Ajker Patrika

স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগে অনিয়ম

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ০৭
Thumbnail image

বগুড়ার শেরপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে সাব-ব্লকভিত্তিক করোনার টিকা কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাঁদের তালিকা তৈরিতে ভাতার টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকের অনেকেই জানেন না তাঁদের নাম তালিকায় আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সবার জন্য টিকা নিশ্চিতে এ-সংক্রান্ত কর্মসূচি আরও সহজ করছে সরকার। প্রান্তিক মানুষদের টিকার আওতায় আনতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইপিআই টিকাকেন্দ্রগুলোতে জানুয়ারির শুরুতেই চালু হয় এই কার্যক্রম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি সাব-ব্লক সেন্টারে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবেন। দেশের ৪ হাজার ৬১১টি ইউনিয়নে মোট ১ লাখ ১০ হাজার ৬৪৬ কেন্দ্রে এই টিকা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৩০০-৪০০ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এর জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দৈনিক ৫০০ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ৩৫০ টাকা ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু মাঠপর্যায়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। বেশির ভাগ কেন্দ্রে স্বেচ্ছাসেবীর তালিকা থাকলেও নেই কোনো স্বেচ্ছাসেবক। নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাত্র ১০০টি করে করোনার ভ্যাকসিনের ডোজ।

গত বৃহস্পতিবার খামারকান্দি ইউনিয়নের বিলনথর গ্রামে এক সাব-ব্লকে দেখা যায়, বেলা ১১টায় উপস্থিত হয়েছেন স্বাস্থ্য সহকারী ইসমত আরা বেগম। সঙ্গে তাঁর স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়ারেস আকন্দ। তিনি নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক দাবি করে বলেন স্ত্রীকে সহযোগিতার জন্য এসেছেন। আরেক স্বাস্থ্যকর্মী পরিবার কল্যাণ সহকারী তখনো অনুপস্থিত। দেখা নেই বাকি দুই স্বেচ্ছাসেবকের।

একই চিত্র খামারকান্দি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে। সেখানে একজনই চালিয়ে যাচ্ছেন টিকা কার্যক্রম। এই কেন্দ্রে কর্মরত পরিবার কল্যাণ সহকারী সাবিনা খাতুন জানালেন কোনো স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াই তাঁরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে উপস্থিত হলেন স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জানালেন, এই কেন্দ্রে দুজন স্বেচ্ছাসেবক আছেন। সেই অনুযায়ী একটা তালিকাও দেখালেন। সেখানে আছে ওই কেন্দ্রের অফিস সহকারী জাফরুল হাসানের নাম।

তবে জাফরুল হাসান বলেন, ‘আমার নাম স্বেচ্ছাসেবকের তালিকায় আছে কি না জানি না। প্রতিদিনের মতো অফিসে এসে দায়িত্ব পালন করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সহকারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে যাঁরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা কেউই এখন পর্যন্ত ভাতা পাননি। তাই সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শুধু তালিকাই তৈরি করা হয়েছে। কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ভ্যাকসিন-বিষয়ক ফোকাল পারসন মো. আবু হাসান। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রতিটি সাব-ব্লকের স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা আছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৪০টি সাব-ব্লকে দুদিন করে এই টিকা দেওয়া হবে। প্রতিটি সাব-ব্লকে তিনজন করে স্বেচ্ছাসেবক থাকার কথা। কিন্তু তাঁদের নামে কোনো সরকারি বরাদ্দ আছে কিনা আমার জানা নেই।’

জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী লিংকন বলেন, ‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সাব-ব্লকে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী ও তিনজন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এর ব্যতিক্রম হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো আমরা তাঁদের ভাতার অংশ হাতে পাইনি। টাকা পেলে নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন করা হবে।’

শেরপুর উপজেলা সুজন ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নিমাই ঘোষ বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুয়া তালিকার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এবারও সে পাঁয়তারা চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকলে ও দোষীদের শাস্তি না দিলে এই দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারব না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম বলেন, কোনো কেন্দ্রে নিয়ম অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবক না থাকলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত