Ajker Patrika

সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে

আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ০৭: ৫৭
সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে

এম এম আকাশ অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক তিনি। তিনি ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তিনি। বাজেটের আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা। 

আজকের পত্রিকা: বাজেট পেশের আগে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হলেও, সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হয় না। এটা কতটুকু যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: একটি গণতান্ত্রিক দেশে বাজেট সব মানুষকে স্পর্শ করার কথা। এ জন্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করাই গণতান্ত্রিক রীতি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবস্থাটাই হলো কেন্দ্রীভূত আমলাতান্ত্রিক। সুতরাং যত দিন পর্যন্ত বাজেট প্রণয়নের নীতিমালার পরিবর্তন করা না হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এটা গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট হবে না। এ জন্য একসময় সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জেলা বাজেটের কথা বলেছিলেন। সেটা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। বেসরকারি একটি সংস্থাও কতগুলো দাবি তুলেছিল, সেটাও কার্যকর হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন সম্প্রতি দাবি করেছেন, বাজেট দুই ভাগে ভাগ করে অর্ধেক উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দিতে হবে। এভাবে যদি বাজেট করা হয়, তাহলে জেলা, উপজেলাসহ সর্বত্র বাজেট নিয়ে আলোচনা বিস্তৃত হবে এবং অংশগ্রহণমূলক বাজেট প্রণীত হবে।

আজকের পত্রিকা: বাজেট সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। সরকার অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখলেও সাধারণ জনগণের স্বার্থ দেখে কী? 
এম এম আকাশ: এটা নির্ভর করে সরকার কাদের দ্বারা গঠিত, মন্ত্রিপরিষদ, সংসদ সংসদ এবং জাতীয় সংসদে কারা প্রভাব বিস্তার করে আছেন, সরকারের মূল নীতিগুলো নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কারা বেশি ভূমিকা ও প্রভাব রাখেন— ইত্যাদির ওপর। আমরা জানি, বাজেট প্রণয়নের জন্য যে সংসদে আলোচনা হয়, সেই সংসদের ৬২ শতাংশের বেশি হলেন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর লোক। আমরা জানি, ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে নিজেদের অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখানোর ক্ষেত্রে পরিণত করেছেন। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে কমই ঘটে। সে কারণে বাজেটে ক্ষমতাকাঠামোর প্রভাবটাই বড় হয়ে ওঠে। আর ক্ষমতাকাঠামোয় এখন অসৎ ব্যবসায়ী, অসৎ রাজনীতিবিদ এবং অসৎ আমলাদের সম্মিলন ঘটেছে। বাজেটে তাঁদের প্রভাবের কারণে জনগণের প্রভাব কম দেখা যায়। 

আজকের পত্রিকা: এবারের বাজেটে আপনি কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
এম এম আকাশ: এবারের বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি। কারণ ভ্যাট যদি আরও বসানো হয় এবং ভর্তুকি যদি কমানো হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি সুদের হার ও ডলারের বিনিময় হার বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। কিন্তু এগুলো আবার না করলে আইএমএফের সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করা যাবে না। আর সেটা না করা গেলে আইএমএফের ঋণও পাওয়া যাবে না। সুতরাং একদিকে সম্পদের ঘাটতি তৈরি হবে, অন্যদিকে অপ্রিয় সংস্কার না করে উপায় থাকবে না। এসব করলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এ রকম ত্রিশঙ্কু অবস্থার মধ্যে বাজেট পড়ে গেছে। 

আজকের পত্রিকা: এবারও ঋণ করে বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। এটা কতটা যৌক্তিক?
এম এম আকাশ: সরকারের যুক্তি হলো, তারা তো জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি ঋণ করছে না। যেহেতু ৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি হচ্ছে না, সেহেতু তাদের মতে সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণের মূল পরিমাণ তো ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। আগে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার মতো ছিল, সেটা এখন ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো হয়ে যাচ্ছে। বাজেটের বিরাট একটা অংশ ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে। ফলে আসলে শেষ পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়িত হবে না। এই পরিমাণ ঋণ সংগ্রহ করতে গেলে প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ পাবে না। আর প্রাইভেট সেক্টর থেকে ঋণ না পেলে বাজেটে যেসব প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছিল, সেই টার্গেট পূরণ করা সম্ভব হবে না। 

আজকের পত্রিকা: বাজেট যদি বাস্তবায়ন না করা যায়, তাহলে কী হবে?
এম এম আকাশ: বাজেট যে একেবারেই বাস্তবায়ন করা যাবে না, তা তো না। এর আগে আমরা সাধারণত ৮৫ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। ১৫ শতাংশ করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার বেশি শতাংশ অবাস্তবায়িত হবে।

আজকের পত্রিকা: দেশে এমনিতেই ডলার-সংকট, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকসহ নানা সংকট চলছে। এবারের বাজেটে কি এসব নিয়ে কোনো সুখবর থাকবে?
এম এম আকাশ: অনেকগুলো সংস্কার চালু হয়েছে। এই সংস্কারগুলো তো অপ্রিয় সংস্কার। এগুলো করলে মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। সেই চাপ রক্ষা করার জন্য এবং মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য কতগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন সরকার যদি পারে তাহলে শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। গ্রামাঞ্চলে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, বিশেষ করে চরম দরিদ্র ও কৃষকদের জন্য বরাদ্দ বা ভর্তুকি বাড়ানো গেলে এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলে, একটা সুখবর হতে পারে। আর যদি দরিদ্র মানুষের কাছে বাজেটের বোঝা চাপে এবং কোনো ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে সেটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হবে।
আজকের পত্রিকা: কয়েক বছরের বাজেট পর্যালোচনা করে কোনো দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা চোখে পড়েছে আপনার?

এম এম আকাশ: আগে যেসব প্রশ্ন করেছেন, সেখানে বাজেটের দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতার অনেক কথা বলা হয়েছে। মূলত বাজেট অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, সেটা একটা বড় দুর্বলতা। দ্বিতীয়ত, কর সংগ্রহ করার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, তাতে অপ্রত্যক্ষ করই বেশি। এ কারণে সাধারণ মানুষের কাছে করের বোঝা বাড়ছে। কিন্তু ধনী বা সক্ষম লোকের কাছ থেকে কর আদায়ের যে নীতি হওয়া উচিত, সেটা সরকার সেভাবে অনুসরণ করছে না। তার কারণ হচ্ছে, বাজেটকাঠামোর মধ্যে শাসকশ্রেণি, বিশেষ করে দুর্নীতিপরায়ণ আমলা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের আধিপত্য বেশি।

আসলে সুশাসনের সংকট থেকে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। সুশাসন কার্যকর করার জন্য যেসব অপ্রিয় সংস্কার করতে হয়, যেগুলোর ক্ষেত্রে আইএমএফ কিছুটা নির্দেশ দেয়, কিছুটা অর্থনীতিবিদেরা পরামর্শ দেন এবং কিছুটা সরকার নিজেই নড়েচড়ে বসে করে; সেগুলো যখন করতে যায়, তখন বাজেটে এসবের চাপ বেড়ে যায়। সংকোচনমূলক নীতির চাপটা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। স্থিতিশীলতা হয়তো বাড়ে, কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান কমে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যে ধরনের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা যখন হয় না, তখন অন্য দিক দিয়ে চাপটা বেড়ে যায়। এ কারণে বাজেটকে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’ বলা উচিত। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। 

আজকের পত্রিকা: সমাধানের উপায় কী?
এম এম আকাশ: এসব স্বল্প মেয়াদে সমাধান করা সম্ভব নয়। এগুলো হলো কাঠামোগত সমস্যা। এর মধ্যে কতগুলো ব্যাপার আছে, যেগুলো দীর্ঘ মেয়াদে সমাধান করতে হবে। কিন্তু বাজেটে করা যেতে পারে। যেমন খেলাপি ঋণ, টাকা পাচার, ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হারের সঙ্গে অফিশিয়াল বিনিময় হারের পার্থক্য কমানোর ব্যাপারটা শুরু করা যেতে পারে।

আজকের পত্রিকা: সেটা কীভাবে?
এম এম আকাশ: এগুলো সমাধানের ব্যাপারে অনেকেই জানে এবং সমাধানের পদক্ষেপগুলোও জানে। প্রাথমিকভাবে এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

আজকের পত্রিকা: বাজেটকে মানুষের সার্বিক কল্যাণমুখী করার জন্য আপনার পরামর্শ কী?
এম এম আকাশ: দুটি উদ্যোগ প্রধান। বাজেট মানে সরকারের আয় ও ব্যয়ের হিসাব। প্রথমত, সরকারকে ব্যয় করতে হবে দুর্নীতিহীনভাবে, দক্ষভাবে। মানে এক টাকার ব্যয় এক টাকায় করতে হবে। আর সেই ব্যয়টা করতে হবে কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা—এসব খাতে। দ্বিতীয়ত, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে ভৌত অবকাঠামোয়, এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে সামাজিক অবকাঠামোয় আর এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় করতে হবে উৎপাদনশীল খাতে। আর সেই ব্যয়গুলো যাতে উৎপাদনশীল শ্রেণির হাতে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয়ত, অনুৎপাদনশীল শ্রেণির লোকেরা যাতে লিকেজের মাধ্যমে এবং সিস্টেম লসের মাধ্যমে টাকা নিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এসব হলো ব্যয়ের খাত নিয়ে আমার সুপারিশ।

সক্ষম ধনী ব্যক্তিদের করজালের মধ্যে নিয়ে এসে আয় বাড়াতে হবে। আর ভ্যাটকে ইলেকট্রনিক সিস্টেমের মধ্যে আনতে হবে; যাতে কেউ ফাঁকি দিতে না পারে। আমি অবশ্যই মুদির দোকানির ক্ষেত্রে কথাটি বলছি না। অবশ্যই বড় বড় ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে কথাটি বলছি। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে সম্পদ সংগ্রহের সময় বা বৈদেশিক বিনিয়োগের সময় চুক্তিগুলো জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে হয়, সেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার জন্য যাতে উপযুক্ত দর-কষাকষি হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। 

আজকের পত্রিকা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। 
এম এম আকাশ: আপনাকেও ধন্যবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত