Ajker Patrika

অর্ধেক রেস্তোরাঁর নেই অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা

খান রফিক, বরিশাল
অর্ধেক রেস্তোরাঁর নেই অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা

বরিশাল নগরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ। কোথাও বাণিজ্যিক এলাকায়, আবার কোথাও আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে এসব রেস্তোরাঁ চালু করা হয়। এসবে অধিকাংশেরই সার্ভিস কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই। এমনকি রেস্তোরাঁগুলোতে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থাও নেই। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, নগরের অর্ধেক রেস্তোরাঁর ফায়ার লাইসেন্স নেই। যেগুলোর আছে, সেগুলো নিয়ম মানছে না।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অগ্নিনির্বাপণের শর্ত না মানলে রাজধানীর বেইলি রোডের মতো ট্র্যাজেডি বরিশাল নগরেও যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে।

জানা গেছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বরিশাল নগরের রূপাতলী হাউজিং এলাকায় সুগারী পেস্ট্রি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

ওই দিন অগ্নিনির্বাপণে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী জানান, দুর্ঘটনার শিকার রেস্তোরাঁটির মধ্যে গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল পাঁচটি। কিন্তু অগ্নিনির্বাপণ-ব্যবস্থা ছিল না। রেস্তোরাঁর মধ্যেই রান্নার কাজ চলে। পাশে চলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি)। এ কারণেই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এমনকি আগুন নেভাতে গিয়ে ঘটনাস্থলে মজুত (রিজার্ভ ট্যাংক) পানি পাওয়া যায় না। নগরের বাণিজ্যিক এলাকা কাঠপট্টি, চকবাজার, গীর্জা মহল্লায় রাস্তার দুই পাশে যেভাবে দোকানগুলোর পরিধি বাড়ানো হচ্ছে, তাতে সড়কে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকা দুষ্কর হয়ে পড়েছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বরিশালের ওয়ারহাউস ইন্সপেক্টর আব্বাস উদ্দিন বলেন, রেস্তোরাঁগুলোতে ফায়ার লাইসেন্সের শর্ত মানা হচ্ছে না। যেমন গত শনিবার নগরের রূপাতলীতে সুগারী পেস্ট্রি অ্যান্ড ডাইন রেস্তোরাঁয় যে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, সেটির ফায়ার লাইসেন্স ছিল না।

গতকাল শনিবার নগরীর গীর্জা মহল্লা, চকবাজার, কাঠপট্টি, পুলিশ লাইনস, নবগ্রাম রোড, চৌমাথা, সিঅ্যান্ডবি রোড, রূপাতলী, নথুল্লাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, দুই শতাধিক রেস্তোরাঁর অধিকাংশেরই বহির্গমনের বিকল্প পথ নেই। কোনো রেস্তোরাঁ আবার আবাসিক ভবনের কক্ষ ভাড়া নিয়ে গড়ে উঠেছে।

নগরের গীর্জা মহল্লায় নতুন গড়ে ওঠা কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁয় আসা পশ্চিম কাউনিয়ার এক গৃহবধূ বলেন, এই রেস্তোরাঁয় উঠতে হয় সরু সিঁড়ি দিয়ে। জরুরি প্রয়োজনে নেমে যাওয়ার আর বিকল্প পথ নেই। এটা আতঙ্কের বিষয়।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, ভারী খাবার বিক্রির রেস্তোরাঁগুলোতে গ্যাসের বড় বড় সিলিন্ডার থাকে। যেখানে বের হওয়ার একটিই পথ। আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকায় এমন অবস্থা থাকলে তো দুর্ঘটনা ঘটবেই। অগ্নিনির্বাপণের নিয়ম না মানলে ফায়ার সার্ভিস কেন সেসব দোকান বন্ধ করে দেয় না? প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।

বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, রেস্তোরাঁ করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র দরকার হবে। কিন্তু নগরে যে নতুন রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে, সেগুলোর অধিকাংশেরই ছাড়পত্র নেই। যে কারণে পরিবেশসম্মতভাবে এগুলো গড়ে উঠছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের বরিশালের সহকারী পরিচালক বেলাল উদ্দিন বলেন, বরিশাল নগরীতে যে অপরিকল্পিত অবকাঠামোয় রেস্তোরাঁ গড়ে উঠছে, সেগুলোর অধিকাংশই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে। শর্তানুযায়ী ফায়ার লাইসেন্স নিলেও অধিকাংশই নিয়ম মানছে না। নগরের ৫০ শতাংশ রেস্তোরাঁরই ফায়ার লাইসেন্স নেই।

আড়ালে-আবডালে এসব রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠার কারণ ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া। এসব অব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য শিগগির আবারও অভিযান শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত