Ajker Patrika

সংরক্ষিত বনের গাছ লুট

রুদ্র রুহান ও খায়রুল ইসলাম আকাশ, বরগুনা
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৪: ০৮
সংরক্ষিত বনের গাছ লুট

বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কের সংরক্ষিত বনভূমির গাছ কেটে বিক্রি করছে কয়েকটি চক্র। স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে একটি চক্র টেংরাগিরি ইকোপার্কের গাছ কেটে প্রকাশ্যে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বন বিভাগ অফিস-সংলগ্ন খাল দিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেও বন বিভাগ নির্বিকার। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, টেংরাগিরির সবুজ বনভূমি রক্ষায় তৎপর তাঁরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এভাবে প্রতিনিয়ত টেংরাগিরি বনাঞ্চলের গাছ কাটছে কয়েকটি সক্রিয় চক্র। এতে ওই বনের গাছ উজাড় হলেও সংশ্লিষ্ট এলাকার বন বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

টেংরাগিরি বনাঞ্চল-সংলগ্ন কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দিনের বেলায় বনে ঢুকে গাছ কেটে রাখে পাচারকারীরা। পরে রাতে সেই কাঠ ইঞ্জিনচালিত বোটে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় তারা। তবে সম্প্রতি কাঠ পাচারকারী চক্রের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে, দিনদুপুরে বন বিভাগের অফিস-সংলগ্ন খাল দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কাঠ বোঝাই করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এসব ট্রলারের বেশির ভাগই কলাপাড়া উপজেলার। তবে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জেলেরা কাঠ পাচারের সঙ্গে জড়িত।

ওই এলাকার বেশ কিছু জেলে জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিদিন রাতেই তাঁরা টেংরাগিরি থেকে কাটা গাছ বোঝাই নৌকা যেতে দেখতে পান। রাত ১০টার পর এসব নৌকা গাছ নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে যায়। নিশানবাড়িয়া এলাকার জেলে জালাল মিয়া বলেন, ‘গত শুক্রবার রাতেও আমি একটি ট্রলারে গাছ বোঝাই করে নিয়ে যেতে দেখেছি। ট্রলারটিতে টর্চ মেরে দেখি, সব গাছই টেংরাগিরি বনের।’

অভিযোগ রয়েছে, বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে পাচারকারীরা প্রতিনিয়ত গাছ কেটে বিক্রি করছেন। মাঝেমধ্যে কোস্টগার্ড বোটসহ কিছু গাছ জব্দ করলেও পাচারকারীরা কখনোই ধরা পড়েনি। নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজি বলেন, ‘টেংরাগিরি বনাঞ্চল ঘিরে একটি চক্র গাছ কেটে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। বন বিভাগকে এ ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে।’

১৯৬৭ সালে বনাঞ্চলটিকে টেংরাগিরি বন হিসেবে নামকরণ করা হয়। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলা থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে সোনাকাটা ইউনিয়নে সুন্দরবনের একাংশের বিশাল বনভূমি নিয়ে বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য টেংরাগিরি ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। সুন্দরবনের পর এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল, যা দিনে দুবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়। লবণাক্ত ও মিষ্টি মাটির অপূর্ব মিশ্রণের কারণে এই বনে রয়েছে বিলুপ্তি প্রজাতির অসংখ্য সারি সারি গাছ, পশুপাখি ও সরীসৃপ প্রাণী। প্রায় ৪ হাজার ৪৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে পূর্ব-পশ্চিমে ৯ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত টেংরাগিরি বনের বিস্তৃতি। এই বন কেওড়া, গরান, সিংরা, হেতাল, গেওয়া, ওড়াসহ বিভিন্ন শ্বাসমূলীয় গাছগাছালিতে সমৃদ্ধ।

পরিবেশকর্মী ও পর্যটন উদ্যোক্তা আরিফ রহমান বলেন, ‘সুপার সাইক্লোন সিডরে ঢাল হিসেবে উপকূলকে রক্ষা করেছে টেংরাগিরি। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি ইকোপার্কের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থায়ীভাবে বৃক্ষনিধনের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ এখনই প্রয়োজন।’

বন বিভাগ তালতলী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও টেংরাগিরি বনের বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি টেংরাগিরি বনের গাছ কাটা রোধে। তবে আমাদের লোকবলসংকটের কারণে একটু সমস্যায় আছি।’ পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ সত্য নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত