Ajker Patrika

ভরা মৌসুমে ইলিশের খরা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ জুন ২০২২, ১২: ০৮
ভরা মৌসুমে ইলিশের খরা

সাধারণত মধ্য মে থেকে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়। এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এ সময় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। অথচ ‍এবার লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে খুবই কম। তাই বাজারে অল্পসংখ্যক যে ইলিশ মিলছে, সেগুলোর দাম নাগালের বাইরে। এদিকে কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন জেলে ও আড়তদারেরা। ইলিশের আকালে হতাশ জেলেরা।

তবে মৎস্য বিভাগ জানায়, মেঘনা নদীতে নাব্যতা-সংকট ও ডুবোচরের কারণে সাগর থেকে ইলিশ আসতে বাধার মুখে পড়ছে। ফলে মেঘনায় মাছ ধরা পড়ছে না। চলতি মাস শেষে ইলিশ ধরা পড়বে, এমনটাই আশা।

এদিকে এক কেজির এক হালি ইলিশ ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা। এর কম ওজনের ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে; যা গত বছর আরও অনেক কম দাম ছিল বলে জানান ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। তাঁদের দাবি, গত বছর এক কেজির এক হালি ইলিশ ৪ হাজার টাকায় কেনা যেত। এবার সে মাছের অনেক দাম। তা-ও তো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মার্চ-এপ্রিলে নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর মাছ শিকারের আসায় নদীতে ছুটছেন জেলেরা। কিন্তু রাত-দিন জাল টেনেও নৌকার তেল খরচ করা টাকার মাছও পাওয়া যাচ্ছে না। মাছ না পাওয়ায় ঘাটে অলস সময় পার করছেন জেলেরা।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়, এ জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। তাঁদের মধ্যে নিবন্ধিত রয়েছে ৪২ হাজার জেলে। সবাই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে থাকেন এখানকার জেলেরা। এসব এলাকার ছোট-বড় প্রায় ৩০টি মাছঘাটে আড়তদার ও জেলেরা মাছ না পাওয়ায় অলস সময় পার করছেন। খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের এমন দুর্দিনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা। এতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে জেলে পরিবারে।

জেলে সরাফত মাঝি, কালু মাঝি, মুন্সী ঢালীসহ অনেকে জানান, দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে মাছ শিকার করছেন, তা দিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেলের খরচও মিলছে না। রোদ-বৃষ্টিতে নদীতে খাটলেও মিলছে না প্রত্যাশিত ইলিশ।

এ পরিস্থিতিতে নদীতে যেতে আগ্রহ হারাচ্ছেন মেঘনাপাড়ের জেলেরা। বাজারে ইলিশের আমদানি কম। কিন্তু দাম অনেক চড়া। বর্তমানে জেলেরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

এদিকে সদর উপজেলার মজুচৌধুরীরহাটের আড়তদার জিয়াউর রহমান মিন্টু ও কমলনগর মতিরহাট মাছঘাটের মৎস্যজীবী নেতা মেহেদী হাসান লিটন বলেন, গত বছর এমন মৌসুমে ঝাঁক ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে।

কিন্তু এবার নদীতে ইলিশ খুব কম। মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না পেয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মাছ ধরে জেলেরা আড়তে বিক্রি করবেন-এমন শর্তে দাদন নিয়েছেন। নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা না পড়ায় আড়তে মাছ আসছে না। জেলেরা দেনাও শোধ করতে পারছেন না। এবার দাদনের টাকা ওঠানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নদীতে ডুবোচর ও নাব্যতা সংকটে ইলিশ চলাচলে বাধার সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও নদীতে পানি বাড়লে ইলিশ ধরা পড়বে। তবে এখন বৃষ্টি হচ্ছে। গভীর সমুদ্র থেকে এখন নদীর মোহনায় ইলিশ আসবে। মৌসুমের শুরুতে না পড়লেও আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ইলিশ ধরা পড়বে। এবার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ হাজার মেট্রিক টন; যা গত বছরের চেয়ে ৫ হাজার মেট্রিক টন বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত