Ajker Patrika

ফসলি জমির মাটি সড়কে

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪: ১০
ফসলি জমির মাটি সড়কে

মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদাহ গ্রামের কৃষক হাসানুজ্জামান টুটুল। আমদাহ-আশরাফপুর সড়কের পাশে রয়েছে তাঁর ১ বিঘা আবাদি জমি। সড়কের সম্প্রসারণকাজের জন্য তাঁর ফসলি জমি খনন করে মাটি কেটে নিয়েছেন ঠিকাদার। প্রতিবাদ করতে গেলে টুটুলকে ভয় দেখান ঠিকাদার।

টুটুল বলেন, ‘এ জমির এক খণ্ড ধান আবাদের জন্য ভরাট করেছি। এতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাকি অংশ ভরাট করতে খরচ হবে এর দ্বিগুণ। এ ছাড়া মাটি ভরাট করায় আমাকে ওপরের ভালো জমি থেকে মাটি নিতে হয়েছে। এতে মাটির উর্বরতা কমে যাবে। আগামী কয়েক বছরেও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে না। ফলে চাষাবাদেও ক্ষতি হবে। আমার এত বড় ক্ষতির ক্ষতিপূরণ কে দেবে?’

টুটুলের মতো জমি ভরাটের সামর্থ্য নেই আনসার আলীর। সড়কের পাশে থাকা তাঁর ৫ কাঠা জমি থেকেও কেটে নেওয়া হয়েছে মাটি। এ জমি অনাবাদি থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন আনসার। তিনি বলেন, ‘আমার জমিতে গমের চাষ ছিল। আমাকে না জানিয়েই জমি থেকে ফসলসহ মাটি কেটে নেওয়া হয়। রাস্তা থেকে ১০-১৫ ফুট প্রস্থে বড় বড় গর্ত করে মাটি কাঠা হয়। মাটি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদার বলেন, ‘সরকারি কাজ। এ কাজে কেউ বাধা দিতে পারবে না।’

শুধু টুটুল আর আনসারেরই নয়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে এ সম্প্রসারণ কাজের জন্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের এক পাশের সব কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে, অপর পাশ থেকেও মাটি কাটার। এতে করে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে চাষিরা। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, মাটির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৫ লাখ টাকা।

এদিকে সড়কের দুপাশে গাছ রেখেই চলছে সম্প্রসারণের কাজ। ৩ ফুট করে প্রশস্ত করা হবে দুপাশে। মাপজোখ করে দেখা যায়, শত শত গাছ থাকবে সড়কের মধ্যেই। ফলে সড়ক প্রশস্তকরণ হলেও সাধারণ মানুষের কোনো উপকারেই আসবে না।

রোববার দুপুরে ওই সড়কে দেখা যায়, এলজিইডির এক কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের এক কর্মচারী কাজের তদারক করছেন। কেন জমি থেকে মাটি কাঠা হচ্ছে জানতে চাইলে দ্রুত চলে যান এলজিইডির ওই কর্মকর্তা। আর ঠিকাদারের কর্মচারী বলেন, ‘ঠিকাদার যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই কাজ করছি। সমস্যা হলে দেখবেন, এলজিইডির স্যারেরা। এ ছাড়া কারও সঙ্গে আমার কথা বলার অনুমতি নেই।’

শহরের কোর্ট মোড়ে ঠিকাদার নুর ইসলামের অফিসে গেলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ বিষয়ে মেহেরপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিডিউলে মাটির জন্য বলা হয়েছে, ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ঠিকাদার মাটির ব্যবস্থা করবেন। সে ক্ষেত্রে কৃষকদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে মাটি নিয়েছেন, বিষয়টি জানা নেই।’

১ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশ প্রশস্তকরণের কাজ পেয়েছে কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজ, তবে কাজটি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার নুর ইসলাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত