Ajker Patrika

শিক্ষক-সংকট প্রকট, স্কুল খুললেও পাঠদান ব্যাহত

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২২, ১৬: ১৬
Thumbnail image

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার রাণী নিহার দেবী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক-সংকটে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকের পদ তৈরি না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে কম্পিউটার ল্যাবের যন্ত্রপাতি। ফলে সময়োপযোগী শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে উপজেলার একমাত্র সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও বাংলা, জীববিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে তিন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকের পদটিও তৈরি করা হয়নি। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দুজন কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ে সাড়ে ৪০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। জেএসসি ও এসএসসিতে গড় পাসের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ হাতেগোনা।

জানা গেছে, পার্বত্য মং সার্কেলের রাজা মংপ্রু সাইন বাহাদুর ১৯৮১ সালে তাঁর স্ত্রী রাণী নিহার দেবীর নামে উপজেলার প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতন ব্যক্তি ছাড়াও এলাকার বাইরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এটি তৈরি হয়। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি পার্বত্য এলাকা পরিদর্শনে এসে স্থানীয়দের দাবির মুখে বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ করেন। সে সময় বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য মাত্র ১১ শিক্ষক ও তিন কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়। তারপর তিন দশকে বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো ছোঁয়া লাগেনি।

এদিকে প্রধান শিক্ষক ও তিন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য ছাড়াও বিদ্যালয়ে এখনো কম্পিউটার বিষয়ে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে ডিজিটাল ল্যাবের জন্য সরকারের দেওয়া লাখ টাকার কম্পিউটার নষ্ট হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিভাবক এস এম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আমি এ বিদ্যালয়ের ১৯৯৫ ব্যাচের ছাত্র। আমার সন্তান এখান থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ২২ পেয়ে এসএসসি পাস করেছে। সচেতন অভিভাবক হয়েও ছেলেকে সময়োপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে পারিনি। এই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আসলে কেউই ভাবে না।’

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক ও বর্তমানে তিনটহরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতিউল ইসলাম বলেন, ‘আশির দশকে এই জনপদে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। ফলে ফটিকছড়ি থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে পড়ালেখা করি। এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় আমি কলেজের ছাত্র থাকলেও ছন ও বাঁশ দিয়ে স্কুলঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত ছিলাম। তারপর তিন যুগে এ জনপদে অনেক উন্নয়ন হলেও বিদ্যালয়ের প্রতি কারও সুনজর পড়েনি।’

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দেব বলেন, ‘শিক্ষক-সংকট, সৃষ্ট পদ কম হওয়ার বিষয়ে নিয়মিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য দিলেও শূন্যপদে শিক্ষক দিচ্ছে না।’

মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী বলেন, ‘উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জনবল-সংকটের বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা আছে। এ ছাড়া পদ বাড়ানো না হলে সময়োপযোগী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীরা।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা ঘোষ বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মচারীর সংকট নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তথ্য জমা দেওয়া সত্ত্বেও কেন শূন্যপদে জনবল দিচ্ছে না, বিষয়টি বুঝে আসছে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত