Ajker Patrika

মধুমঞ্জরির মায়াবী মুগ্ধতা

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ০৮: ৫৫
মধুমঞ্জরির মায়াবী মুগ্ধতা

জোছনা রাতে ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-গোলাপি-লাল ফুল। তারার মতো মিটিমিটি জ্বলছে যেন। গাছের দিকে তাকালেই চোখে ভ্রম তৈরি হবে, এ আবার কোন ‘মরীচিকা’। ডালের আগায় থোকায় থোকায় ঝুলে আছে ফুল, নাকি তারা!

কই! দিনের বেলা তো কিছুই ছিল না!

দিনের আলো হারিয়ে গেলেই ফুটতে শুরু করে এ ফুল। নামটাও ভারি মিষ্টি, মধুমঞ্জরি। ডাকা হয় মধুমঞ্জরিলতা নামেও। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম কী আর মিষ্টি না হয়ে পারে! কবিগুরু লিখেছিলেন—

‘প্রত্যাশী হয়ে ছিনু এতকাল ধরি,

বসন্তে আজ দুয়ারে, আ মরি মরি,

ফুলমাধুরীর অঞ্জলি দিল ভরি

মধুমঞ্জরিলতা।’

সন্ধ্যায় ফোটার পর রাত যত বাড়ে তত বেশি সুবাস ছড়ায় মধুমঞ্জরি। রাতে অনেক ফুলই ফোটে। কোনো ফুল এত অসাধারণ সুন্দর, স্নিগ্ধ ও সুগন্ধে পরিপূর্ণ হতে পারে, ‍‍মধুমঞ্জরি না দেখলে অগোচরেই থেকে যাবে।

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অনেকটা অযত্নে–অবহেলায় জন্মেও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে মধুমঞ্জরি। শৌখিনদের বাড়ির ছাদ, ব্যালকনি আর ছোট্ট বাগানেও দেখা মেলে এ ফুলের। রঙের বৈচিত্র্য, স্নিগ্ধময় সুবাস আর প্রস্ফুটন প্রাচুর্যের জন্য পুষ্পপ্রেমীরা প্রিয় ফুলের তালিকায় ঠাঁই দিয়েছেন মধুমঞ্জরিকে। এই গাছের চারা বাণিজ্যিকভাবেও নার্সারিতে বিক্রি হয়।

সরেজমিনে ঘিওরের কাউটিয়া গ্রামে প্রাকৃতিক কৃষিকেন্দ্র ও প্রাণবৈচিত্র্য খামারে দেখা যায়, মধুমঞ্জরির মায়াবী মুগ্ধতা। জ্যোৎস্নার আলোয় প্রবেশমুখের তোরণজুড়ে ফুটে থাকা মধুমঞ্জরিলতা দেখে মনে হয়, আকাশের মিটিমিটি তারারা যেন নেমে এসেছে। প্রাকৃতিক কৃষিকেন্দ্রের পরিচালক দেলোয়ার জাহান বলেন, দিনের বেলায় এ ফুলের এক রূপ, সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে অন্য রূপ। সন্ধ্যার বাতাসে অদ্ভুত মিষ্টি সুবাস ছড়ায়। মৌমাছি, প্রজাপতি এবং ছোট ছোট পাখিরা দিনের বেলায় এই ফুলের ওপরে ঘুরে বেড়ায়। বাড়ি বা বাগানের সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দেয় মধুমঞ্জরিলতা।

ঘিওর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ বিপুল হোসেন বলেন, নামের ভিন্নতা রয়েছে এ ফুলের। মধুমালতী, মাধুরীলতা, হরগৌরী ও লাল চামেলি নামেও ডাকা হয়। মধুমঞ্জরিলতার ইংরেজি নাম Chinese honeysuckle, Rangoon creeper। বৈজ্ঞানিক নাম Quisqualis indica। আদি নিবাস মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। প্রায় ৭০ ফুট পর্যন্ত বেয়ে উঠতে পারে এই ফুলের লতা।

ঘিওর সদরের কলেজশিক্ষক দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ‘প্রায় এক দশক ধরে আমার বাড়ির সামনে সৌন্দর্যবর্ধন করছে মধুমঞ্জরিলতা। ফল দেখতে কামরাঙার মতো। সাধারণত কাটিং করে বা গোড়া এবং শিকড় থেকে যে লতা গজায় তা কেটে মাটিতে পুঁতলে চারা হয়।’

স্থানীয় সাধনা ঔষধালয়ের চিকিৎসক উত্তম পালিত বলেন, মধুমঞ্জরির পাতা চর্মরোগ ও মাথার যন্ত্রণার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পুরোনো বাত ও হাঁপানি উপশম করে। বীজ কৃমি, ডায়রিয়া ও জ্বর নিরাময় করে। এর কাণ্ড সর্দি, কাশি এবং ঠান্ডাজনিত রোগে ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে মার্শাল ল হবে: নাগরিক ঐক্যের মান্না

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত