Ajker Patrika

সচিব সভা আজ: মন্ত্রী-সচিব দূরত্ব কমাতে নির্দেশনা আসতে পারে

উবায়দুল্লাহ বাদল, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৫৩
সচিব সভা আজ: মন্ত্রী-সচিব দূরত্ব কমাতে নির্দেশনা আসতে পারে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনোত্তর সরকারের অন্তত এক ডজন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে মন্ত্রী ও সচিবের মধ্যে বড় ধরনের দূরত্ব ছিল। ওই সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি, পদায়নসহ বেশির ভাগ প্রশাসনিক কাজে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবের ছিল উল্টো মত। মন্ত্রী চাইলে সচিব ঝুলিয়ে রাখতেন আর সচিব চাইলে মন্ত্রী নাকচ করে দিতেন। এতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে উন্নয়নমূলক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়।

মন্ত্রী ও সচিবদের মধ্যে এমন দূরত্ব কমানোর বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান আজ সোমবার ‘সচিব সভা’য় এই নির্দেশনা দিতে পারেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। 

সূত্রমতে, মন্ত্রী-সচিব দূরত্ব কমানো ছাড়াও আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো, বিদ্যুতের লোডশেডিং কমানো, সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনা, দুর্নীতি প্রতিরোধ প্রসঙ্গ সভায় গুরুত্ব পেতে পারে। সরকারের নানা উদ্যোগের পরও নিত্যপণ্যের দাম কেন সহনীয় পর্যায়ে আসছে না, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

জানা গেছে, সরকারপ্রধান প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠকে বসছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় সব সচিবকে উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সভায় কৃষি, খাদ্য, বাণিজ্য, শিল্প, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষাসহ অন্তত এক ডজন সচিবকে নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে বক্তব্য দিতে প্রস্তুতি রাখতে বলা হয়েছে। সচিবদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সচিব জানান, গত ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি সচিবদের সঙ্গে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয় চালাতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নবনিযুক্ত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আইনকানুনের মধ্যে থেকে সতর্কতার সঙ্গে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। এবার সচিবদের সঙ্গে বসে প্রধানমন্ত্রী একই ধরনের নির্দেশনা দিতে পারেন। কারণ, গত মেয়াদে কিছু মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-সচিব সম্পর্ক ছিল ‘দা-কুমড়া’র মতো। এসব নালিশ শুনতে শুনতে বিরক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। এবার মন্ত্রী-সচিব দূরত্ব কমানোর বিষয়ে অনুশাসন আসতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানিয়েছে, বর্তমান সরকারের আমলে এটি প্রথম সচিব সভা। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বশেষ সচিব সভা হয়েছিল ২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর। আজকের সভায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ, খাদ্য নিরাপত্তা, লোডশেডিং কমানো, শূন্য পদ পূরণসহ আগের সচিব সভার সিদ্ধান্তের অগ্রগতি এবং নতুন সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পেতে পারে। সচিব সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক বক্তব্যই মূল বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সচিব সভা নির্দিষ্ট অ্যাজেন্ডাভিত্তিক সীমিত আলোচনার ফোরাম নয়; তবে ইন্ডিকেটিভ অ্যাজেন্ডা থাকে। সেখানে কেবল মন্ত্রণালয়ভিত্তিক নয়, সার্বিক বিষয়ে মুক্ত আলোচনা হয়। সচিবদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অন্যান্য সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেখা হয়, কথা হয়। কিন্তু সচিব সভাই একমাত্র ফোরাম, যেখানে একসঙ্গে কেবল সব সচিব থাকেন। হতে পারে সেখানে নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে আগামী ৫ বছরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশল তুলে ধরবেন সরকারপ্রধান। সেখানে তিনি জনপ্রশাসন তথা সচিবদের কী করণীয়, তার দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। সচিবেরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের অভিজ্ঞতার আলোকে নিজ নিজ সুপারিশ তুলে ধরতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা চাইতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত