Ajker Patrika

জনবলসংকটে চিকিৎসা ব্যাহত

ফরিদ রায়হান, অষ্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫: ২৪
Thumbnail image

কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলের সংকটে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে লক্ষাধিক টাকার রোগনির্ণয় কিট (রিএজেন্ট)। এ কারণে সহজ ও স্বল্প খরচের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রোগ নির্ণয়ে বাড়ছে রোগীর ভোগান্তি। দ্রুত রোগনির্ণয় সেবা চালুর দাবি সাধারণ মানুষের।

২২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মিঠামইন উপজেলা। এখানকার প্রায় দেড় লাখ মানুষের একমাত্র চিকিৎসালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পেলে যেতে হয় জেলা সদর হাসপাতাল, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ভাগলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। এতে চিকিৎসা ব্যয় ও সময় অনেক বেশি লাগে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ নভেম্বর রেডিওগ্রাফি টেকনিশিয়ান মো. আব্দুস সামাদ, ২০১৯ সালের ২৭ জুন এমটি ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. আহসান আজীম এবং ২০২০ সালে ডেন্টাল সার্জন বদলি হলে এসব পদ শূন্য হয়। এতে সংশ্লিষ্ট প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন বিকল থাকা এক্স-রে মেশিন মেরামত করা হলেও জনবলের অভাবে চালু করা যাচ্ছে না। ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে ডেন্টাল সার্জিক্যাল প্যাথলজি বিভাগ। ফলে গেল তিন বছর কয়েক লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন রিএজেন্ট ও এক্সে-রে ফিল্ম মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়ে আছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিচতলায় জরুরি বিভাগে প্রবেশের প্রধান দরজার ডান দিকে, প্যাথলজি ও এক্স-রে কক্ষের সামনের বারান্দায় অনেকগুলো কার্টন। এসব কার্টন কেন পড়ে আছে জানতে চাইলে একজন কর্মচারী বলেন, এসব মেয়াদোত্তীর্ণ রোগ শনাক্তকরণ কিট (রিএজেন্ট), তাই এখানে ফেলে রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেলে রাখা কিটের মধ্যে রয়েছে গ্লুকোজ রিএজেন্ট, সিরাম ক্রেটোনিন, সিরাম বিলিরুবিন, ব্লাড গ্রুপিং রিএজেন্ট, আরএ টেস্ট রিএজেন্ট, এইচআইভি, এইচসিভি, এইচবি, টিপিএইচসহ বহু রকমের রোগ নির্ণায়ক কিট (রিএজেন্ট) ও এক্স-রে ফিল্ম। প্রতিবছর স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষের নানা রোগ শনাক্ত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লক্ষাধিক টাকার রিএজেন্ট দেয় সরকার। এসব কিট দিয়ে ডায়াবেটিস, জন্ডিস, ব্লাড গ্রুপ, বাতজ্বর, হিউম্যান ইমুনিস্ট ভাইরাস, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস, হিমোগ্লোবিনসহ বহু রোগ নির্ণয় ও এক্স-রে করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ সাশ্রয়ী মূল্যে নিজ নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগ নির্ণয় করতে পারে। কিন্তু ২০১৮ সালের জুন থেকে মেডিকেল টেকনিশিয়ানের অভাবে স্থানীয় বাসিন্দারা বঞ্চিত হচ্ছেন বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা থেকে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। সর্বোপরি নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।

কেওয়ারজোড় ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের পান্না আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে খেলতে গিয়ে ব্যথা পায়। হাসপাতালের ডাক্তার বলেন এক্স-রে করাতে। এখন কিশোরগঞ্জে যেতে হবে। এখানে এক্স-রে হবে না।’

মিঠামইন সদর ইউনিয়নের হালিমা খাতুন বলেন, ‘কয়দিন ধরে জ্বরে ভুগছি। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। রক্ত পরীক্ষা করতে বলছে ডাক্তার। কিশোরগঞ্জ ছাড়া পরীক্ষা হবে না। আর ওখানে যাওয়ার টাকা ও শক্তি কোনোটাই নেই।’

মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক আব্দুল্লাহ আল শাফি মুঠোফোনে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট টেকনিশিয়ানের অভাবে বিভিন্ন প্রকার রিএজেন্ট বিনষ্টের সঙ্গে সঙ্গে জনগণ টেস্ট সেবা পাচ্ছে না। জনবলের সংকটে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত থেকে বিকল হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে অবহিত করেছি।’

কিশোরগঞ্জ সিভিল সার্জন সাইফুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘এই পদগুলোর সংকটের কথা জেনেছি। তবে নতুন নিয়োগে পদায়ন শুরু হলে এই সমস্যা থাকবে না। আশা করি দ্রুত সংশ্লিষ্ট পদে জনবল নিয়োগ বা পদায়ন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত