Ajker Patrika

বাঁধ মেরামতে এলাকায় স্বস্তি

অভিজিৎ সাহা, নালিতাবাড়ী
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৪: ৪৩
বাঁধ মেরামতে এলাকায় স্বস্তি

‘আকাশে মেঘ হলেই চোখে আন্ধার দেহি। কহন আবার ঢলের পানি শেষ সম্বলটুকুও ভাসাইয়া নেয়। বাপ-দাদার ভিটেমাটির প্রায় ১৫ শতাংশই নদী ভাঙনে চইলা গেছে। অহন থাকার ঘরটায় বউ-পুলাপান লইয়া কোনমতে বাইচ্চা আছি। কয়দিন আগেও ঘরের লগেই ভাইঙ্গা গেছে। আবার ভাঙন হইলে তো আমি নিঃস্ব হইয়া যামু। তয় পৌরসভার এই বান্ধনে অহন আশার আলো দেখতাছি।’ কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকার দিনমজুর শাহজাহান মিয়া।

গত সপ্তাহের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরের ৪টি স্থানে ভোগাই নদীর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানিবন্দী হয়ে পড়েছিলেন প্রায় ৭০০ পরিবার। এরই মধ্যে শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকার ভাঙন অংশ মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে নালিতাবাড়ী পৌরসভা। এতে আশার আলো দেখছেন ভাঙন এলাকার বাসিন্দারা। গত বুধবার বিকেলে সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান ও পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক।

গত শুক্রবার উত্তর গড়কান্দা এলাকায় ৪টি স্থানে ১৩০ মিটার বাঁধ ভেঙে ৩টি মহল্লার প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পাশেই আরও ৬০ মিটার বাঁধের সংস্কারকাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, পৌরসভা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকায় ভোগাই নদীর ৩০০ মিটার বাঁধ রয়েছে। একাংশে পৌরসভা ও অন্য অংশে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর সংস্কার করে। সম্প্রতি পৌরসভার উদ্যোগে ৩০ মিটার অংশে বালুর বস্তা ফেলা হয়। কিন্তু গত শুক্রবার উজান থেকে পাহাড়ি ঢলে ফের বাঁধের দুটি অংশে ১৩০ মিটার বাঁধ ভেঙে যায়। এ সময় ভাঙন অংশ দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে উত্তর গড়কান্দা, গড়কান্দা, কালীনগর ও গুনারপাড় মহল্লায় প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়। এতে পরিবারগুলো দুর্ভোগে পড়ে। নদীতে ফের ঢল এলে ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশের দুশ্চিন্তায় এলাকার মানুষ। তার আগেই গত বুধবার বিকেলে পৌরসভার উদ্যোগে ভাঙন অংশের ৫০ মিটার ও পাউবির উদ্যোগে ৮০ মিটার বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করেছে।

উত্তর গড়কান্দা এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঢলের পানিতে প্রতিবছর এইখান দিয়ে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে শত শত মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। মাটির বাঁধ দিয়ে হয়ত এই বছর পানি ঠেকানো যাবে। কিন্ত পাঁকা ব্লক করে বাঁধনির্মাণ করা হলে এলাকাবাসীর দুশ্চিন্তা স্থায়ী ভাবে দূর হতো।’

চাতাল শ্রমিল আয়েশা বেগম বলেন, ‘বাঁধ ভাইঙা ঘরে পানি উঠছিলো কয়েক দিন আগেই। পরে প্রাইমারি স্কুলের বারান্দায় আছিলাম তিন দিন। আবার ঢলের পানি আইলে হয়তো ঘরটাই ভাসায়া নিত। বাঁধ দেওয়ায় বিরাট উপকার অইলো।’

পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদুল আলম তালুকদার বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে পৌরশহরের ৪টি স্থানে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্রায় ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। আবারও ঢল এলে যেন মানুষের ক্ষতি না হয় সে জন্য শহরের উত্তর গড়কান্দা এলাকায় পৌরসভার উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে নিচপাড়া এলাকার ভাঙন অংশে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’

পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘দুটি অংশে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। ঢলে মানুষের বাড়িঘরের ক্ষতির পাশাপাশি রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়। যদি নদীতে ফের ঢল নামে তাহলে আবার মানুষ কষ্টে পড়বে। মানুষের কথা চিন্তা করেই দ্রুত কাজ শুরু করা হয়েছে। পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে বাকি ভাঙন অংশগুলোয়ও বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পানির তোরে বেশ কয়েকটি রাস্তা ডুবে গিয়েছিল। এতে মানুষের চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। পৌরসভার উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ করায় সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। তবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত