মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি মুসলিম লীগের সম্মেলন শেষে পল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সুরেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে আবার ছাত্র ও রাজনৈতিক সমাজ প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইনসভা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে আইনসভা পরিষদের সদস্যদের কাছে দাবিনামা উত্থাপনের জন্য সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারি ঘোষণা আসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির। এই ঘোষণার পরই ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে এবং বিপক্ষে মত থাকলেও পরদিন সকালে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যুবক, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমবেত হন। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা চলে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ও সভাপতি গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলে সবাই তা সমর্থন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জন ১০ জন করে মিছিলসহ আইন পরিষদ সভার দিকে অগ্রসর হওয়ার। ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে তৎকালীন সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে আকস্মিকভাবে গুলি বর্ষিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বরকত, জব্বার ও রফিক। গুরুতর আহত হন আব্দুস সালাম, যিনি মৃত্যুবরণ করেন ৭ এপ্রিল। তা ছাড়া শফিউর মৃত্যুবরণ করেন ২২ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশের আকস্মিক গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সমবেত মিছিলকারীরা। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ না হয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবি জানানো হতে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংগঠিত হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। ঢাকায় নির্মিত হয় একটি শহীদ মিনার। সেটি ভেঙে দেওয়া হয় সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু শহীদ মিনার ভাঙলেও ছাত্র, তরুণ, যুবক, সাধারণ মানুষ এই হত্যাকাণ্ডকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতা রচনা করলে সেটি প্রভাতফেরির গানরূপে গৃহীত হয়। শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি লেখেন। চট্টগ্রামের তরুণ কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী লেখেন ‘কাঁদতে আসিনি’ কবিতাটি। অসংখ্য তরুণ, ছাত্র জেলে গেছেন, কিন্তু দমে যাননি ভয়ভীতি প্রদর্শনে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইতিপূর্বে কোনো দেশ বা জাতিকে এভাবে রক্ত দিতে হয়নি।
অথচ মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার জনগণকে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল চল্লিশের দশকে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তেই রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে—এটি তারাই চাপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদও হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেই প্রতিবাদের ভাষা চরমভাবে উপেক্ষা করে। স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে ঢাকা সফরে এসে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে বলেন, ‘লেট মি মেক ইট ভেরি ক্লিয়ার টু ইউ, ইট ইজ নো ডাউট দ্যাট দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান ইজ গোয়িং টু বি উর্দু অ্যান্ড নো আদার ল্যাঙ্গুয়েজ। এনিওয়ান হু ট্রাইজ টু মিসলিড ইউ ইজ রিয়েলি দ্য এনিমি অব পাকিস্তান।’ এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রায় অনুরূপ বার্তাই দেন। ঘটনাস্থলেই এর প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। ’৪৮-এ ভাষা আন্দোলনের ঢেউ গোটা জাতির মননে যে ছাপ ফেলেছিল, তা ’৫২তে ঝড়ের বেগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে কোনো বাধাই কেউ মানেনি। সবকিছু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র, যুবক ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
একুশের শহীদদের স্মরণে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা। সে বছরই হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রচনা করেন ‘কবর’ নাটক। সব মিলিয়ে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ নতুনভাবে ঘটা শুরু হয়। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারারও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সেটিই ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা বাঙালি জাতিকে আপন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রচিন্তায় বেড়ে ওঠা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের চেতনায় প্রস্তুত করে। এই সমগ্র চেতনাই হচ্ছে ’৫২-র ফেব্রুয়ারির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।
স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পর বাংলা ও বাঙালির সম্মুখযাত্রা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশিত চরিত্রে। বাঙালি জাতি আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, যেমনিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উন্নত জাতি-রাষ্ট্রগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা, দীক্ষা, গবেষণা, রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন-আদালত, প্রশাসনসহ সবকিছুই চলবে। তাতে মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার বিস্তার ঘটবে গোটা জাতির মধ্যে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব রাষ্ট্রই এমনটি অনুসরণ করে থাকে। মাতৃভাষায় চিন্তার গভীরতা ও বিস্তার যত বেশি অর্জন করতে পারে, অন্য ভাষায় তা যে সম্ভব নয়, তার প্রমাণ মাইকেল মধুসূদনই দিয়ে গেছেন, বলেও গেছেন। কিন্তু আমরা এসব জ্ঞান বা উপদেশকে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। যে কারণে এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ইংরেজি মাধ্যম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাংলা নয়, আরবি ভাষার মাধ্যমেই পাঠদানের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভাষা দক্ষতায় কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। অফিস-আদালতে এখন বাংলা ও ইংরেজির মিশেল চলছে। প্রমিত বাংলা চর্চার চেষ্টা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বইমেলার আয়োজন নিয়ে তোড়জোড় দেখি। ঢাকার বাইরে খুব বেশি বইমেলার আয়োজন হয় না। ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু ভালো সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রয়োজনীয় মানসম্মত বইপুস্তক খুব একটা প্রকাশিত হয় না। আমাদের প্রকাশনা জগৎটাই চলছে নিয়মনীতির যথেচ্ছাচারে। ফলে নতুন নতুন যেসব বইয়ের খবর প্রচারিত হয়, সেসবের মধ্যে নির্ভর করার মতো মানসম্মত বই থাকে না। অনেকেই নাম কুড়াতে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এ দিয়ে তো ফেব্রুয়ারির মেলার সমৃদ্ধি অর্জন নিয়ে গর্ব করা যায় না। বিরাট বিরাট প্যাভিলিয়ন এখন মেলার দৃষ্টি কাড়ছে, কিন্তু ভালো বই কোথায়? ভালো পাঠক কোথায়? সব জায়গায় যেন অভাব-অভিযোগ বেড়েই চলেছে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোন পথে, কোথায়? ২১ ফেব্রুয়ারির পথে আমাদের এখন কতটা খুঁজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে মৌলিক গবেষণা হতে পারে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শ ধারণ করার পথে আমরা কতটা রয়েছি—এই প্রশ্নগুলো দিনে দিনে বড় হয়ে উঠছে। শিক্ষায় মাতৃভাষার বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষায় প্রমিত মাতৃভাষার চর্চা হ্রাস পেতে বসেছে, গ্রাস করেছে বিদেশি ভাষা। শহরগুলোতে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই হচ্ছে বিদেশি ভাষায় অধ্যয়ন করার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলা এখন যেন হতদরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্যই নিবু নিবু প্রদীপ জ্বালিয়ে চলছে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পাস করেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, লিখন ও পঠনদক্ষতায় বেড়ে উঠতে পারছে না। ফলে ওপরের দিকে এদের যাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও প্রযুক্তি, অনলাইনের এই যুগে মাতৃভাষায় মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া দিনে দিনে দুরূহ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভাবা খুবই জরুরি।

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি মুসলিম লীগের সম্মেলন শেষে পল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সুরেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে আবার ছাত্র ও রাজনৈতিক সমাজ প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইনসভা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে আইনসভা পরিষদের সদস্যদের কাছে দাবিনামা উত্থাপনের জন্য সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারি ঘোষণা আসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির। এই ঘোষণার পরই ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে এবং বিপক্ষে মত থাকলেও পরদিন সকালে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যুবক, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমবেত হন। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা চলে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ও সভাপতি গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলে সবাই তা সমর্থন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জন ১০ জন করে মিছিলসহ আইন পরিষদ সভার দিকে অগ্রসর হওয়ার। ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে তৎকালীন সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে আকস্মিকভাবে গুলি বর্ষিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বরকত, জব্বার ও রফিক। গুরুতর আহত হন আব্দুস সালাম, যিনি মৃত্যুবরণ করেন ৭ এপ্রিল। তা ছাড়া শফিউর মৃত্যুবরণ করেন ২২ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশের আকস্মিক গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সমবেত মিছিলকারীরা। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ না হয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবি জানানো হতে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংগঠিত হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। ঢাকায় নির্মিত হয় একটি শহীদ মিনার। সেটি ভেঙে দেওয়া হয় সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু শহীদ মিনার ভাঙলেও ছাত্র, তরুণ, যুবক, সাধারণ মানুষ এই হত্যাকাণ্ডকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতা রচনা করলে সেটি প্রভাতফেরির গানরূপে গৃহীত হয়। শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি লেখেন। চট্টগ্রামের তরুণ কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী লেখেন ‘কাঁদতে আসিনি’ কবিতাটি। অসংখ্য তরুণ, ছাত্র জেলে গেছেন, কিন্তু দমে যাননি ভয়ভীতি প্রদর্শনে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইতিপূর্বে কোনো দেশ বা জাতিকে এভাবে রক্ত দিতে হয়নি।
অথচ মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার জনগণকে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল চল্লিশের দশকে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তেই রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে—এটি তারাই চাপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদও হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেই প্রতিবাদের ভাষা চরমভাবে উপেক্ষা করে। স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে ঢাকা সফরে এসে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে বলেন, ‘লেট মি মেক ইট ভেরি ক্লিয়ার টু ইউ, ইট ইজ নো ডাউট দ্যাট দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান ইজ গোয়িং টু বি উর্দু অ্যান্ড নো আদার ল্যাঙ্গুয়েজ। এনিওয়ান হু ট্রাইজ টু মিসলিড ইউ ইজ রিয়েলি দ্য এনিমি অব পাকিস্তান।’ এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রায় অনুরূপ বার্তাই দেন। ঘটনাস্থলেই এর প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। ’৪৮-এ ভাষা আন্দোলনের ঢেউ গোটা জাতির মননে যে ছাপ ফেলেছিল, তা ’৫২তে ঝড়ের বেগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে কোনো বাধাই কেউ মানেনি। সবকিছু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র, যুবক ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
একুশের শহীদদের স্মরণে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা। সে বছরই হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রচনা করেন ‘কবর’ নাটক। সব মিলিয়ে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ নতুনভাবে ঘটা শুরু হয়। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারারও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সেটিই ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা বাঙালি জাতিকে আপন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রচিন্তায় বেড়ে ওঠা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের চেতনায় প্রস্তুত করে। এই সমগ্র চেতনাই হচ্ছে ’৫২-র ফেব্রুয়ারির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।
স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পর বাংলা ও বাঙালির সম্মুখযাত্রা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশিত চরিত্রে। বাঙালি জাতি আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, যেমনিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উন্নত জাতি-রাষ্ট্রগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা, দীক্ষা, গবেষণা, রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন-আদালত, প্রশাসনসহ সবকিছুই চলবে। তাতে মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার বিস্তার ঘটবে গোটা জাতির মধ্যে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব রাষ্ট্রই এমনটি অনুসরণ করে থাকে। মাতৃভাষায় চিন্তার গভীরতা ও বিস্তার যত বেশি অর্জন করতে পারে, অন্য ভাষায় তা যে সম্ভব নয়, তার প্রমাণ মাইকেল মধুসূদনই দিয়ে গেছেন, বলেও গেছেন। কিন্তু আমরা এসব জ্ঞান বা উপদেশকে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। যে কারণে এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ইংরেজি মাধ্যম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাংলা নয়, আরবি ভাষার মাধ্যমেই পাঠদানের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভাষা দক্ষতায় কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। অফিস-আদালতে এখন বাংলা ও ইংরেজির মিশেল চলছে। প্রমিত বাংলা চর্চার চেষ্টা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বইমেলার আয়োজন নিয়ে তোড়জোড় দেখি। ঢাকার বাইরে খুব বেশি বইমেলার আয়োজন হয় না। ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু ভালো সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রয়োজনীয় মানসম্মত বইপুস্তক খুব একটা প্রকাশিত হয় না। আমাদের প্রকাশনা জগৎটাই চলছে নিয়মনীতির যথেচ্ছাচারে। ফলে নতুন নতুন যেসব বইয়ের খবর প্রচারিত হয়, সেসবের মধ্যে নির্ভর করার মতো মানসম্মত বই থাকে না। অনেকেই নাম কুড়াতে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এ দিয়ে তো ফেব্রুয়ারির মেলার সমৃদ্ধি অর্জন নিয়ে গর্ব করা যায় না। বিরাট বিরাট প্যাভিলিয়ন এখন মেলার দৃষ্টি কাড়ছে, কিন্তু ভালো বই কোথায়? ভালো পাঠক কোথায়? সব জায়গায় যেন অভাব-অভিযোগ বেড়েই চলেছে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোন পথে, কোথায়? ২১ ফেব্রুয়ারির পথে আমাদের এখন কতটা খুঁজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে মৌলিক গবেষণা হতে পারে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শ ধারণ করার পথে আমরা কতটা রয়েছি—এই প্রশ্নগুলো দিনে দিনে বড় হয়ে উঠছে। শিক্ষায় মাতৃভাষার বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষায় প্রমিত মাতৃভাষার চর্চা হ্রাস পেতে বসেছে, গ্রাস করেছে বিদেশি ভাষা। শহরগুলোতে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই হচ্ছে বিদেশি ভাষায় অধ্যয়ন করার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলা এখন যেন হতদরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্যই নিবু নিবু প্রদীপ জ্বালিয়ে চলছে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পাস করেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, লিখন ও পঠনদক্ষতায় বেড়ে উঠতে পারছে না। ফলে ওপরের দিকে এদের যাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও প্রযুক্তি, অনলাইনের এই যুগে মাতৃভাষায় মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া দিনে দিনে দুরূহ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভাবা খুবই জরুরি।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি মুসলিম লীগের সম্মেলন শেষে পল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সুরেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে আবার ছাত্র ও রাজনৈতিক সমাজ প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইনসভা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে আইনসভা পরিষদের সদস্যদের কাছে দাবিনামা উত্থাপনের জন্য সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারি ঘোষণা আসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির। এই ঘোষণার পরই ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে এবং বিপক্ষে মত থাকলেও পরদিন সকালে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যুবক, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমবেত হন। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা চলে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ও সভাপতি গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলে সবাই তা সমর্থন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জন ১০ জন করে মিছিলসহ আইন পরিষদ সভার দিকে অগ্রসর হওয়ার। ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে তৎকালীন সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে আকস্মিকভাবে গুলি বর্ষিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বরকত, জব্বার ও রফিক। গুরুতর আহত হন আব্দুস সালাম, যিনি মৃত্যুবরণ করেন ৭ এপ্রিল। তা ছাড়া শফিউর মৃত্যুবরণ করেন ২২ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশের আকস্মিক গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সমবেত মিছিলকারীরা। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ না হয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবি জানানো হতে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংগঠিত হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। ঢাকায় নির্মিত হয় একটি শহীদ মিনার। সেটি ভেঙে দেওয়া হয় সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু শহীদ মিনার ভাঙলেও ছাত্র, তরুণ, যুবক, সাধারণ মানুষ এই হত্যাকাণ্ডকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতা রচনা করলে সেটি প্রভাতফেরির গানরূপে গৃহীত হয়। শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি লেখেন। চট্টগ্রামের তরুণ কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী লেখেন ‘কাঁদতে আসিনি’ কবিতাটি। অসংখ্য তরুণ, ছাত্র জেলে গেছেন, কিন্তু দমে যাননি ভয়ভীতি প্রদর্শনে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইতিপূর্বে কোনো দেশ বা জাতিকে এভাবে রক্ত দিতে হয়নি।
অথচ মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার জনগণকে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল চল্লিশের দশকে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তেই রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে—এটি তারাই চাপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদও হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেই প্রতিবাদের ভাষা চরমভাবে উপেক্ষা করে। স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে ঢাকা সফরে এসে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে বলেন, ‘লেট মি মেক ইট ভেরি ক্লিয়ার টু ইউ, ইট ইজ নো ডাউট দ্যাট দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান ইজ গোয়িং টু বি উর্দু অ্যান্ড নো আদার ল্যাঙ্গুয়েজ। এনিওয়ান হু ট্রাইজ টু মিসলিড ইউ ইজ রিয়েলি দ্য এনিমি অব পাকিস্তান।’ এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রায় অনুরূপ বার্তাই দেন। ঘটনাস্থলেই এর প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। ’৪৮-এ ভাষা আন্দোলনের ঢেউ গোটা জাতির মননে যে ছাপ ফেলেছিল, তা ’৫২তে ঝড়ের বেগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে কোনো বাধাই কেউ মানেনি। সবকিছু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র, যুবক ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
একুশের শহীদদের স্মরণে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা। সে বছরই হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রচনা করেন ‘কবর’ নাটক। সব মিলিয়ে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ নতুনভাবে ঘটা শুরু হয়। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারারও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সেটিই ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা বাঙালি জাতিকে আপন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রচিন্তায় বেড়ে ওঠা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের চেতনায় প্রস্তুত করে। এই সমগ্র চেতনাই হচ্ছে ’৫২-র ফেব্রুয়ারির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।
স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পর বাংলা ও বাঙালির সম্মুখযাত্রা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশিত চরিত্রে। বাঙালি জাতি আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, যেমনিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উন্নত জাতি-রাষ্ট্রগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা, দীক্ষা, গবেষণা, রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন-আদালত, প্রশাসনসহ সবকিছুই চলবে। তাতে মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার বিস্তার ঘটবে গোটা জাতির মধ্যে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব রাষ্ট্রই এমনটি অনুসরণ করে থাকে। মাতৃভাষায় চিন্তার গভীরতা ও বিস্তার যত বেশি অর্জন করতে পারে, অন্য ভাষায় তা যে সম্ভব নয়, তার প্রমাণ মাইকেল মধুসূদনই দিয়ে গেছেন, বলেও গেছেন। কিন্তু আমরা এসব জ্ঞান বা উপদেশকে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। যে কারণে এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ইংরেজি মাধ্যম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাংলা নয়, আরবি ভাষার মাধ্যমেই পাঠদানের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভাষা দক্ষতায় কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। অফিস-আদালতে এখন বাংলা ও ইংরেজির মিশেল চলছে। প্রমিত বাংলা চর্চার চেষ্টা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বইমেলার আয়োজন নিয়ে তোড়জোড় দেখি। ঢাকার বাইরে খুব বেশি বইমেলার আয়োজন হয় না। ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু ভালো সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রয়োজনীয় মানসম্মত বইপুস্তক খুব একটা প্রকাশিত হয় না। আমাদের প্রকাশনা জগৎটাই চলছে নিয়মনীতির যথেচ্ছাচারে। ফলে নতুন নতুন যেসব বইয়ের খবর প্রচারিত হয়, সেসবের মধ্যে নির্ভর করার মতো মানসম্মত বই থাকে না। অনেকেই নাম কুড়াতে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এ দিয়ে তো ফেব্রুয়ারির মেলার সমৃদ্ধি অর্জন নিয়ে গর্ব করা যায় না। বিরাট বিরাট প্যাভিলিয়ন এখন মেলার দৃষ্টি কাড়ছে, কিন্তু ভালো বই কোথায়? ভালো পাঠক কোথায়? সব জায়গায় যেন অভাব-অভিযোগ বেড়েই চলেছে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোন পথে, কোথায়? ২১ ফেব্রুয়ারির পথে আমাদের এখন কতটা খুঁজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে মৌলিক গবেষণা হতে পারে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শ ধারণ করার পথে আমরা কতটা রয়েছি—এই প্রশ্নগুলো দিনে দিনে বড় হয়ে উঠছে। শিক্ষায় মাতৃভাষার বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষায় প্রমিত মাতৃভাষার চর্চা হ্রাস পেতে বসেছে, গ্রাস করেছে বিদেশি ভাষা। শহরগুলোতে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই হচ্ছে বিদেশি ভাষায় অধ্যয়ন করার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলা এখন যেন হতদরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্যই নিবু নিবু প্রদীপ জ্বালিয়ে চলছে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পাস করেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, লিখন ও পঠনদক্ষতায় বেড়ে উঠতে পারছে না। ফলে ওপরের দিকে এদের যাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও প্রযুক্তি, অনলাইনের এই যুগে মাতৃভাষায় মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া দিনে দিনে দুরূহ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভাবা খুবই জরুরি।

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি মুসলিম লীগের সম্মেলন শেষে পল্টনে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সুরেই উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে আবার ছাত্র ও রাজনৈতিক সমাজ প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ৩০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আইনসভা পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে আইনসভা পরিষদের সদস্যদের কাছে দাবিনামা উত্থাপনের জন্য সংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারি ঘোষণা আসে পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির। এই ঘোষণার পরই ছাত্রসমাজ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে এবং বিপক্ষে মত থাকলেও পরদিন সকালে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, যুবক, কর্মজীবী, সাধারণ মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সমবেত হন। গাজীউল হকের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা চলে। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন ও সভাপতি গাজীউল হক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে মত দিলে সবাই তা সমর্থন করেন। সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জন ১০ জন করে মিছিলসহ আইন পরিষদ সভার দিকে অগ্রসর হওয়ার। ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে তৎকালীন সংসদ ভবনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথে আকস্মিকভাবে গুলি বর্ষিত হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন বরকত, জব্বার ও রফিক। গুরুতর আহত হন আব্দুস সালাম, যিনি মৃত্যুবরণ করেন ৭ এপ্রিল। তা ছাড়া শফিউর মৃত্যুবরণ করেন ২২ ফেব্রুয়ারি।
পুলিশের আকস্মিক গুলিবর্ষণ ও হতাহতের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায় সমবেত মিছিলকারীরা। কিন্তু আন্দোলন বন্ধ না হয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবি জানানো হতে থাকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে। এই আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সংগঠিত হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। ঢাকায় নির্মিত হয় একটি শহীদ মিনার। সেটি ভেঙে দেওয়া হয় সরকারি বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু শহীদ মিনার ভাঙলেও ছাত্র, তরুণ, যুবক, সাধারণ মানুষ এই হত্যাকাণ্ডকে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতা রচনা করলে সেটি প্রভাতফেরির গানরূপে গৃহীত হয়। শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ কবিতাটি লেখেন। চট্টগ্রামের তরুণ কবি মাহবুবুল আলম চৌধুরী লেখেন ‘কাঁদতে আসিনি’ কবিতাটি। অসংখ্য তরুণ, ছাত্র জেলে গেছেন, কিন্তু দমে যাননি ভয়ভীতি প্রদর্শনে। মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইতিপূর্বে কোনো দেশ বা জাতিকে এভাবে রক্ত দিতে হয়নি।
অথচ মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলার জনগণকে পাকিস্তান সৃষ্টির জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল চল্লিশের দশকে। কিন্তু পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তেই রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে—এটি তারাই চাপিয়ে দিয়েছিল। এর প্রতিবাদও হয় তাৎক্ষণিকভাবে। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেই প্রতিবাদের ভাষা চরমভাবে উপেক্ষা করে। স্বয়ং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের ১৯ তারিখে ঢাকা সফরে এসে ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষণে বলেন, ‘লেট মি মেক ইট ভেরি ক্লিয়ার টু ইউ, ইট ইজ নো ডাউট দ্যাট দ্য স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ অব পাকিস্তান ইজ গোয়িং টু বি উর্দু অ্যান্ড নো আদার ল্যাঙ্গুয়েজ। এনিওয়ান হু ট্রাইজ টু মিসলিড ইউ ইজ রিয়েলি দ্য এনিমি অব পাকিস্তান।’ এরপর ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে প্রায় অনুরূপ বার্তাই দেন। ঘটনাস্থলেই এর প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। ’৪৮-এ ভাষা আন্দোলনের ঢেউ গোটা জাতির মননে যে ছাপ ফেলেছিল, তা ’৫২তে ঝড়ের বেগ সৃষ্টি করেছিল। ফলে কোনো বাধাই কেউ মানেনি। সবকিছু উপেক্ষা করে মাতৃভাষা বাংলার জন্য ছাত্র, যুবক ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
একুশের শহীদদের স্মরণে ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করেন শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যরা। সে বছরই হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রচনা করেন ‘কবর’ নাটক। সব মিলিয়ে ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ নতুনভাবে ঘটা শুরু হয়। পূর্ব বাংলার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক ধারারও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ শুরু হয় ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সেটিই ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন, ’৬৯-এ গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। সুতরাং ২১ ফেব্রুয়ারি গোটা বাঙালি জাতিকে আপন ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও রাষ্ট্রচিন্তায় বেড়ে ওঠা এবং স্বাধীন রাষ্ট্রের চেতনায় প্রস্তুত করে। এই সমগ্র চেতনাই হচ্ছে ’৫২-র ফেব্রুয়ারির আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।
স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হওয়ার পর বাংলা ও বাঙালির সম্মুখযাত্রা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রত্যাশিত চরিত্রে। বাঙালি জাতি আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে, যেমনিভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উন্নত জাতি-রাষ্ট্রগুলো অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা, দীক্ষা, গবেষণা, রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন-আদালত, প্রশাসনসহ সবকিছুই চলবে। তাতে মেধা, মনন ও প্রজ্ঞার বিস্তার ঘটবে গোটা জাতির মধ্যে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সব রাষ্ট্রই এমনটি অনুসরণ করে থাকে। মাতৃভাষায় চিন্তার গভীরতা ও বিস্তার যত বেশি অর্জন করতে পারে, অন্য ভাষায় তা যে সম্ভব নয়, তার প্রমাণ মাইকেল মধুসূদনই দিয়ে গেছেন, বলেও গেছেন। কিন্তু আমরা এসব জ্ঞান বা উপদেশকে খুব বেশি গুরুত্ব দিই না। যে কারণে এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় মাতৃভাষা ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারাতে বসেছে। ইংরেজি মাধ্যম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। এমনকি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও বাংলা নয়, আরবি ভাষার মাধ্যমেই পাঠদানের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তাতে খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থীই ভাষা দক্ষতায় কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হচ্ছেন। অফিস-আদালতে এখন বাংলা ও ইংরেজির মিশেল চলছে। প্রমিত বাংলা চর্চার চেষ্টা ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি এলে আমরা বইমেলার আয়োজন নিয়ে তোড়জোড় দেখি। ঢাকার বাইরে খুব বেশি বইমেলার আয়োজন হয় না। ঢাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু ভালো সাহিত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার প্রয়োজনীয় মানসম্মত বইপুস্তক খুব একটা প্রকাশিত হয় না। আমাদের প্রকাশনা জগৎটাই চলছে নিয়মনীতির যথেচ্ছাচারে। ফলে নতুন নতুন যেসব বইয়ের খবর প্রচারিত হয়, সেসবের মধ্যে নির্ভর করার মতো মানসম্মত বই থাকে না। অনেকেই নাম কুড়াতে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করেন। এ দিয়ে তো ফেব্রুয়ারির মেলার সমৃদ্ধি অর্জন নিয়ে গর্ব করা যায় না। বিরাট বিরাট প্যাভিলিয়ন এখন মেলার দৃষ্টি কাড়ছে, কিন্তু ভালো বই কোথায়? ভালো পাঠক কোথায়? সব জায়গায় যেন অভাব-অভিযোগ বেড়েই চলেছে। আসলে আমরা যাচ্ছি কোন পথে, কোথায়? ২১ ফেব্রুয়ারির পথে আমাদের এখন কতটা খুঁজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে মৌলিক গবেষণা হতে পারে। স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদর্শ ধারণ করার পথে আমরা কতটা রয়েছি—এই প্রশ্নগুলো দিনে দিনে বড় হয়ে উঠছে। শিক্ষায় মাতৃভাষার বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের শিক্ষায় প্রমিত মাতৃভাষার চর্চা হ্রাস পেতে বসেছে, গ্রাস করেছে বিদেশি ভাষা। শহরগুলোতে নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানেই হচ্ছে বিদেশি ভাষায় অধ্যয়ন করার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাংলা এখন যেন হতদরিদ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্যই নিবু নিবু প্রদীপ জ্বালিয়ে চলছে। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পাস করেও বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ, লিখন ও পঠনদক্ষতায় বেড়ে উঠতে পারছে না। ফলে ওপরের দিকে এদের যাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও প্রযুক্তি, অনলাইনের এই যুগে মাতৃভাষায় মানসম্মত শিক্ষা পাওয়া দিনে দিনে দুরূহ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ভাবা খুবই জরুরি।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

ফেব্রুয়ারি ফিরে এসেছে। ’৫২-র ফেব্রুয়ারিতে গড়া আন্দোলন-সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর মাস। এবার ৭২তম ২১ ফেব্রুয়ারিকে আমরা মাসব্যাপী স্মরণ করতে যাচ্ছি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারিকে মাসব্যাপী স্মরণ করার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ১৯৫২
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫