ভাঁড়ের রঙ্গরসিকতা বই তো কেনা যায়! বিভূতিভূষণের বই না কিনুক, বাল্যশিক্ষা-জাতীয় একটি শিশুতোষ বইও তো কেনা যায় পরিবারের শিশুটির জন্য! কিন্তু না, প্রতিদিন ঘুরেফিরে, আড্ডা মেরে, চা-পানি খেয়ে চলে আসবে! আমি এমন একাধিক পরিবারের কথা জানি, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভোরে সপরিবারে বইমেলায় গিয়ে ঘুরেফিরে, খেয়েদেয়ে রাতে ফিরে এসেছে, কিন্তু একটি বইও কেনেনি। অবশ্য প্রকৃত বিনোদনের দুর্ভিক্ষের এই নগরে-মহানগরে সাধারণের জন্য কীই-বা আছে! তবু বইমেলার এক মাসে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে, তারা সবাই যদি একটি করেও বই কিনত; তবে কোনো প্রকাশকের কাছে কোনো বই থাকত কি না, সন্দেহ!
লেখক: মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

মানবর্দ্ধন পাল

‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মারক বাঙালির চেতনার উৎসব, প্রাণের উৎসব, মননের উৎসব একুশের বইমেলা। আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাধীনতার মর্মমূল ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে এই একুশের বইমেলা। তাই এর ভাবসম্পদ এবং গুরুত্ব অন্য কোনো মেলার মতো নয়। একুশের বইমেলা কেবল বই-বাণিজ্যের মেলা নয়, বইয়ের বিপণনের মেলা নয়, প্রকাশনার বিজ্ঞাপনও নয়—তা মাসব্যাপী বাঙালির মনন-সম্ভারের মহোৎসব। এর সোনালি ফসল আমাদের মেধা-সাম্রাজ্যের ধীমান কবি-লেখকদের চেতনার ফুল। বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উৎসব পয়লা বৈশাখের মতোই একুশের বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষের মহোৎসবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বায়ান্ন বছরে শিক্ষামনস্ক ও সংস্কৃতিমান বাঙালির প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে একুশের বইমেলা। এই বইমেলা ভাষা আন্দোলনের স্মারক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন। একুশের রক্তস্নাত চেতনায় ঋদ্ধ এই বইমেলা। জাতীয় মননের প্রতীক হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা এখন বিশ্ব বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ। তাই প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক-পাঠক বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে আসেন। এ উপলক্ষে আসেন ভিনদেশি বাঙালি কবি-লেখকেরাও—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের। তাঁদের বইও এ দেশের প্রকাশকেরা কেউ কেউ ছাপেন বলে তাঁদের আগমন হয় স্বতঃস্ফূর্ত। তাতে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে একুশের বইমেলা।
আমি মফস্বলের মানুষ, তবে প্রতিবছরই বইমেলায় যাই। করোনাকালের দুই বছর ছাড়া বিশ বছর ধরে বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছি। নিজের বইয়ের প্রকাশনা থাক বা না-থাক, বইমেলায় যাই একাধিক কারণে। নতুন বই সাধ্যমতো কেনা তো আছেই, স্টল ঘুরে দেখার মধ্যেও আছে আনন্দ! বইয়ের বিষয়, লেখক-পরিচিতি, ফ্ল্যাপের বক্তব্য, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, প্রচ্ছদের রং-ডিজাইন, নতুন বইয়ের গন্ধ ইত্যাদি সবই আমাকে আকর্ষণ করে। উপরি পাওনা হিসেবে মিলে যায় অনেক খ্যাতিমান লেখকের দেখাও। এবার যেমন পাওয়া গেল লন্ডনপ্রবাসী খ্যাতিমান এক লেখক দম্পতিকে—সেলিম জাহান ও শামীম আজাদ। একজন জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মধুক্ষরা গদ্যশিল্পী, অন্যজন কবিতায় এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। দেখা হলো কথাশিল্পী মোহিত কামাল এবং আমেরিকাপ্রবাসী আহমদ মাযহারের সঙ্গেও। দেখা হলো নারী-মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক লিনু হকের সঙ্গে। ভারতীয় কবি-বন্ধুদের মধ্যে দেখা হলো কলকাতার কাজল চক্রবর্তী, শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার দিলীপ দাসের সঙ্গে। দেখা ও কথা হলো টিভিতে টক শোর পরিচিত মুখ নজরুল কবীরের সঙ্গে। তা ছাড়া প্রতিবছর বইমেলায় পরিচিত হওয়া যায় অদেখা কিন্তু পাঠসঙ্গী খ্যাতিমান লেখক ও নবীন কবি-লেখকদের সঙ্গে। উপরি পাওনা থাকে দু-চারজনের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের সৌজন্যসংখ্যা। এসবের আকর্ষণই প্রতিবছর আমাকে টেনে নিয়ে যায় বইমেলায়।
একটা সময় গেছে, প্রতি শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দল বেঁধে মেলায় গিয়ে গভীর রাতে ফিরেছি বইয়ের বোঝা নিয়ে। মেলা থেকে আমি তাৎক্ষণিক বই খুব কমই কিনি। টেঁকের জোর কম বলে দেখে, চেখে এবং বুঝে বই কেনাই আমার স্বভাব। সবাই কিংবা অনেকেই হয়তো তেমনিভাবেই কেনেন। তবে আমি ঘনিষ্ঠ ও কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কিনি, যাতে উভয়েই ব্যবহার করতে পারি। এ কারণে প্রথম দিন মেলায় গিয়ে প্যাভিলিয়ন ও বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে শুধু ক্যাটালগ সংগ্রহ করি। বাসায় এসে প্রয়োজন ও পছন্দের বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করি। এরপর মেলার শেষ সপ্তাহে তালিকা ধরে বই কিনি। তাতে অর্থের কিছুটা সাশ্রয়ও হয়। পছন্দের সব বইই তো কেনা হয় না, দাম এবং সংগতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়!
প্রমথ চৌধুরীর সেই আপ্তবাক্যটি সবাই জানেন—বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না। এই একুশ শতকের মূল্যস্ফীতির যুগে বাস করলে তিনি কী বলতেন জানি না! তবে বই কিনে তিনি জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ অর্জনের কথা ভেবেই সে কথা বলেছিলেন। বিত্তবান, ব্যবসায়ী, কোটিপতি, মিল-কারকানার মালিকেরা বই পড়েন না, কেনেনও না। নিরক্ষর দীনদরিদ্র নিম্নবর্গের মানুষেরও বই কেনার সংগতি নেই। এ কথা সেই যুগেও যেমন সত্য ছিল, এখনো তা-ই। এবার একুশে পদকপ্রাপ্ত ক্ষণজন্মা জিয়াউল হক বা পলান সরকার কজনই বা হতে পারেন! তাঁরা তো যুগে-যুগে জন্মগ্রহণ করেন না!
বই কেনেন মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট চাকরিজীবী এবং সচেতন শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের একাংশ। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন আর বই পড়ে না! প্রাইভেট পড়া ও পড়ানোর ইঁদুরদৌড়ে তারা এখন এমন ব্যস্ত থাকে যে ‘আউট বই’ পড়ার তাদের সময় কোথায়! আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বহুবার অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একবার বইমেলায় যাওয়ার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শিক্ষকদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাইনি! অথচ প্রতিবছর দেখেছি, শিক্ষাসফরের নামে বনভোজনে কলেজ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ে তাদের উদ্বাহু নৃত্য!
বইমেলা তো মূলত লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের বৎসরান্তিক মিলনমেলা। প্রকাশকের হাত ধরে লেখকের সৃজনশীল কর্ম পাঠকের কাছে উৎসবের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় বইমেলা। বইমেলা তো বাণিজ্য মেলার মতো বিচিত্র পণ্যের সমাহারে উজ্জ্বল নয় যে সব ধরনের মানুষের সমাগম হবে! পাঠের প্রতি আকর্ষণ, বই সংগ্রহের মোহ এবং জ্ঞানার্জনের স্পৃহা না থাকলে তো বইমেলার প্রতি সবার উৎসাহ থাকার কথা নয়! তবু লক্ষ করা যায়, উপচেপড়া ভিড়ে মেলাপ্রাঙ্গণ ধূলিধূসর ও টালমাটাল! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এত বড় মেলাপ্রাঙ্গণ, তবু যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! কিন্তু ভেতরের সত্য তেমন সুখকর নয়!
অধিকাংশ প্রকাশকই বলে থাকেন, ক্রেতা নেই, বেচাবিক্রি নেই, গ্রাহক নেই। ব্যবসায়ীদের ধর্মই অসন্তুষ্টি। ভালো বেচাবিক্রি হলেও তাঁরা স্বীকার করেন না। বলেন, ‘চলছে মোটামুটি!’ কিন্তু এ কথা সত্যি যে মেলা মানে তো শুধু বিপণিবিতানে গ্রাহকদের কেনাবেচা নয়, দর্শনার্থীদের স্থানও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাংসের চেয়ে আলু বেশি হলে ব্যঞ্জন যেমন স্বাদ হারায়, তেমনি ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি হলেও মেলা মাহাত্ম্য হারায়। সেই দর্শকেরা যদি গ্রন্থদর্শক হতো, তবে আপত্তির তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ দর্শকের মধ্যে তা-ও লক্ষ করা যায় না! বই নেড়েচেড়ে দেখার মধ্যেও যে আনন্দ আছে, তাও অনেক দর্শকের মধ্যে অনুপস্থিত। অনেকে বইমেলায় যায় দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, রেস্টুরেন্টে চা-নাশতা খেতে, জটলা করে সেলফি তুলতে এবং সস্তা বিনোদনের লক্ষ্যে। সেদিন স্বচক্ষেই দেখলাম, একদল তরুণী জনৈক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিককে দেখে স্টলে ঢুকে তাঁর বইসহ লেখকের সঙ্গে ছবি তুলে বইটি রেখে দিব্যি চলে গেল। এসবের কারণে প্রকৃত বইপ্রেমিকেরা নির্বিঘ্নে দেখে-চেখে-বুঝে বই সংগ্রহ করতে পারেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সব দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বইমেলার চেতনা, গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য বিঘ্নিত না হয়ে পারে না।
ক্রমান্বয়ে বইমেলায় প্রকাশক বাড়ছে, স্টল বাড়ছে এবং বাড়ছে মেলার পরিধিও। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় এই, অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকদের সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে! ফলে সামগ্রিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি। তাই একটি জরিপে জানা যায়, বেরোনোর পথে মেলায় আসা মানুষদের মধ্যে মাত্র ৭ ভাগের হাতে বইয়ের প্যাকেট দেখা যায়! এই জরিপের তথ্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে দুর্ভাবনায় আক্রান্ত করে বৈকি! বাঙালি বই কিনে না, কিন্তু লাইন ধরে সিনেমার টিকিট কিনে—এই সত্য সৈয়দ মুজতবা আলী বহু বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন বোধ করি এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে। তাই বইমেলায় গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকেরা রেস্টুরেন্টে হাজার টাকা খরচ করবে কিন্তু দুই শ টাকা দিয়ে একটি বই কিনবে না! রবীন্দ্রনাথ না কিনুক, গোপাল ভাঁড়ের রঙ্গরসিকতা বই তো কেনা যায়! বিভূতিভূষণের বই না কিনুক, বাল্যশিক্ষা-জাতীয় একটি শিশুতোষ বইও তো কেনা যায় পরিবারের শিশুটির জন্য! কিন্তু না, প্রতিদিন ঘুরেফিরে, আড্ডা মেরে, চা-পানি খেয়ে চলে আসবে! আমি এমন একাধিক পরিবারের কথা জানি, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভোরে সপরিবারে বইমেলায় গিয়ে ঘুরেফিরে, খেয়েদেয়ে রাতে ফিরে এসেছে, কিন্তু একটি বইও কেনেনি। অবশ্য প্রকৃত বিনোদনের দুর্ভিক্ষের এই নগরে-মহানগরে সাধারণের জন্য কীই-বা আছে! তবু বইমেলার এক মাসে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে, তারা সবাই যদি একটি করেও বই কিনত; তবে কোনো প্রকাশকের কাছে কোনো বই থাকত কি না, সন্দেহ!
লেখক: মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক

‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মারক বাঙালির চেতনার উৎসব, প্রাণের উৎসব, মননের উৎসব একুশের বইমেলা। আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনা ও স্বাধীনতার মর্মমূল ভাষা আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে এই একুশের বইমেলা। তাই এর ভাবসম্পদ এবং গুরুত্ব অন্য কোনো মেলার মতো নয়। একুশের বইমেলা কেবল বই-বাণিজ্যের মেলা নয়, বইয়ের বিপণনের মেলা নয়, প্রকাশনার বিজ্ঞাপনও নয়—তা মাসব্যাপী বাঙালির মনন-সম্ভারের মহোৎসব। এর সোনালি ফসল আমাদের মেধা-সাম্রাজ্যের ধীমান কবি-লেখকদের চেতনার ফুল। বাঙালির অন্যতম অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার উৎসব পয়লা বৈশাখের মতোই একুশের বইমেলা আজ পরিণত হয়েছে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষের মহোৎসবে।
স্বাধীনতার পর থেকে বায়ান্ন বছরে শিক্ষামনস্ক ও সংস্কৃতিমান বাঙালির প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে একুশের বইমেলা। এই বইমেলা ভাষা আন্দোলনের স্মারক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন। একুশের রক্তস্নাত চেতনায় ঋদ্ধ এই বইমেলা। জাতীয় মননের প্রতীক হিসেবে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বইমেলা এখন বিশ্ব বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ। তাই প্রচুর প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক-পাঠক বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর দেশে আসেন। এ উপলক্ষে আসেন ভিনদেশি বাঙালি কবি-লেখকেরাও—বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের। তাঁদের বইও এ দেশের প্রকাশকেরা কেউ কেউ ছাপেন বলে তাঁদের আগমন হয় স্বতঃস্ফূর্ত। তাতে আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে একুশের বইমেলা।
আমি মফস্বলের মানুষ, তবে প্রতিবছরই বইমেলায় যাই। করোনাকালের দুই বছর ছাড়া বিশ বছর ধরে বইমেলায় নিয়মিত যাচ্ছি। নিজের বইয়ের প্রকাশনা থাক বা না-থাক, বইমেলায় যাই একাধিক কারণে। নতুন বই সাধ্যমতো কেনা তো আছেই, স্টল ঘুরে দেখার মধ্যেও আছে আনন্দ! বইয়ের বিষয়, লেখক-পরিচিতি, ফ্ল্যাপের বক্তব্য, প্রচ্ছদশিল্পীর নাম, প্রচ্ছদের রং-ডিজাইন, নতুন বইয়ের গন্ধ ইত্যাদি সবই আমাকে আকর্ষণ করে। উপরি পাওনা হিসেবে মিলে যায় অনেক খ্যাতিমান লেখকের দেখাও। এবার যেমন পাওয়া গেল লন্ডনপ্রবাসী খ্যাতিমান এক লেখক দম্পতিকে—সেলিম জাহান ও শামীম আজাদ। একজন জাতিসংঘের অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মধুক্ষরা গদ্যশিল্পী, অন্যজন কবিতায় এবার বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত। দেখা হলো কথাশিল্পী মোহিত কামাল এবং আমেরিকাপ্রবাসী আহমদ মাযহারের সঙ্গেও। দেখা হলো নারী-মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক লিনু হকের সঙ্গে। ভারতীয় কবি-বন্ধুদের মধ্যে দেখা হলো কলকাতার কাজল চক্রবর্তী, শান্তিময় মুখোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার দিলীপ দাসের সঙ্গে। দেখা ও কথা হলো টিভিতে টক শোর পরিচিত মুখ নজরুল কবীরের সঙ্গে। তা ছাড়া প্রতিবছর বইমেলায় পরিচিত হওয়া যায় অদেখা কিন্তু পাঠসঙ্গী খ্যাতিমান লেখক ও নবীন কবি-লেখকদের সঙ্গে। উপরি পাওনা থাকে দু-চারজনের সদ্য প্রকাশিত বইয়ের সৌজন্যসংখ্যা। এসবের আকর্ষণই প্রতিবছর আমাকে টেনে নিয়ে যায় বইমেলায়।
একটা সময় গেছে, প্রতি শুক্রবার সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দল বেঁধে মেলায় গিয়ে গভীর রাতে ফিরেছি বইয়ের বোঝা নিয়ে। মেলা থেকে আমি তাৎক্ষণিক বই খুব কমই কিনি। টেঁকের জোর কম বলে দেখে, চেখে এবং বুঝে বই কেনাই আমার স্বভাব। সবাই কিংবা অনেকেই হয়তো তেমনিভাবেই কেনেন। তবে আমি ঘনিষ্ঠ ও কাছের বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে কিনি, যাতে উভয়েই ব্যবহার করতে পারি। এ কারণে প্রথম দিন মেলায় গিয়ে প্যাভিলিয়ন ও বড় প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে শুধু ক্যাটালগ সংগ্রহ করি। বাসায় এসে প্রয়োজন ও পছন্দের বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করি। এরপর মেলার শেষ সপ্তাহে তালিকা ধরে বই কিনি। তাতে অর্থের কিছুটা সাশ্রয়ও হয়। পছন্দের সব বইই তো কেনা হয় না, দাম এবং সংগতির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়!
প্রমথ চৌধুরীর সেই আপ্তবাক্যটি সবাই জানেন—বই কিনে কেউ কোনো দিন দেউলিয়া হয় না। এই একুশ শতকের মূল্যস্ফীতির যুগে বাস করলে তিনি কী বলতেন জানি না! তবে বই কিনে তিনি জ্ঞানের অমূল্য সম্পদ অর্জনের কথা ভেবেই সে কথা বলেছিলেন। বিত্তবান, ব্যবসায়ী, কোটিপতি, মিল-কারকানার মালিকেরা বই পড়েন না, কেনেনও না। নিরক্ষর দীনদরিদ্র নিম্নবর্গের মানুষেরও বই কেনার সংগতি নেই। এ কথা সেই যুগেও যেমন সত্য ছিল, এখনো তা-ই। এবার একুশে পদকপ্রাপ্ত ক্ষণজন্মা জিয়াউল হক বা পলান সরকার কজনই বা হতে পারেন! তাঁরা তো যুগে-যুগে জন্মগ্রহণ করেন না!
বই কেনেন মূলত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, ছোট চাকরিজীবী এবং সচেতন শিক্ষক ও ছাত্রসমাজের একাংশ। অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এখন আর বই পড়ে না! প্রাইভেট পড়া ও পড়ানোর ইঁদুরদৌড়ে তারা এখন এমন ব্যস্ত থাকে যে ‘আউট বই’ পড়ার তাদের সময় কোথায়! আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বহুবার অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একবার বইমেলায় যাওয়ার। কিন্তু কোনো ফল হয়নি। শিক্ষকদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাইনি! অথচ প্রতিবছর দেখেছি, শিক্ষাসফরের নামে বনভোজনে কলেজ ফান্ডের অর্থ ব্যয়ে তাদের উদ্বাহু নৃত্য!
বইমেলা তো মূলত লেখক-পাঠক ও প্রকাশকদের বৎসরান্তিক মিলনমেলা। প্রকাশকের হাত ধরে লেখকের সৃজনশীল কর্ম পাঠকের কাছে উৎসবের মাধ্যমে পৌঁছে দেয় বইমেলা। বইমেলা তো বাণিজ্য মেলার মতো বিচিত্র পণ্যের সমাহারে উজ্জ্বল নয় যে সব ধরনের মানুষের সমাগম হবে! পাঠের প্রতি আকর্ষণ, বই সংগ্রহের মোহ এবং জ্ঞানার্জনের স্পৃহা না থাকলে তো বইমেলার প্রতি সবার উৎসাহ থাকার কথা নয়! তবু লক্ষ করা যায়, উপচেপড়া ভিড়ে মেলাপ্রাঙ্গণ ধূলিধূসর ও টালমাটাল! সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এত বড় মেলাপ্রাঙ্গণ, তবু যেন ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই! কিন্তু ভেতরের সত্য তেমন সুখকর নয়!
অধিকাংশ প্রকাশকই বলে থাকেন, ক্রেতা নেই, বেচাবিক্রি নেই, গ্রাহক নেই। ব্যবসায়ীদের ধর্মই অসন্তুষ্টি। ভালো বেচাবিক্রি হলেও তাঁরা স্বীকার করেন না। বলেন, ‘চলছে মোটামুটি!’ কিন্তু এ কথা সত্যি যে মেলা মানে তো শুধু বিপণিবিতানে গ্রাহকদের কেনাবেচা নয়, দর্শনার্থীদের স্থানও সেখানে গুরুত্বপূর্ণ। তবে মাংসের চেয়ে আলু বেশি হলে ব্যঞ্জন যেমন স্বাদ হারায়, তেমনি ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি হলেও মেলা মাহাত্ম্য হারায়। সেই দর্শকেরা যদি গ্রন্থদর্শক হতো, তবে আপত্তির তেমন কিছু ছিল না। কিন্তু অধিকাংশ দর্শকের মধ্যে তা-ও লক্ষ করা যায় না! বই নেড়েচেড়ে দেখার মধ্যেও যে আনন্দ আছে, তাও অনেক দর্শকের মধ্যে অনুপস্থিত। অনেকে বইমেলায় যায় দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করতে, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে, রেস্টুরেন্টে চা-নাশতা খেতে, জটলা করে সেলফি তুলতে এবং সস্তা বিনোদনের লক্ষ্যে। সেদিন স্বচক্ষেই দেখলাম, একদল তরুণী জনৈক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিককে দেখে স্টলে ঢুকে তাঁর বইসহ লেখকের সঙ্গে ছবি তুলে বইটি রেখে দিব্যি চলে গেল। এসবের কারণে প্রকৃত বইপ্রেমিকেরা নির্বিঘ্নে দেখে-চেখে-বুঝে বই সংগ্রহ করতে পারেন না। অনাকাঙ্ক্ষিত সেই সব দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বইমেলার চেতনা, গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য বিঘ্নিত না হয়ে পারে না।
ক্রমান্বয়ে বইমেলায় প্রকাশক বাড়ছে, স্টল বাড়ছে এবং বাড়ছে মেলার পরিধিও। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় এই, অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকদের সংখ্যাও বাড়ছে জ্যামিতিক হারে! ফলে সামগ্রিকভাবে বই বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়েনি। তাই একটি জরিপে জানা যায়, বেরোনোর পথে মেলায় আসা মানুষদের মধ্যে মাত্র ৭ ভাগের হাতে বইয়ের প্যাকেট দেখা যায়! এই জরিপের তথ্য শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে দুর্ভাবনায় আক্রান্ত করে বৈকি! বাঙালি বই কিনে না, কিন্তু লাইন ধরে সিনেমার টিকিট কিনে—এই সত্য সৈয়দ মুজতবা আলী বহু বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। সেই ট্র্যাডিশন বোধ করি এখনো ধারাবাহিকভাবে চলছে। তাই বইমেলায় গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দর্শকেরা রেস্টুরেন্টে হাজার টাকা খরচ করবে কিন্তু দুই শ টাকা দিয়ে একটি বই কিনবে না! রবীন্দ্রনাথ না কিনুক, গোপাল ভাঁড়ের রঙ্গরসিকতা বই তো কেনা যায়! বিভূতিভূষণের বই না কিনুক, বাল্যশিক্ষা-জাতীয় একটি শিশুতোষ বইও তো কেনা যায় পরিবারের শিশুটির জন্য! কিন্তু না, প্রতিদিন ঘুরেফিরে, আড্ডা মেরে, চা-পানি খেয়ে চলে আসবে! আমি এমন একাধিক পরিবারের কথা জানি, যারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভোরে সপরিবারে বইমেলায় গিয়ে ঘুরেফিরে, খেয়েদেয়ে রাতে ফিরে এসেছে, কিন্তু একটি বইও কেনেনি। অবশ্য প্রকৃত বিনোদনের দুর্ভিক্ষের এই নগরে-মহানগরে সাধারণের জন্য কীই-বা আছে! তবু বইমেলার এক মাসে যে পরিমাণ মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে, তারা সবাই যদি একটি করেও বই কিনত; তবে কোনো প্রকাশকের কাছে কোনো বই থাকত কি না, সন্দেহ!
লেখক: মানবর্দ্ধন পাল, গ্রন্থকার, অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা
১৪ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা
১৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা
১৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


‘ভাঙল মিলনমেলা ভাঙল।’ ফেব্রুয়ারি মাসের আটাশ দিনের একুশের বইমেলা এবার একত্রিশ দিনে শেষ হলো। লিপইয়ারের ও প্রকাশকদের আবেদনের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে বেড়েছে মোট তিন দিন। পাঠক ও প্রকাশকেরা সানন্দে উপভোগ করেছেন বাড়তি চব্বিশ প্রহর। বায়ান্নর ভাষা
১৪ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫