Ajker Patrika

জলবায়ু পরিবর্তন ও আগামী দিনের শিশু

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৮: ২১
জলবায়ু পরিবর্তন ও আগামী দিনের শিশু

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতে পড়বে বলে অনেক আগে থেকে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন। শুধু মানুষ, পশুপাখি নয়, এর ক্ষতিকর প্রভাবের শেষ নেই। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আজকের পত্রিকায় এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সব দেশের শিশুরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের শিশুরাও রয়েছে।

বাংলাদেশে প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে একজন মারাত্মকভাবে জলবায়ুঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ এমনিতেই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এ সময়টিতে নদীভাঙন এবং অসময়ে ঝড়, বন্যা হচ্ছে। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে শুষ্কতা এবং দক্ষিণবঙ্গে লবণাক্ততা বাড়ছে। ঋতুর পরিবর্তনেও মারাত্মক রূপবদল ঘটছে। এই সবকিছু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে। বন্যা এবং নদীভাঙনে মানুষের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয়দের অনেকে উদ্বাস্তু হয়। তারা অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে শহরে যেতে বাধ্য হয়। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা বেঁচে থাকার তাগিদে এবং পরিবারের জন্য কাজে নেমে পড়তে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ যতটা না আমাদের, তার চেয়েও বেশি দায়ী বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, চীনের পাশাপাশি রাশিয়া, ব্রিটেনসহ ইউরোপের দেশগুলো বিশ্বের মোট কার্বন নিঃসরণের ৫০ শতাংশের জন্য দায়ী। জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে দেশগুলো। ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বে ঘটছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ, বন্যা, খরা ও দাবানলের মতো ঘটনা।

অপরদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভুটানের দায় নেই বললেই চলে। এখানে যানবাহন ও শিল্পকারখানা থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়ে থাকে, তার তুলনায় অনেক বেশি কার্বন শোষণ করে দেশটি। বিশাল বন সেই কার্বনগুলো শুষে নেয়।

এক দশক আগে জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দরিদ্র দেশগুলোকে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আর সেভাবে বাস্তবায়ন হলো কই!

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। পৃথক জলবায়ু মন্ত্রণালয় গঠন করেছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে সত্যিকারের কাজ করতে হলে দক্ষিণবঙ্গের উপকূল রক্ষায় বড় ঢাল হিসেবে কাজ করা সুন্দরবন রক্ষার দিকে যেমন মনোযোগ দিতে হবে, তেমনি উপকূলের সবুজ বেষ্টনী বাড়ানো, পুরোনো বেড়িবাঁধ নতুন উচ্চতায় মজবুত করে নির্মাণ করতে হবে। এর সঙ্গে হাওরাঞ্চলে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।

এই বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে নিয়ে কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখতে পারে। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ শিশুসহ পৃথিবীকে রক্ষা করতে এর কোনো বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত