Ajker Patrika

তিস্তার ভাঙনে যাযাবর জীবনে নুরী বেগম

মাসুদ পারভেজ, ডিমলা (নীলফামারী)
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১৬: ০৬
তিস্তার ভাঙনে যাযাবর জীবনে নুরী বেগম

কোথাও কম ভাঙছে, আবার কোথাও বেশি, কিন্তু ভাঙন থেমে নেই। সকাল-সন্ধ্যা-রাত নদীভাঙন তাড়িয়ে বেড়ায় তিস্তা তীরের মানুষকে। পানি বাড়লেই বাঁধ ভাঙবে, এমন আশঙ্কা নীলফামারীর ডিমলা তিস্তা নদী পারের মানুষের।

তাঁদেরই একজন নুরী বেগম (৫৫)। উপজেলার খালিশা চা পানি ইউনিয়নের সতিঘাট চরে বড় উঠানের বাড়ি ছিল তাঁর। ছিল ৩০ বিঘা ফসলি জমিও। কিন্তু নদী সব কেড়ে নিয়েছে। নিঃস্ব হয়ে ৪ সন্তান নিয়ে তিনি এখন পথে বসেছেন।

নুরী বেগম বলেন, ‘১৭ বার আমার বসতবাড়ি নদী ভেঙেছে। তিস্তা সউগে কাড়ি নিচে, যাযাবরের মতোন হামার জেবন। আইজ এইঠে তো কাইল ওইঠে। এবারও পুব ঘরটা কোনবাদিন তিস্তা খায়ছে। হামাগো কোরবানির ঈদ বানের জলোত।’

জানা গেছে, উপজেলায় ৪০ কিলোমিটার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। নদীভাঙনে যেন স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছেন নদীর তীরের মানুষেরা। কোনোমতে জীবন চলছে তাঁদের ঝুপড়ি ঘর, বেড়িবাঁধ বা অন্যের আশ্রয়ে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভাঙন রোধে বাঁধ সংস্কার, নদী খনন ও পরিত্যক্ত সেচনালা খননের মহাপরিকল্পনা পর্যবেক্ষণ চলছে।

ডাক্তারপাড়া গ্রামের পল্লি চিকিৎসক সদর উদ্দিন বলেন, ‘নদীর পার থেকে ১ কিলোমিটার দূরে সতিঘাটে ছিল আমাদের গ্রাম। প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের বসবাস ছিল সেখানে। ছিল একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১০ সালের বন্যায় তিস্তায় তলিয়ে যায় পুরো গ্রাম। নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছি।’

পূর্ব বাইশপুকুর গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘ধরেন একপ্রকার নদীর মধ্যেই আছি। নদীর মধ্যেই বাড়ি। এই যে এই নদীটা, প্রায়ই তো বাড়ির কাছাকাছি। গত ১ সপ্তাহে ১০ ফুট ভেঙে এখন ৩ হাতের দূরত্ব। এখানে আমগাছ, সুপারিগাছ ছিল। সব নদীর পেটে। বাঁশঝাড়টা নদীতে পড়লে আর থাকা যাবে না।’

ছোটখাতা গ্রামের হানিফ আলী বলেন, ‘দুই দিন আগেও আমার বসতভিটা ও ফসলি জমি ছিল, আজ সব নদীতে বিলীন। চারদিকে পানি আর পানি। এখন পরিবার নিয়া কোথায় যাব, কই থাকব তার জায়গা নেই। দুদিন পরেই কোরবানির ঈদ, শিশুসন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি।’

খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান বলেন, ‘নদীভাঙন প্রতিরোধে বড় ধরনের কোনো প্রকল্পের বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এসব সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা আমাদের অস্তিত্ব নিয়েও শঙ্কায় আছি।’

নদীভাঙন নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’ সংগ্রাম পরিষদের নেতা সোহেল হাসান বলেন, নদীতে ড্রেজিং ও বাঁধ না দেওয়ার কারণে এখানে ভাঙন থামছে না। এ ছাড়া বোমা মেশিন দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীর তলদেশ উঁচু-নিচু হয়ে মূল নদীতে চর জেগে উঠছে। এতে পানির প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হয়ে পার ভাঙছে।

তিনি আরও বলেন, নদীভাঙা মানুষকে শুধুই আশা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। শত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এখানে নদী ভাঙছে ৷ নদীর ভাঙন ঠেকাতে আমরা বিভিন্ন সময়ে নানা কর্মসূচি পালন করেছি। নদীভাঙনে বেড়িবাঁধের পাশে, রাস্তার দ্বারে মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুতই যদি ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে বহু বছরে গড়ে ওঠা একটি জনপদ চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘালয়ে হানিমুনের সময় ভাড়াটে খুনি দিয়ে স্বামীকে হত্যা, উত্তর প্রদেশে নববধূর আত্মসমর্পণ

ভিকারুননিসার ছাত্রী মেয়েকে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবা, ডুবে প্রাণ গেল দুজনেরই

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় খুন—কীভাবে এক নববধূ হয়ে উঠলেন হত্যাকারী

কানাডার লেকে বোট উল্টে বাংলাদেশের পাইলট ও গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর মৃত্যু

হাসিনার মতো মাফিয়াকে বিতাড়িত করেছি, এখন আমরাই বড় মাফিয়া: এনসিপি নেতা জুবাইরুল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত