Ajker Patrika

‘আয়হীন মানুষের কষ্ট বোঝেন?’

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ১৯
‘আয়হীন মানুষের কষ্ট বোঝেন?’

‘আমরা কামলাও দিতে পারি না, সংসারও চালাতে পারি না। আমরা হাসিমুখে কথা বলি। কিন্তু ভেতরের কান্না কেউ দেখে না। আয়হীন একজন মানুষের কষ্ট বোঝেন?’ দীর্ঘ ২৭ বছর বিনা বেতনে শিক্ষকতা করা মাগুন্তিনগর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা জালাল উদ্দিন কথাগুলো বলছিলেন।

জালাল উদ্দিনের মতোই কষ্ট উপজেলার ৩৪টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের। সরকারি বেতনের আশায় তাঁরা পার করছেন মাসের পর মাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাগুন্তিনগর স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক মকবুল হোসেন বন্ধের দিন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বিদ্যালয় ছুটির আগে পরে যেখানে যতটুকু কাজ জোটে তাই করে সংসার চালান তিনি। অভাবের সংসারে রোগের ঝাপটায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক নূর মোহাম্মদ। অবসর জীবনের কাছাকাছি পৌঁছা শামসুজ্জামান পরের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেন।

এঁদের মতো চাপাইদ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ইমান আলী, লাউফুলা মাদ্রাসার আবুল কালাম আজাদ, নরকোনা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক বেলায়েত হোসেন, দড়িহাতিল মাদ্রাসার ইব্রাহিম খলিল, জয়নাতলী মাদ্রাসার মো. আবু সাঈদ, হাসিল ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক আবুল কালামসহ অনেক শিক্ষকের অবস্থাই বর্তমানে এমন।

দেশের গ্রামীণ জনপদের অবহেলিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার আওতায় আনতে ১৯৮৪ সালে ২৬ হাজার স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ৩৪টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে।

শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আনুমানিক সাত হাজার শিক্ষার্থী জ্ঞানার্জন করছে। তারা বিনা মূল্যে বই পাচ্ছে। উপবৃত্তি পাচ্ছে।

কিন্তু শিক্ষকেরা পাচ্ছেন না কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা। অথচ দুই বেলা ভাত খেয়ে না খেয়ে সকাল-সন্ধ্যা বিদ্যালয় সচল রাখছেন তাঁরা।

এসব শিক্ষকেরা প্রতিদিন জ্ঞান বিলাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু করতে পারছেন না।

সংসারের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা বলতে গিয়ে নির্বাক হয়ে যান আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের কষ্টের কথা বলার ভাষা আমার মুখে নাই।’

উপজেলা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাওলানা আবু তাহের বলেন, ‘১৯৭৮ সালের অর্ডিনেন্স অনুসারে এবং শিক্ষাবোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের বিধি মতে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ফলে আমাদের শিক্ষার্থীরা সরকারি বই ও উপবৃত্তি পাচ্ছে। সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক সত্ত্বেও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। এতে শিক্ষকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই অবসরে বা মারা গেছেন।’

সভাপতি আরও বলেন, ‘সরকার ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করলেও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকেরা অবহেলার শিকার হচ্ছেন।’ মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের সব শর্ত পূরণ করে পাঠদান চালু রেখেছে তাই শিগগির স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণের দাবি জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫) ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কাঁপল ইসরায়েল, তেহরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত