Ajker Patrika

কারফিউর মধ্যে ছুটছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
কারফিউর মধ্যে ছুটছে মানুষ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার বাসিন্দা রুবি বেগম। চুলায় গ্যাস না থাকায় দুই দিন ধরে তাঁর বাসায় রান্না হচ্ছে না। কারণ, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গ্যাসের প্রিপেইড কার্ড রিচার্জ করা যাচ্ছে না। তাই তিনি সমাধান চাইতে এসেছেন কারওয়ান বাজারের তিতাস গ্যাস ভবনে।

ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা হৃদয় রহমানের বাসায়ও একই সমস্যা। তিনিও এসেছেন তিতাস গ্যাস ভবনে। হৃদয় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগে মোবাইলে পাড়ার দোকান থেকে বিল পরিশোধ করতে পারতাম। অথচ এখন ইন্টারনেট না থাকায় দুই ঘণ্টা ধরে তিতাস ভবনের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কখন সমস্যার সমাধান হবে জানি না।’

শুধু রুবি কিংবা হৃদয় নন, গ্যাসের প্রিপেইড মিটারের ইউনিট শেষ হয়ে যাওয়ায় রাজধানী অনেক মানুষ এমন সংকটে পড়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজার তিতাস গ্যাস ভবনের সামনে ও পেছনে কয়েক শ মানুষকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ভবনের সামনে থাকা মানুষজন সারিতে দাঁড়ালেও পেছনের অংশে ছিল মানুষের জটলা।

বিদ্যুৎ নিয়েও একই রকম বিপদে আছেন গ্রাহকেরা। অনেকে বাসার বিদ্যুৎ চলে গেছে। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন অনেক মানুষ। রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকার বিদ্যুৎ অফিস ঘুরে মানুষের ভোগান্তির কথা জানা গেছে। আফতাবনগরের ডি ব্লকের ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) অফিসের সামনে দেখা যায় দুই শতাধিক মানুষের দীর্ঘ সারি। সেখানে মেরুল বাড্ডার বাসিন্দা মাকসুদা আক্তার জানান, তিন ঘণ্টা সিরিয়ালে অপেক্ষার পর ডেসকো অফিসে ঢুকতে পেরেছেন। তাঁর বিদ্যুতের লাইনে ইমার্জেন্সি ব্যালান্স বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

গতকাল দুপুরে বনশ্রীর ই ব্লকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) অফিসে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। গ্রাহকেরা এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ইমদাদুল হক বলেন, ‘টেলিভিশনে দেখেছি, জরুরিভাবে বিল নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এসে দেখছি, অফিস বন্ধ।’ 

অফিসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা জানান, সকাল থেকে অনেক মানুষ এসেছে। সার্ভারের সমস্যার কারণে বিল নেওয়া হচ্ছে না। তবে শ্যামলী, খামারবাড়িতে অবস্থিত ডিপিডিসি অফিসে তুলনামূলক গ্রাহকদের ভিড় কম দেখা গেছে। তাই বিদ্যুতের প্রি-পেইড গ্রাহকেরা সহজে রিচার্জ করতে পেরেছেন। তবে কারফিউর কারণে যানবাহন-সংকটে দূর থেকে আসা গ্রাহকেরা বেশ দুর্ভোগে পড়েছেন।

মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড থেকে খামারবাড়ি এলাকার সেচ ভবনে ডিপিডিসির সেন্টারে রিচার্জ করতে আসেন ফুয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আসাদ গেট পর্যন্ত রিকশা নিয়ে আসতে পারলেও ওখান থেকে সেচ ভবনে হেঁটে আসতে হয়েছে। এখানে আসামাত্র রিচার্জ পেয়েছি। তিন হাজার টাকা রিচার্জ করলাম। এখন টেনশনমুক্ত হলাম।’

সেচ ভবন সেন্টারের ডিপিডিসির সহকারী প্রকৌশলী চৌধুরী হাসান পারভেজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রথম দিন অনেক গ্রাহকের ভিড় ছিল। আমরা ১ হাজার ৬০০ গ্রাহককে রিচার্জ দিয়েছি। দ্বিতীয় দিন দিয়েছি প্রায় ১ হাজার ১০০ গ্রাহককে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৭০০ গ্রাহক রিচার্জ নিয়েছেন।’ 

জানতে চাইলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইন্টারনেটের কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের প্রি-পেইড গ্রাহকেরা বিল রিচার্জ করতে পারছেন না। বিকল্প হিসেবে ইমার্জেন্সি ব্যালান্সের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। গ্যাসের প্রি-পেইড রিচার্জের জন্য অফিসগুলোতে ম্যানুয়ালি রিচার্জের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোতে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত