আবু তাহের খান

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও (শিল্পনীতি ২০১৬) বিদ্যমান ওই প্রণোদনা-সুবিধা বহাল রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে (অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৪.৯)। কিন্তু গত ৩০ বছরে এর বাস্তব ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা কি কখনো মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে? এটি শুনতে খুবই ভালো শোনায় যে শিল্পনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দলিলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে ঘোষিত ওই প্রণোদনার প্রায় কোনো অংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো ওই কারুশিল্পীদের ভাগ্যে জোটেনি, কারুশিল্পীদের নাম করে তা ভোগ করেছেন বিত্তবান বণিকেরা।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) নাম করে অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ভোগ করেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ আসলে ওই পর্যায়ের উদ্যোক্তা নন, যাঁদের জন্য সভা-সেমিনারের আলোচনায় মুখরোচক মমতায় আমরা গলদঘর্ম হই। বস্তুত এসব মুখরোচক আলোচনার বেশির ভাগই অত্যন্ত অগভীর এবং এ খাতের বাস্তব চর্চা ও তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সামান্য কিছু তথ্য ও প্রয়োজনের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কয়েকজন এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নতুন এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন (প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। প্রস্তাবকারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি মুখরোচক ও অগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, যার সঙ্গে এ খাতের বাস্তব চাহিদা ও প্রয়োজনের কোনোই মিল নেই। একই অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁদের অন্য বক্তব্য থেকেই এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়, যেখানে তাঁরা মূলত ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজিধারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেটি খুবই যথার্থ।
কিন্তু এটি হয়তো তাঁদের গোচরে নেই অথবা তাঁরা খেয়াল করতে ভুলে গেছেন যে সরকারের সর্বশেষ শিল্পনীতি অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত সব শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (শিল্পনীতি ২০১৬-এর অধ্যায়-৩)। ফলে ৩০ কোটি টাকা বা এর কাছাকাছি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরাও যেহেতু মাঝারি উদ্যোক্তা, সেহেতু সংজ্ঞা অনুযায়ী বলার উপায় নেই যে মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আসলে অপেশাদারি হাতে প্রণীত সংজ্ঞার বিচারে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই সেই উদ্যোক্তা নন, যাঁরা এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতিনিধিত্ব করেন। এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা ৩০ কোটি টাকা বা তার কাছাকাছি পর্যায়ের নয়। তাদের চাহিদা আসলে খুবই অল্প—মাত্র ১০-২০ লাখ টাকা, যাঁদের কথা উল্লিখিত অনুষ্ঠানেও আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না এবং নিয়তই তাঁরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন মর্মে যে আচনা রয়েছে এবং ৭ সেপ্টেম্বরের উল্লিখিত আলোচনায়ও যেটি উঠে এসেছে, সেটি তো আসলে ওই ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণে আগ্রহীদের কথা। ফলে শেষোক্ত এই ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও প্রচুর কাগজপত্রের বোঝাবিহীন ঋণ নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যাংক নয়; বরং সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিল্পের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা। আর এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এর যৌক্তিকীকরণ না করার কারণে এ খাতের ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ লাভে আগ্রহীরা শুধু যে ছোট ছোট ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তা-ই নয়, এসএমই উদ্যোক্তা সেজে বড় উদ্যোক্তারাও ছোটদের শর্তে বিপুল পরিমাণ ঋণ বাগিয়ে নিচ্ছেন।

তা ছাড়া, একই প্রক্রিয়ায় সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সরকারকেও তাঁরা বিপুল পরিমাণ কর দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। যেমনটি বিরত থাকছেন হস্তশিল্পপণ্যের রপ্তানিকারকেরাও, যা এ লেখার গোড়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরূপ ন্যায্য কর থেকে বঞ্চিত হয়ে উল্লিখিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, অর্থাৎ বাজেটের আওতাধীন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সরকার তখন সাধারণ জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বসে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে উল্লিখিত ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার কারণে ছোট উদ্যোক্তারা শুধু ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, বাড়তি করের বোঝা পরিশোধ করতে গিয়ে কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষও।
এবার আসা যাক এসএমই ব্যাংকের কথায়। ক্ষুদ্রশিল্প খাতে অর্থায়নের জন্য বড় আকৃতির মূলধনসম্পন্ন বহুল আলোচিত বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাংক ফর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স’ (বেসিক ব্যাংক) ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে কাজ করে আসছে। বেসিক ব্যাংকের গঠনবিধি অনুযায়ী এর বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্রশিল্প খাতে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তারা তা করছেও। কিন্তু মূল সমস্যাটি সেই একই জায়গায়—সংজ্ঞায়। ক্ষুদ্রশিল্পের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসম্পন্ন যেকোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করলেই তাদের ঋণদানের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। ফলে দেখাই যাচ্ছে যে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণদানের সমুদয় শর্ত পূরণ হওয়ার পরও ঋণের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগা ১০-২০ লাখ টাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদার সিংহভাগই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। কারণ, বেসিক ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণদানের জন্য স্থাপিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের নিম্ন প্রান্তের ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ খুব কম।
দেশের অপরাপর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। বেসিক ব্যাংকের মতো তারাও এ ক্ষেত্রে সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে মূলত এসএমই খাতের ঊর্ধ্বাংশকেই পুষছে। তবে এসএমই খাতে ঋণদানের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংকের মতো তাদের ওপর যেহেতু কোনো গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রায় সবার মাঝেই নিম্ন প্রান্তের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণদানের ব্যাপারে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। অবশ্য এরপরও রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে মোটামুটি ধরনের ভূমিকা পালন করলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলতে গেলে অনেকটাই উদাসীন। আর গ্রামাঞ্চলে তো তাদের অধিকাংশের কোনো শাখাই নেই (অবশ্য গ্রামে তারা শাখা খুলতেও চায় না)। সে ক্ষেত্রে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য, যাদের বড় অংশের অবস্থানই গ্রামে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোই মূল ভরসা।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে এসএমই খাতে ঋণদানের জন্য নতুন ব্যাংক স্থাপনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে অনেকটাই আবেগপ্রসূত ধারণা বলে অভিহিত করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি একে বৈঠকি ধাঁচের মুখরোচক জনপ্রিয় আলোচনা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আসলে এ খাতের ঋণ-অভাবী উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদা পূরণের জন্য বস্তুতপক্ষে নতুন ব্যাংক নয়, প্রয়োজন হচ্ছে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ-সংক্রান্ত ঋণদান কার্যক্রমকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় উদ্যম ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে তার একটি বড় অংশই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে সে অব্যবহৃত সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে ব্যবহার এবং তাদের ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকরভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে তা রাষ্ট্রের তথা এ খাতের পরিচালন ব্যয়কেই কেবল বাড়িয়ে তুলবে, যা প্রকারান্তরে শেষ পর্যন্ত সাধারণ উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপবে।
পরিশেষে বলব, এসএমই খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভিত্তিক ঋণদান কার্যক্রমের আওতায় আনতে হলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে তার সমাধান হবে না। বাড়াতে হবে তার দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা। বিশেষ করে বেসিক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। বেসিক ব্যাংক যে প্রশংসনীয় দক্ষতা নিয়ে গোড়াতে কাজ শুরু করেছিল, সে অবস্থা যদি আবার ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এক বেসিক ব্যাংকই এ খাতের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
আর তার সঙ্গে বাদবাকি ব্যাংকগুলোর পুনর্বিন্যাসকৃত সামর্থ্যকে যদি যুক্ত করা সম্ভব হয় এবং তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ খাতের ঋণচাহিদা কখনোই হতাশার মুখে পড়বে বলে মনে হয় না। সেই সঙ্গে সংজ্ঞা পরিবর্তনের বিষয়টি তো রয়েছেই। বস্তুত বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের বিনিয়োগসীমাকে ব্যাপক হারে কমিয়ে এনে এমন স্তরে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও (শিল্পনীতি ২০১৬) বিদ্যমান ওই প্রণোদনা-সুবিধা বহাল রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে (অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৪.৯)। কিন্তু গত ৩০ বছরে এর বাস্তব ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা কি কখনো মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে? এটি শুনতে খুবই ভালো শোনায় যে শিল্পনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দলিলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে ঘোষিত ওই প্রণোদনার প্রায় কোনো অংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো ওই কারুশিল্পীদের ভাগ্যে জোটেনি, কারুশিল্পীদের নাম করে তা ভোগ করেছেন বিত্তবান বণিকেরা।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) নাম করে অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ভোগ করেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ আসলে ওই পর্যায়ের উদ্যোক্তা নন, যাঁদের জন্য সভা-সেমিনারের আলোচনায় মুখরোচক মমতায় আমরা গলদঘর্ম হই। বস্তুত এসব মুখরোচক আলোচনার বেশির ভাগই অত্যন্ত অগভীর এবং এ খাতের বাস্তব চর্চা ও তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সামান্য কিছু তথ্য ও প্রয়োজনের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কয়েকজন এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নতুন এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন (প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। প্রস্তাবকারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি মুখরোচক ও অগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, যার সঙ্গে এ খাতের বাস্তব চাহিদা ও প্রয়োজনের কোনোই মিল নেই। একই অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁদের অন্য বক্তব্য থেকেই এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়, যেখানে তাঁরা মূলত ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজিধারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেটি খুবই যথার্থ।
কিন্তু এটি হয়তো তাঁদের গোচরে নেই অথবা তাঁরা খেয়াল করতে ভুলে গেছেন যে সরকারের সর্বশেষ শিল্পনীতি অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত সব শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (শিল্পনীতি ২০১৬-এর অধ্যায়-৩)। ফলে ৩০ কোটি টাকা বা এর কাছাকাছি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরাও যেহেতু মাঝারি উদ্যোক্তা, সেহেতু সংজ্ঞা অনুযায়ী বলার উপায় নেই যে মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আসলে অপেশাদারি হাতে প্রণীত সংজ্ঞার বিচারে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই সেই উদ্যোক্তা নন, যাঁরা এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতিনিধিত্ব করেন। এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা ৩০ কোটি টাকা বা তার কাছাকাছি পর্যায়ের নয়। তাদের চাহিদা আসলে খুবই অল্প—মাত্র ১০-২০ লাখ টাকা, যাঁদের কথা উল্লিখিত অনুষ্ঠানেও আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না এবং নিয়তই তাঁরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন মর্মে যে আচনা রয়েছে এবং ৭ সেপ্টেম্বরের উল্লিখিত আলোচনায়ও যেটি উঠে এসেছে, সেটি তো আসলে ওই ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণে আগ্রহীদের কথা। ফলে শেষোক্ত এই ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও প্রচুর কাগজপত্রের বোঝাবিহীন ঋণ নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যাংক নয়; বরং সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিল্পের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা। আর এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এর যৌক্তিকীকরণ না করার কারণে এ খাতের ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ লাভে আগ্রহীরা শুধু যে ছোট ছোট ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তা-ই নয়, এসএমই উদ্যোক্তা সেজে বড় উদ্যোক্তারাও ছোটদের শর্তে বিপুল পরিমাণ ঋণ বাগিয়ে নিচ্ছেন।

তা ছাড়া, একই প্রক্রিয়ায় সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সরকারকেও তাঁরা বিপুল পরিমাণ কর দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। যেমনটি বিরত থাকছেন হস্তশিল্পপণ্যের রপ্তানিকারকেরাও, যা এ লেখার গোড়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরূপ ন্যায্য কর থেকে বঞ্চিত হয়ে উল্লিখিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, অর্থাৎ বাজেটের আওতাধীন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সরকার তখন সাধারণ জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বসে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে উল্লিখিত ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার কারণে ছোট উদ্যোক্তারা শুধু ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, বাড়তি করের বোঝা পরিশোধ করতে গিয়ে কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষও।
এবার আসা যাক এসএমই ব্যাংকের কথায়। ক্ষুদ্রশিল্প খাতে অর্থায়নের জন্য বড় আকৃতির মূলধনসম্পন্ন বহুল আলোচিত বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাংক ফর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স’ (বেসিক ব্যাংক) ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে কাজ করে আসছে। বেসিক ব্যাংকের গঠনবিধি অনুযায়ী এর বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্রশিল্প খাতে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তারা তা করছেও। কিন্তু মূল সমস্যাটি সেই একই জায়গায়—সংজ্ঞায়। ক্ষুদ্রশিল্পের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসম্পন্ন যেকোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করলেই তাদের ঋণদানের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। ফলে দেখাই যাচ্ছে যে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণদানের সমুদয় শর্ত পূরণ হওয়ার পরও ঋণের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগা ১০-২০ লাখ টাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদার সিংহভাগই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। কারণ, বেসিক ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণদানের জন্য স্থাপিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের নিম্ন প্রান্তের ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ খুব কম।
দেশের অপরাপর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। বেসিক ব্যাংকের মতো তারাও এ ক্ষেত্রে সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে মূলত এসএমই খাতের ঊর্ধ্বাংশকেই পুষছে। তবে এসএমই খাতে ঋণদানের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংকের মতো তাদের ওপর যেহেতু কোনো গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রায় সবার মাঝেই নিম্ন প্রান্তের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণদানের ব্যাপারে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। অবশ্য এরপরও রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে মোটামুটি ধরনের ভূমিকা পালন করলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলতে গেলে অনেকটাই উদাসীন। আর গ্রামাঞ্চলে তো তাদের অধিকাংশের কোনো শাখাই নেই (অবশ্য গ্রামে তারা শাখা খুলতেও চায় না)। সে ক্ষেত্রে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য, যাদের বড় অংশের অবস্থানই গ্রামে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোই মূল ভরসা।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে এসএমই খাতে ঋণদানের জন্য নতুন ব্যাংক স্থাপনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে অনেকটাই আবেগপ্রসূত ধারণা বলে অভিহিত করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি একে বৈঠকি ধাঁচের মুখরোচক জনপ্রিয় আলোচনা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আসলে এ খাতের ঋণ-অভাবী উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদা পূরণের জন্য বস্তুতপক্ষে নতুন ব্যাংক নয়, প্রয়োজন হচ্ছে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ-সংক্রান্ত ঋণদান কার্যক্রমকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় উদ্যম ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে তার একটি বড় অংশই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে সে অব্যবহৃত সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে ব্যবহার এবং তাদের ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকরভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে তা রাষ্ট্রের তথা এ খাতের পরিচালন ব্যয়কেই কেবল বাড়িয়ে তুলবে, যা প্রকারান্তরে শেষ পর্যন্ত সাধারণ উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপবে।
পরিশেষে বলব, এসএমই খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভিত্তিক ঋণদান কার্যক্রমের আওতায় আনতে হলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে তার সমাধান হবে না। বাড়াতে হবে তার দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা। বিশেষ করে বেসিক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। বেসিক ব্যাংক যে প্রশংসনীয় দক্ষতা নিয়ে গোড়াতে কাজ শুরু করেছিল, সে অবস্থা যদি আবার ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এক বেসিক ব্যাংকই এ খাতের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
আর তার সঙ্গে বাদবাকি ব্যাংকগুলোর পুনর্বিন্যাসকৃত সামর্থ্যকে যদি যুক্ত করা সম্ভব হয় এবং তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ খাতের ঋণচাহিদা কখনোই হতাশার মুখে পড়বে বলে মনে হয় না। সেই সঙ্গে সংজ্ঞা পরিবর্তনের বিষয়টি তো রয়েছেই। বস্তুত বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের বিনিয়োগসীমাকে ব্যাপক হারে কমিয়ে এনে এমন স্তরে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়
আবু তাহের খান

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও (শিল্পনীতি ২০১৬) বিদ্যমান ওই প্রণোদনা-সুবিধা বহাল রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে (অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৪.৯)। কিন্তু গত ৩০ বছরে এর বাস্তব ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা কি কখনো মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে? এটি শুনতে খুবই ভালো শোনায় যে শিল্পনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দলিলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে ঘোষিত ওই প্রণোদনার প্রায় কোনো অংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো ওই কারুশিল্পীদের ভাগ্যে জোটেনি, কারুশিল্পীদের নাম করে তা ভোগ করেছেন বিত্তবান বণিকেরা।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) নাম করে অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ভোগ করেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ আসলে ওই পর্যায়ের উদ্যোক্তা নন, যাঁদের জন্য সভা-সেমিনারের আলোচনায় মুখরোচক মমতায় আমরা গলদঘর্ম হই। বস্তুত এসব মুখরোচক আলোচনার বেশির ভাগই অত্যন্ত অগভীর এবং এ খাতের বাস্তব চর্চা ও তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সামান্য কিছু তথ্য ও প্রয়োজনের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কয়েকজন এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নতুন এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন (প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। প্রস্তাবকারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি মুখরোচক ও অগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, যার সঙ্গে এ খাতের বাস্তব চাহিদা ও প্রয়োজনের কোনোই মিল নেই। একই অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁদের অন্য বক্তব্য থেকেই এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়, যেখানে তাঁরা মূলত ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজিধারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেটি খুবই যথার্থ।
কিন্তু এটি হয়তো তাঁদের গোচরে নেই অথবা তাঁরা খেয়াল করতে ভুলে গেছেন যে সরকারের সর্বশেষ শিল্পনীতি অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত সব শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (শিল্পনীতি ২০১৬-এর অধ্যায়-৩)। ফলে ৩০ কোটি টাকা বা এর কাছাকাছি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরাও যেহেতু মাঝারি উদ্যোক্তা, সেহেতু সংজ্ঞা অনুযায়ী বলার উপায় নেই যে মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আসলে অপেশাদারি হাতে প্রণীত সংজ্ঞার বিচারে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই সেই উদ্যোক্তা নন, যাঁরা এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতিনিধিত্ব করেন। এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা ৩০ কোটি টাকা বা তার কাছাকাছি পর্যায়ের নয়। তাদের চাহিদা আসলে খুবই অল্প—মাত্র ১০-২০ লাখ টাকা, যাঁদের কথা উল্লিখিত অনুষ্ঠানেও আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না এবং নিয়তই তাঁরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন মর্মে যে আচনা রয়েছে এবং ৭ সেপ্টেম্বরের উল্লিখিত আলোচনায়ও যেটি উঠে এসেছে, সেটি তো আসলে ওই ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণে আগ্রহীদের কথা। ফলে শেষোক্ত এই ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও প্রচুর কাগজপত্রের বোঝাবিহীন ঋণ নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যাংক নয়; বরং সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিল্পের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা। আর এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এর যৌক্তিকীকরণ না করার কারণে এ খাতের ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ লাভে আগ্রহীরা শুধু যে ছোট ছোট ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তা-ই নয়, এসএমই উদ্যোক্তা সেজে বড় উদ্যোক্তারাও ছোটদের শর্তে বিপুল পরিমাণ ঋণ বাগিয়ে নিচ্ছেন।

তা ছাড়া, একই প্রক্রিয়ায় সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সরকারকেও তাঁরা বিপুল পরিমাণ কর দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। যেমনটি বিরত থাকছেন হস্তশিল্পপণ্যের রপ্তানিকারকেরাও, যা এ লেখার গোড়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরূপ ন্যায্য কর থেকে বঞ্চিত হয়ে উল্লিখিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, অর্থাৎ বাজেটের আওতাধীন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সরকার তখন সাধারণ জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বসে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে উল্লিখিত ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার কারণে ছোট উদ্যোক্তারা শুধু ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, বাড়তি করের বোঝা পরিশোধ করতে গিয়ে কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষও।
এবার আসা যাক এসএমই ব্যাংকের কথায়। ক্ষুদ্রশিল্প খাতে অর্থায়নের জন্য বড় আকৃতির মূলধনসম্পন্ন বহুল আলোচিত বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাংক ফর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স’ (বেসিক ব্যাংক) ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে কাজ করে আসছে। বেসিক ব্যাংকের গঠনবিধি অনুযায়ী এর বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্রশিল্প খাতে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তারা তা করছেও। কিন্তু মূল সমস্যাটি সেই একই জায়গায়—সংজ্ঞায়। ক্ষুদ্রশিল্পের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসম্পন্ন যেকোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করলেই তাদের ঋণদানের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। ফলে দেখাই যাচ্ছে যে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণদানের সমুদয় শর্ত পূরণ হওয়ার পরও ঋণের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগা ১০-২০ লাখ টাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদার সিংহভাগই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। কারণ, বেসিক ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণদানের জন্য স্থাপিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের নিম্ন প্রান্তের ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ খুব কম।
দেশের অপরাপর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। বেসিক ব্যাংকের মতো তারাও এ ক্ষেত্রে সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে মূলত এসএমই খাতের ঊর্ধ্বাংশকেই পুষছে। তবে এসএমই খাতে ঋণদানের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংকের মতো তাদের ওপর যেহেতু কোনো গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রায় সবার মাঝেই নিম্ন প্রান্তের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণদানের ব্যাপারে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। অবশ্য এরপরও রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে মোটামুটি ধরনের ভূমিকা পালন করলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলতে গেলে অনেকটাই উদাসীন। আর গ্রামাঞ্চলে তো তাদের অধিকাংশের কোনো শাখাই নেই (অবশ্য গ্রামে তারা শাখা খুলতেও চায় না)। সে ক্ষেত্রে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য, যাদের বড় অংশের অবস্থানই গ্রামে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোই মূল ভরসা।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে এসএমই খাতে ঋণদানের জন্য নতুন ব্যাংক স্থাপনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে অনেকটাই আবেগপ্রসূত ধারণা বলে অভিহিত করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি একে বৈঠকি ধাঁচের মুখরোচক জনপ্রিয় আলোচনা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আসলে এ খাতের ঋণ-অভাবী উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদা পূরণের জন্য বস্তুতপক্ষে নতুন ব্যাংক নয়, প্রয়োজন হচ্ছে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ-সংক্রান্ত ঋণদান কার্যক্রমকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় উদ্যম ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে তার একটি বড় অংশই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে সে অব্যবহৃত সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে ব্যবহার এবং তাদের ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকরভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে তা রাষ্ট্রের তথা এ খাতের পরিচালন ব্যয়কেই কেবল বাড়িয়ে তুলবে, যা প্রকারান্তরে শেষ পর্যন্ত সাধারণ উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপবে।
পরিশেষে বলব, এসএমই খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভিত্তিক ঋণদান কার্যক্রমের আওতায় আনতে হলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে তার সমাধান হবে না। বাড়াতে হবে তার দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা। বিশেষ করে বেসিক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। বেসিক ব্যাংক যে প্রশংসনীয় দক্ষতা নিয়ে গোড়াতে কাজ শুরু করেছিল, সে অবস্থা যদি আবার ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এক বেসিক ব্যাংকই এ খাতের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
আর তার সঙ্গে বাদবাকি ব্যাংকগুলোর পুনর্বিন্যাসকৃত সামর্থ্যকে যদি যুক্ত করা সম্ভব হয় এবং তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ খাতের ঋণচাহিদা কখনোই হতাশার মুখে পড়বে বলে মনে হয় না। সেই সঙ্গে সংজ্ঞা পরিবর্তনের বিষয়টি তো রয়েছেই। বস্তুত বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের বিনিয়োগসীমাকে ব্যাপক হারে কমিয়ে এনে এমন স্তরে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও (শিল্পনীতি ২০১৬) বিদ্যমান ওই প্রণোদনা-সুবিধা বহাল রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে (অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-৪.৯)। কিন্তু গত ৩০ বছরে এর বাস্তব ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা কি কখনো মূল্যায়ন বা পর্যালোচনা করে দেখা হয়েছে? এটি শুনতে খুবই ভালো শোনায় যে শিল্পনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দলিলে দরিদ্র ও প্রান্তিক কারুশিল্পীদের কথা ভাবা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে ঘোষিত ওই প্রণোদনার প্রায় কোনো অংশই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কখনো ওই কারুশিল্পীদের ভাগ্যে জোটেনি, কারুশিল্পীদের নাম করে তা ভোগ করেছেন বিত্তবান বণিকেরা।
একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) নাম করে অন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোক্তারা ভোগ করেছেন, তাঁদেরও অধিকাংশ আসলে ওই পর্যায়ের উদ্যোক্তা নন, যাঁদের জন্য সভা-সেমিনারের আলোচনায় মুখরোচক মমতায় আমরা গলদঘর্ম হই। বস্তুত এসব মুখরোচক আলোচনার বেশির ভাগই অত্যন্ত অগভীর এবং এ খাতের বাস্তব চর্চা ও তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যবিহীন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সামান্য কিছু তথ্য ও প্রয়োজনের কথা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইডিএলসি-প্রথম আলো এসএমই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তাদের কয়েকজন এ খাতের উদ্যোক্তাদের স্বার্থে নতুন এসএমই ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন (প্রথম আলো, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২)। প্রস্তাবকারীদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে বলি, প্রকৃতপক্ষে এটিও একটি মুখরোচক ও অগভীর চিন্তাপ্রসূত প্রস্তাব, যার সঙ্গে এ খাতের বাস্তব চাহিদা ও প্রয়োজনের কোনোই মিল নেই। একই অনুষ্ঠানে দেওয়া তাঁদের অন্য বক্তব্য থেকেই এর যথার্থতা প্রমাণিত হয়, যেখানে তাঁরা মূলত ৫-১০ লাখ টাকা পুঁজিধারী উদ্যোক্তাদের সমস্যাগুলোকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেটি খুবই যথার্থ।
কিন্তু এটি হয়তো তাঁদের গোচরে নেই অথবা তাঁরা খেয়াল করতে ভুলে গেছেন যে সরকারের সর্বশেষ শিল্পনীতি অনুযায়ী ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগসীমা পর্যন্ত সব শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (শিল্পনীতি ২০১৬-এর অধ্যায়-৩)। ফলে ৩০ কোটি টাকা বা এর কাছাকাছি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরাও যেহেতু মাঝারি উদ্যোক্তা, সেহেতু সংজ্ঞা অনুযায়ী বলার উপায় নেই যে মাঝারি উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। আসলে অপেশাদারি হাতে প্রণীত সংজ্ঞার বিচারে এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা কখনোই সেই উদ্যোক্তা নন, যাঁরা এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজন ও চাহিদার প্রতিনিধিত্ব করেন। এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা ৩০ কোটি টাকা বা তার কাছাকাছি পর্যায়ের নয়। তাদের চাহিদা আসলে খুবই অল্প—মাত্র ১০-২০ লাখ টাকা, যাঁদের কথা উল্লিখিত অনুষ্ঠানেও আলোচিত হয়েছে।
কিন্তু এসএমই উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না এবং নিয়তই তাঁরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন মর্মে যে আচনা রয়েছে এবং ৭ সেপ্টেম্বরের উল্লিখিত আলোচনায়ও যেটি উঠে এসেছে, সেটি তো আসলে ওই ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণে আগ্রহীদের কথা। ফলে শেষোক্ত এই ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য হয়রানিমুক্ত ও প্রচুর কাগজপত্রের বোঝাবিহীন ঋণ নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যাংক নয়; বরং সর্বাগ্রে প্রয়োজন শিল্পের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা। আর এই সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এর যৌক্তিকীকরণ না করার কারণে এ খাতের ১০-২০ লাখ টাকা ঋণ লাভে আগ্রহীরা শুধু যে ছোট ছোট ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন তা-ই নয়, এসএমই উদ্যোক্তা সেজে বড় উদ্যোক্তারাও ছোটদের শর্তে বিপুল পরিমাণ ঋণ বাগিয়ে নিচ্ছেন।

তা ছাড়া, একই প্রক্রিয়ায় সংজ্ঞার ফাঁক গলিয়ে সরকারকেও তাঁরা বিপুল পরিমাণ কর দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। যেমনটি বিরত থাকছেন হস্তশিল্পপণ্যের রপ্তানিকারকেরাও, যা এ লেখার গোড়াতেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর এরূপ ন্যায্য কর থেকে বঞ্চিত হয়ে উল্লিখিত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে, অর্থাৎ বাজেটের আওতাধীন রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সরকার তখন সাধারণ জনগণের ওপর নতুন করের বোঝা চাপিয়ে বসে। ফলে দেখা যাচ্ছে যে উল্লিখিত ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞার কারণে ছোট উদ্যোক্তারা শুধু ঋণ থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন না, বাড়তি করের বোঝা পরিশোধ করতে গিয়ে কষ্টের স্বীকার হচ্ছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষও।
এবার আসা যাক এসএমই ব্যাংকের কথায়। ক্ষুদ্রশিল্প খাতে অর্থায়নের জন্য বড় আকৃতির মূলধনসম্পন্ন বহুল আলোচিত বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ব্যাংক ফর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড কমার্স’ (বেসিক ব্যাংক) ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে কাজ করে আসছে। বেসিক ব্যাংকের গঠনবিধি অনুযায়ী এর বিনিয়োগযোগ্য ঋণ তহবিলের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ক্ষুদ্রশিল্প খাতে বিনিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং তারা তা করছেও। কিন্তু মূল সমস্যাটি সেই একই জায়গায়—সংজ্ঞায়। ক্ষুদ্রশিল্পের সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১৫ কোটি টাকা বিনিয়োগসম্পন্ন যেকোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করলেই তাদের ঋণদানের শর্ত পূরণ হয়ে যায়। ফলে দেখাই যাচ্ছে যে ক্ষুদ্রশিল্পে ঋণদানের সমুদয় শর্ত পূরণ হওয়ার পরও ঋণের অভাবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে ভোগা ১০-২০ লাখ টাকার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদার সিংহভাগই অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে। কারণ, বেসিক ব্যাংক ক্ষুদ্র শিল্পে ঋণদানের জন্য স্থাপিত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের নিম্ন প্রান্তের ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ খুব কম।
দেশের অপরাপর বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিবছর এসএমই খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। বেসিক ব্যাংকের মতো তারাও এ ক্ষেত্রে সংজ্ঞার সুযোগ নিয়ে মূলত এসএমই খাতের ঊর্ধ্বাংশকেই পুষছে। তবে এসএমই খাতে ঋণদানের ব্যাপারে বেসিক ব্যাংকের মতো তাদের ওপর যেহেতু কোনো গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা নেই, সেহেতু এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোরালো নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তাদের প্রায় সবার মাঝেই নিম্ন প্রান্তের উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণদানের ব্যাপারে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। অবশ্য এরপরও রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলো এ ব্যাপারে মোটামুটি ধরনের ভূমিকা পালন করলেও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বলতে গেলে অনেকটাই উদাসীন। আর গ্রামাঞ্চলে তো তাদের অধিকাংশের কোনো শাখাই নেই (অবশ্য গ্রামে তারা শাখা খুলতেও চায় না)। সে ক্ষেত্রে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য, যাদের বড় অংশের অবস্থানই গ্রামে, রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ব্যাংকগুলোই মূল ভরসা।
উপরিউক্ত পরিস্থিতিতে এসএমই খাতে ঋণদানের জন্য নতুন ব্যাংক স্থাপনের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাকে অনেকটাই আবেগপ্রসূত ধারণা বলে অভিহিত করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি একে বৈঠকি ধাঁচের মুখরোচক জনপ্রিয় আলোচনা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। আসলে এ খাতের ঋণ-অভাবী উদ্যোক্তাদের ঋণচাহিদা পূরণের জন্য বস্তুতপক্ষে নতুন ব্যাংক নয়, প্রয়োজন হচ্ছে বিদ্যমান আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ-সংক্রান্ত ঋণদান কার্যক্রমকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকর করে তোলা। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর যে সামর্থ্য ও সম্ভাবনা রয়েছে, প্রয়োজনীয় উদ্যম ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে তার একটি বড় অংশই অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। ফলে সে অব্যবহৃত সামর্থ্য ও সম্ভাবনাকে ব্যবহার এবং তাদের ব্যবস্থাপনাকে অধিকতর দক্ষ ও কার্যকরভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে একের পর এক নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলে তা রাষ্ট্রের তথা এ খাতের পরিচালন ব্যয়কেই কেবল বাড়িয়ে তুলবে, যা প্রকারান্তরে শেষ পর্যন্ত সাধারণ উদ্যোক্তাদের ঘাড়ে চাপবে।
পরিশেষে বলব, এসএমই খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তাদের ব্যাপকভিত্তিক ঋণদান কার্যক্রমের আওতায় আনতে হলে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে তার সমাধান হবে না। বাড়াতে হবে তার দক্ষতা ও কার্যক্ষমতা। বিশেষ করে বেসিক ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে হবে। বেসিক ব্যাংক যে প্রশংসনীয় দক্ষতা নিয়ে গোড়াতে কাজ শুরু করেছিল, সে অবস্থা যদি আবার ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে এক বেসিক ব্যাংকই এ খাতের চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
আর তার সঙ্গে বাদবাকি ব্যাংকগুলোর পুনর্বিন্যাসকৃত সামর্থ্যকে যদি যুক্ত করা সম্ভব হয় এবং তাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে এ খাতের ঋণচাহিদা কখনোই হতাশার মুখে পড়বে বলে মনে হয় না। সেই সঙ্গে সংজ্ঞা পরিবর্তনের বিষয়টি তো রয়েছেই। বস্তুত বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রশিল্পের বিনিয়োগসীমাকে ব্যাপক হারে কমিয়ে এনে এমন স্তরে নির্ধারণ করতে হবে, যাতে এ খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ উদ্যোক্তার ঋণচাহিদা সহজেই পূরণ করা সম্ভব হয়।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও
১১ অক্টোবর ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও
১১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও
১১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

শেষ প্রান্তিক পর্যায়ের দরিদ্র কারুশিল্পীদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিটি শিল্পনীতিতেই এরূপ একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত থাকছে যে হস্তশিল্প রপ্তানি থেকে আহরিত সমুদয় আয় আয়করমুক্ত সুবিধা পাবে। বর্তমান শিল্পনীতিতেও
১১ অক্টোবর ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২২ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫