Ajker Patrika

অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক,অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যরা পরস্পরবিরোধী দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে গেছেন। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিবদমান দুই পক্ষই চায় নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দেখতে। এক পক্ষের পছন্দ জ্যেষ্ঠতা তালিকার এক নম্বরে থাকা হাসিনা বেগম, অন্য পক্ষের পছন্দ তালিকার দুই নম্বরে থাকা কেকা রায় চৌধুরী। এ জন্যই তাঁরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের ও কাদা-ছোড়াছুড়িতে মদদ দিচ্ছেন।

অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশির একটি পক্ষও চাচ্ছে অধ্যক্ষ পদ নিয়ে দুই পক্ষের লড়াই আরও জটিল আকার ধারণ করুক। এতে গত দুইবারের মতো এবারও প্রেষণে শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘অধ্যক্ষ নিয়োগকে কেন্দ্র করে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে ভিন্ন কথা বলছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘ভিকারুননিসার চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে শিক্ষা ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।’

জানা যায়, ৪ এপ্রিল অবসরে যান শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ও ভিকারুননিসার সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। এর আগে গভর্নিং বডি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয় কেকা রায় চৌধুরীকে। এতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের পাশাপাশি গভর্নিং বডির পাঁচ সদস্যকে বাদ দিয়ে সভা করে নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। এই পাঁচ সদস্য হলেন অভিভাবক প্রতিনিধি ড. তাজুল ইসলাম, সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন এবং ওয়াজেদুজ্জামান মন্টু আর শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ ও চাঁদ সুলতানা। উল্লেখ্য, ভিকারুননিসার গভর্নিং বডিতে অধ্যক্ষসহ মোট ১১ জন সদস্য রয়েছেন।

জানতে চাইলে গভর্নিং বডি সদস্য সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন বলেন, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে গভর্নিং বডির পাঁচ সদস্যকে রাখা হয়নি। এসব অনিয়মের জন্য দায়ী সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ। তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে।

তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন নাহার। তিনি বলেন, সবকিছু নিয়মানুযায়ী করা হয়েছে। ‘অবৈধ ভর্তির’ কারণে জ্যেষ্ঠতার তালিকায় এক নম্বরে থাকা হাসিনা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন তিনি, বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। তাই জ্যেষ্ঠতার তালিকার দুই নম্বরে থাকা কেকা রায় চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে গভর্নিং বডি।

পাঁচ সদস্যকে ছাড়াই গভর্নিং বডির সভা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনজন অভিভাবক প্রতিনিধির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেন না। আর বাকি দুই শিক্ষক প্রতিনিধিকে বৈঠকে ডাকা হলেও তাঁরা আসেননি। আর নিয়োগ-বাণিজ্যসহ অন্য যেসব অনিয়মের কথা বলা হচ্ছে, তাও সত্য নয়।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমানকে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন জ্যেষ্ঠতার তালিকায় এক নম্বরে থাকা হাসিনা বেগম। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, মামলাটিতে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, যা এখনো বহাল রয়েছে। এ অজুহাতে জ্যেষ্ঠতার তালিকা লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই।

জানা যায়, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে অবৈধভাবে আসনসংখ্যার বিপরীতে অতিরিক্ত ৪৪৩ জন ছাত্রী ভর্তিতে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হাসিনা বেগমের সম্পৃক্ততা পায় তদন্ত কমিটি। এ অভিযোগে ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে হাসিনা বেগমের এমপিও সাময়িক স্থগিত এবং কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়। পরে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন হাসিনা বেগম। আদালত এ বিষয়ে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

এদিকে গত ২৮ মার্চ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কামরুন নাহার ও শিক্ষক প্রতিনিধি ড. ফারহানা খানমের আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর ৪ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় কামরুন নাহারকে অবসর-পরবর্তী ছুটি (পিআরএল) ভোগের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে ওএসডি করে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত