Ajker Patrika

দুরবিনের লক্ষ্য বহুদূর

আরাফাত আহমেদ রিফাত, গাজীপুর
Thumbnail image

‘এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার এ অংশটুকু যেন আমাদের বর্তমান সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। তবে স্রোতের বিপরীতে যেমন হাওয়া বয়ে যায়, তেমনি কিছু মানুষ আছেন, যাদের ধর্ম অন্যদের জন্য কাজ করে যাওয়া। সে রকমই একজন চট্টগ্রামের মুহাম্মদ আফজাল সুলতান সাফি। তিনি একজন স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠক। সুবিধাবঞ্চিত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই তরুণ।

এ কাজের জন্য মুহাম্মদ আফজাল সুলতান সাফির ঝুলিতে জমা পড়েছে বেশ কিছু পুরস্কার। বিভিন্নভাবে পিছিয়ে পড়া ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য আফজাল সুলতান ২০২১ সালে পেয়েছেন ‘আন্তর্জাতিক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়া এ বছর পেয়েছেন ‘পাঠশালা ইমার্জিং লিডার অ্যাওয়ার্ড’ এবং ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল সোশ্যাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড’।

আফজাল সুলতান সাফির বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে। বর্তমানে তিনি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন।

ছোটবেলার স্বপ্ন দিয়েই এ যাত্রার শুরু। সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে গিয়ে টের পেয়েছিলেন, বিভিন্ন কারণে তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সে ঘটনা ছিল আফজাল সুলতানের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর কিছু বন্ধু এবং পরিচিত মানুষকে সঙ্গী করে নেমে পড়েন কাজে। ২০১৯ সালের ১ জুন প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দুরবিন ফাউন্ডেশন’। 
পিছিয়ে পড়া ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর কর্মসংস্থান, মানসিক সুরক্ষা ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য ‘শেয়ারে হোক সুন্দর সম্পর্ক’ প্রজেক্টের মাঝে কাজ করে যাচ্ছে দুরবিন ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি ত্রিপুরা শিশুদের জন্য তারা গঠন করেছে ‘ত্রিপুরা পাঠশালা’। এর মাধ্যমে শতাধিক ত্রিপুরা শিশু স্কুলমুখী হয়েছে। প্রজেক্ট ‘সূচনা টেইলার্সে’র মাধ্যমে তারা ৩০ জনের বেশি নারীকে সেলাইয়ের কাজের মাধ্যমে স্বনির্ভর করেছে।

এ ছাড়া ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পিং, সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে ভালোবাসা দিবস উদ্‌যাপন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিজের ভাষায় অনুভূতি প্রকাশ, রমজান মাসে ইফতার ও সাহ্‌রি বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে কোরবানির ঈদ পালন, শীতবস্ত্র বিতরণসহ দুরবিন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন আছে।

করোনার অতিমারির সময়েও আফজাল সুলতান কাজ বন্ধ করেননি। লকডাউন চলাকালে তাঁরা গোপনীয়তা বজায় রেখে নিম্নবিত্ত পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেন। পথচারী ও রিকশাচালকদের জন্য শুরু করেন ‘পাঁচ টাকায় ত্রাণ বিতরণ’ প্রকল্প।

দুরবিন ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্যসহায়তা করেছে। কিছুদিন আগে সিলেট ও কুড়িগ্রামের বন্যাকবলিত পাঁচ শর বেশি পরিবারে খাদ্য, জরুরি ওষুধ এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সামাজিক কাজ করতে গিয়েও নানা ধরনের বাধা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আফজাল সুলতানকে। তবে ধীরে ধীরে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে সেসব কাটিয়ে তিনি দুরবিন ফাউন্ডেশনের কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

জানা গেছে, দুরবিন ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য, ২০২৫ সালের মধ্যে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করে মৌলিক চাহিদা পূরণের যোগ্যতা অর্জন করা। পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনাও দুরবিন ফাউন্ডেশনের অন্যতম লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত