মামুনুর রশীদ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।
অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। দুটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তাঁদের লেখা ও সমর্থনে অনেকেই নতুন নতুন বিষয় যোগ করেছেন। এর মধ্যে একদল সমর্থক বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সস্তা বিনোদন এখন সময়ের দাবি। শিল্প-সাহিত্য পড়ে বা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিনোদন পাওয়া মানুষ দারুণভাবে কম। চিন্তাহীন একেবারে স্থূল বিনোদনে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক বিশ্বাস করে। যে কারণে দেখা যায় মননসমৃদ্ধ কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র এসবের আবেদনও কমে যাচ্ছে। আর যাঁরা স্থূল বিনোদন সৃষ্টি করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ভিউ, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি। কাজেই ওই নামগুলো উচ্চারিত হলে তাঁদের ভিউ বেড়ে যাবে এবং টাকা আসতে থাকবে। তাই এসব ব্যাপার বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই পথ অনুসরণ করে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং সুরুচিবান মানুষ মুখ খোলেননি এবং এটিকে তাঁরা কোনো আলোচনার বিষয় বলেও মনে করেন না। বিপরীত দিকে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির সত্যতা বিবেচনা করেই যৌক্তিক আলোচনার পথ ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থা। যখন খুশি যাকে-তাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যাচার করা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোকও আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও আছেন। আর আছেন নিরাপদে বসবাসকারী কিছু প্রবাসী। নিজেদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যাঁরা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন। তাঁদের কোনো লোকলজ্জার ভয়ও নেই। একটা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়ার পর যখন চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসে, তখন তাঁরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে দুটো কথা বলে ছিনতাইকারীর মতো পালিয়ে যান।
প্রশ্ন উঠেছে—জনপরিচিতি আর জনপ্রিয়তা কি এক? চুরি করে, ডাকাতি করে বা একটা ঘৃণ্য কাজ করে কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করতে পারে। সেই পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়া কঠিন। কারণ, তার সঙ্গে থাকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, শিল্পের উৎকর্ষ এবং থাকে ঈর্ষা। আমার এক বন্ধু একটি ফারসি বয়েতের কথা প্রায়ই বলে থাকেন—যখন ভালো কাজের জন্য সুখ্যাতি আসে, তখন বন্ধুরা শীতের পাতার মতো ঝরে যায় আর শত্রুরা বসন্তের পাতার মতো গজাতে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাঁরা এই সব কর্মের সমঝদার, তাঁরা নিজেরা এসব দেখেন না, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কখনো দেখার জন্য পাঠানও না। কিন্তু ওই দুষ্কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজেকে জাহির করতে চান।
আরেক ধরনের মানুষ আছেন—ব্যর্থ বাম। তাঁদের একাংশ কোনো বাম কর্মকাণ্ডে এখন আর নেই। কোনো একটি ক্ষমতাসীন দলে লেজুড় হয়ে বর্তমানে জীবনযাপন করেন। তাঁদের মাথার এক কোণে হয়তো বসবাস করে নিম্নবর্গ-উচ্চবর্গ এই সব। কারণ শ্রেণিসংগ্রাম থেকে তাঁরা বহু আগেই অবসর নিয়েছেন। তাঁরা জানেন না শিল্প-সাহিত্য নিম্নবর্গের মানুষেরই সৃষ্টি। নগরজীবন শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই নিম্নবর্গের মানুষেরাই শিল্প সৃষ্টি করত, তাদের শিল্প কালজয়ী হয়ে থাকত। আমাদের দেশের প্রায় কালজয়ী শিল্পই নিরক্ষর শিল্পীদের মুখে মুখে তৈরি। এই শিল্প যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিনোদন দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। এ ক্ষেত্রে আজকের তথাকথিত শিক্ষিত কিছু কিছু ইউটিউবার কতটা সৃষ্টিশীল হতে পেরেছেন? এ বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেউ তর্কের খাতিরে তর্ক এবং ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণে তাঁরা দিনরাত অস্ত্র শাণ দিয়ে চলেছেন।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু মাধ্যম মানুষের কাজেও লাগে। আমাদের সমাজে দুর্বৃত্তায়ন খুবই লক্ষণীয় বিষয়। সেটা রাজনীতিতে হোক, শিক্ষায় হোক, শিল্পে হোক, ব্যবসায় হোক—সর্বত্র এটিকে যদি আমরা স্বচ্ছভাবে না দেখতে পাই তাহলে এক ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। খুব সহজে সস্তা বিনোদন পেয়ে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। তাদের সামনে নদী লুট হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখার শক্তি ক্রমেই তারা হারিয়ে ফেলছে। স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অভিভাবকেরা সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ করছেন না। ক্লাসে না পড়িয়ে কিছু শিক্ষক বিকেলবেলা কোচিংয়ে একই বিষয় পড়াচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। সেই শিক্ষক সরকার থেকে এবং ছাত্রদের কাছ থেকেও বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের প্রাকৃতিক নদীর বালু উত্তোলন করে নানা উপায়ে কিছু লোক অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে। একেবারে পরিকল্পনাহীন এই বালু উত্তোলন নদীর গতিপথকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটিকে রোধ করা কি ইউটিউবারদের বক্তব্য? না, তাঁদের কর্তব্য না; বরং তাঁরা একে আড়াল করেছেন আর সুস্থ সংস্কৃতিমান ব্যক্তি এটার প্রতিবাদ করছেন। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের দশকে, এমনকি আশির দশকেও মানুষকে শোষণ-নির্যাতন বোঝানো যেত, এখন মানুষের কাছে মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর তথ্য আছে। কিন্তু এর প্রতিরোধ করার নৈতিক শক্তি কি আছে? এই নৈতিক শক্তিটা কোথা থেকে আসে? যথার্থ শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে আসে।
যখনই কোনো দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে বিপ্লবীরা প্রথমেই অনুধাবন করেছেন, মানুষের শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য প্রয়োজন। তাই তাঁরা প্রচুর বই প্রকাশ করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন, ভাস্কর্য ও শিল্পকলার জন্য প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, বর্তমানে কিউবা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এসব আয়োজন করেছে সব সময়। কিন্তু যখনই এসবের ঘাটতি দেখা যায়, ডুবে যায় সস্তা বিনোদনের সামগ্রীতে, তখনই সে দেশের মানুষের মধ্যে বিকৃতি আসে। সুস্থ সংস্কৃতির বদলে উপজীব্য হয়ে উঠতে দেখা যায় বিকৃতি ও অস্থিরতা। বর্তমানে আমাদের দেশকেও তা স্পর্শ করেছে। সর্বত্র টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা এবং অসুস্থ অর্থ, অসুস্থ ভোগেরও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বলছেন, জ্ঞানের বাজার কমে গেছে। এটা সত্যি কিন্তু কোন বাজারটা বাড়ছে? ভোগের বাজারটা বাড়ছে। সেই ভোগ আসে অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে।
আজকের দিনে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মিডিয়া। এই মুক্ত মিডিয়ায় যে কেউ একটি বিনোদনের লাড্ডু ফেলে দিতে পারে, সেখানে খাওয়ার লোকের অভাব হচ্ছে না। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধেই কিছু কথা চারদিক থেকে হচ্ছে। কিন্তু এত সুবিধাবাদী মহল তৈরি হয়েছে যে তাদের লোভ-লালসার কাছে সত্যকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও এ কথা অমোঘ সত্য যে পৃথিবীতে খুব অল্পসংখ্যক লোকই সত্যকে ধরে রাখে। ছোট ছোট লোভ তার সঙ্গে খোঁড়া যুক্তিবাদ, ক্ষমতার কাছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা—সবটা মিলে একটা জগৎ তৈরি হয়েছে; যা শুধুই রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে দেয়। রুচির দুর্ভিক্ষের সঙ্গে চিন্তার দুর্ভিক্ষ, শিল্পের দুর্ভিক্ষ দিন দিন বাড়ছেই। এই দুর্ভিক্ষ রোধে দেশের সচেতন মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কয়েক দিন আগে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষক পড়াতে পারেন না বলে। ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে—তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইকে বাতিল করা হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকদের ত্রুটি সংশোধন করে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থাও যে কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল। যাঁরা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, তাঁরা যথার্থই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মানুষ প্রতি মুহূর্তে সমাজের নানাবিধ লোকের কাছে সুবিচার কামনা করে। সেই সুবিচার না পেয়ে তারাও নৈরাজ্যবাদী হয়ে পড়ে। তাই এই নৈরাজ্যেরকালে সাদাকে সাদা বলা এবং কালোকে কালো বলা এক কঠিন সংকটে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্য দিয়েই নানান কৌশলে মানুষকে শুধু শোষণ নয়, তার চিন্তার যে মেরুদণ্ড, তাকেও ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সংস্কৃতির এই সংকটে এবং রুচির দুর্ভিক্ষে আমরা কি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।
অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। দুটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তাঁদের লেখা ও সমর্থনে অনেকেই নতুন নতুন বিষয় যোগ করেছেন। এর মধ্যে একদল সমর্থক বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সস্তা বিনোদন এখন সময়ের দাবি। শিল্প-সাহিত্য পড়ে বা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিনোদন পাওয়া মানুষ দারুণভাবে কম। চিন্তাহীন একেবারে স্থূল বিনোদনে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক বিশ্বাস করে। যে কারণে দেখা যায় মননসমৃদ্ধ কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র এসবের আবেদনও কমে যাচ্ছে। আর যাঁরা স্থূল বিনোদন সৃষ্টি করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ভিউ, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি। কাজেই ওই নামগুলো উচ্চারিত হলে তাঁদের ভিউ বেড়ে যাবে এবং টাকা আসতে থাকবে। তাই এসব ব্যাপার বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই পথ অনুসরণ করে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং সুরুচিবান মানুষ মুখ খোলেননি এবং এটিকে তাঁরা কোনো আলোচনার বিষয় বলেও মনে করেন না। বিপরীত দিকে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির সত্যতা বিবেচনা করেই যৌক্তিক আলোচনার পথ ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থা। যখন খুশি যাকে-তাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যাচার করা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোকও আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও আছেন। আর আছেন নিরাপদে বসবাসকারী কিছু প্রবাসী। নিজেদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যাঁরা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন। তাঁদের কোনো লোকলজ্জার ভয়ও নেই। একটা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়ার পর যখন চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসে, তখন তাঁরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে দুটো কথা বলে ছিনতাইকারীর মতো পালিয়ে যান।
প্রশ্ন উঠেছে—জনপরিচিতি আর জনপ্রিয়তা কি এক? চুরি করে, ডাকাতি করে বা একটা ঘৃণ্য কাজ করে কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করতে পারে। সেই পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়া কঠিন। কারণ, তার সঙ্গে থাকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, শিল্পের উৎকর্ষ এবং থাকে ঈর্ষা। আমার এক বন্ধু একটি ফারসি বয়েতের কথা প্রায়ই বলে থাকেন—যখন ভালো কাজের জন্য সুখ্যাতি আসে, তখন বন্ধুরা শীতের পাতার মতো ঝরে যায় আর শত্রুরা বসন্তের পাতার মতো গজাতে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাঁরা এই সব কর্মের সমঝদার, তাঁরা নিজেরা এসব দেখেন না, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কখনো দেখার জন্য পাঠানও না। কিন্তু ওই দুষ্কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজেকে জাহির করতে চান।
আরেক ধরনের মানুষ আছেন—ব্যর্থ বাম। তাঁদের একাংশ কোনো বাম কর্মকাণ্ডে এখন আর নেই। কোনো একটি ক্ষমতাসীন দলে লেজুড় হয়ে বর্তমানে জীবনযাপন করেন। তাঁদের মাথার এক কোণে হয়তো বসবাস করে নিম্নবর্গ-উচ্চবর্গ এই সব। কারণ শ্রেণিসংগ্রাম থেকে তাঁরা বহু আগেই অবসর নিয়েছেন। তাঁরা জানেন না শিল্প-সাহিত্য নিম্নবর্গের মানুষেরই সৃষ্টি। নগরজীবন শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই নিম্নবর্গের মানুষেরাই শিল্প সৃষ্টি করত, তাদের শিল্প কালজয়ী হয়ে থাকত। আমাদের দেশের প্রায় কালজয়ী শিল্পই নিরক্ষর শিল্পীদের মুখে মুখে তৈরি। এই শিল্প যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিনোদন দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। এ ক্ষেত্রে আজকের তথাকথিত শিক্ষিত কিছু কিছু ইউটিউবার কতটা সৃষ্টিশীল হতে পেরেছেন? এ বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেউ তর্কের খাতিরে তর্ক এবং ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণে তাঁরা দিনরাত অস্ত্র শাণ দিয়ে চলেছেন।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু মাধ্যম মানুষের কাজেও লাগে। আমাদের সমাজে দুর্বৃত্তায়ন খুবই লক্ষণীয় বিষয়। সেটা রাজনীতিতে হোক, শিক্ষায় হোক, শিল্পে হোক, ব্যবসায় হোক—সর্বত্র এটিকে যদি আমরা স্বচ্ছভাবে না দেখতে পাই তাহলে এক ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। খুব সহজে সস্তা বিনোদন পেয়ে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। তাদের সামনে নদী লুট হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখার শক্তি ক্রমেই তারা হারিয়ে ফেলছে। স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অভিভাবকেরা সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ করছেন না। ক্লাসে না পড়িয়ে কিছু শিক্ষক বিকেলবেলা কোচিংয়ে একই বিষয় পড়াচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। সেই শিক্ষক সরকার থেকে এবং ছাত্রদের কাছ থেকেও বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের প্রাকৃতিক নদীর বালু উত্তোলন করে নানা উপায়ে কিছু লোক অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে। একেবারে পরিকল্পনাহীন এই বালু উত্তোলন নদীর গতিপথকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটিকে রোধ করা কি ইউটিউবারদের বক্তব্য? না, তাঁদের কর্তব্য না; বরং তাঁরা একে আড়াল করেছেন আর সুস্থ সংস্কৃতিমান ব্যক্তি এটার প্রতিবাদ করছেন। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের দশকে, এমনকি আশির দশকেও মানুষকে শোষণ-নির্যাতন বোঝানো যেত, এখন মানুষের কাছে মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর তথ্য আছে। কিন্তু এর প্রতিরোধ করার নৈতিক শক্তি কি আছে? এই নৈতিক শক্তিটা কোথা থেকে আসে? যথার্থ শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে আসে।
যখনই কোনো দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে বিপ্লবীরা প্রথমেই অনুধাবন করেছেন, মানুষের শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য প্রয়োজন। তাই তাঁরা প্রচুর বই প্রকাশ করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন, ভাস্কর্য ও শিল্পকলার জন্য প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, বর্তমানে কিউবা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এসব আয়োজন করেছে সব সময়। কিন্তু যখনই এসবের ঘাটতি দেখা যায়, ডুবে যায় সস্তা বিনোদনের সামগ্রীতে, তখনই সে দেশের মানুষের মধ্যে বিকৃতি আসে। সুস্থ সংস্কৃতির বদলে উপজীব্য হয়ে উঠতে দেখা যায় বিকৃতি ও অস্থিরতা। বর্তমানে আমাদের দেশকেও তা স্পর্শ করেছে। সর্বত্র টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা এবং অসুস্থ অর্থ, অসুস্থ ভোগেরও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বলছেন, জ্ঞানের বাজার কমে গেছে। এটা সত্যি কিন্তু কোন বাজারটা বাড়ছে? ভোগের বাজারটা বাড়ছে। সেই ভোগ আসে অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে।
আজকের দিনে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মিডিয়া। এই মুক্ত মিডিয়ায় যে কেউ একটি বিনোদনের লাড্ডু ফেলে দিতে পারে, সেখানে খাওয়ার লোকের অভাব হচ্ছে না। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধেই কিছু কথা চারদিক থেকে হচ্ছে। কিন্তু এত সুবিধাবাদী মহল তৈরি হয়েছে যে তাদের লোভ-লালসার কাছে সত্যকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও এ কথা অমোঘ সত্য যে পৃথিবীতে খুব অল্পসংখ্যক লোকই সত্যকে ধরে রাখে। ছোট ছোট লোভ তার সঙ্গে খোঁড়া যুক্তিবাদ, ক্ষমতার কাছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা—সবটা মিলে একটা জগৎ তৈরি হয়েছে; যা শুধুই রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে দেয়। রুচির দুর্ভিক্ষের সঙ্গে চিন্তার দুর্ভিক্ষ, শিল্পের দুর্ভিক্ষ দিন দিন বাড়ছেই। এই দুর্ভিক্ষ রোধে দেশের সচেতন মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কয়েক দিন আগে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষক পড়াতে পারেন না বলে। ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে—তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইকে বাতিল করা হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকদের ত্রুটি সংশোধন করে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থাও যে কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল। যাঁরা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, তাঁরা যথার্থই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মানুষ প্রতি মুহূর্তে সমাজের নানাবিধ লোকের কাছে সুবিচার কামনা করে। সেই সুবিচার না পেয়ে তারাও নৈরাজ্যবাদী হয়ে পড়ে। তাই এই নৈরাজ্যেরকালে সাদাকে সাদা বলা এবং কালোকে কালো বলা এক কঠিন সংকটে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্য দিয়েই নানান কৌশলে মানুষকে শুধু শোষণ নয়, তার চিন্তার যে মেরুদণ্ড, তাকেও ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সংস্কৃতির এই সংকটে এবং রুচির দুর্ভিক্ষে আমরা কি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
মামুনুর রশীদ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।
অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। দুটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তাঁদের লেখা ও সমর্থনে অনেকেই নতুন নতুন বিষয় যোগ করেছেন। এর মধ্যে একদল সমর্থক বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সস্তা বিনোদন এখন সময়ের দাবি। শিল্প-সাহিত্য পড়ে বা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিনোদন পাওয়া মানুষ দারুণভাবে কম। চিন্তাহীন একেবারে স্থূল বিনোদনে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক বিশ্বাস করে। যে কারণে দেখা যায় মননসমৃদ্ধ কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র এসবের আবেদনও কমে যাচ্ছে। আর যাঁরা স্থূল বিনোদন সৃষ্টি করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ভিউ, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি। কাজেই ওই নামগুলো উচ্চারিত হলে তাঁদের ভিউ বেড়ে যাবে এবং টাকা আসতে থাকবে। তাই এসব ব্যাপার বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই পথ অনুসরণ করে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং সুরুচিবান মানুষ মুখ খোলেননি এবং এটিকে তাঁরা কোনো আলোচনার বিষয় বলেও মনে করেন না। বিপরীত দিকে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির সত্যতা বিবেচনা করেই যৌক্তিক আলোচনার পথ ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থা। যখন খুশি যাকে-তাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যাচার করা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোকও আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও আছেন। আর আছেন নিরাপদে বসবাসকারী কিছু প্রবাসী। নিজেদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যাঁরা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন। তাঁদের কোনো লোকলজ্জার ভয়ও নেই। একটা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়ার পর যখন চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসে, তখন তাঁরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে দুটো কথা বলে ছিনতাইকারীর মতো পালিয়ে যান।
প্রশ্ন উঠেছে—জনপরিচিতি আর জনপ্রিয়তা কি এক? চুরি করে, ডাকাতি করে বা একটা ঘৃণ্য কাজ করে কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করতে পারে। সেই পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়া কঠিন। কারণ, তার সঙ্গে থাকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, শিল্পের উৎকর্ষ এবং থাকে ঈর্ষা। আমার এক বন্ধু একটি ফারসি বয়েতের কথা প্রায়ই বলে থাকেন—যখন ভালো কাজের জন্য সুখ্যাতি আসে, তখন বন্ধুরা শীতের পাতার মতো ঝরে যায় আর শত্রুরা বসন্তের পাতার মতো গজাতে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাঁরা এই সব কর্মের সমঝদার, তাঁরা নিজেরা এসব দেখেন না, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কখনো দেখার জন্য পাঠানও না। কিন্তু ওই দুষ্কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজেকে জাহির করতে চান।
আরেক ধরনের মানুষ আছেন—ব্যর্থ বাম। তাঁদের একাংশ কোনো বাম কর্মকাণ্ডে এখন আর নেই। কোনো একটি ক্ষমতাসীন দলে লেজুড় হয়ে বর্তমানে জীবনযাপন করেন। তাঁদের মাথার এক কোণে হয়তো বসবাস করে নিম্নবর্গ-উচ্চবর্গ এই সব। কারণ শ্রেণিসংগ্রাম থেকে তাঁরা বহু আগেই অবসর নিয়েছেন। তাঁরা জানেন না শিল্প-সাহিত্য নিম্নবর্গের মানুষেরই সৃষ্টি। নগরজীবন শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই নিম্নবর্গের মানুষেরাই শিল্প সৃষ্টি করত, তাদের শিল্প কালজয়ী হয়ে থাকত। আমাদের দেশের প্রায় কালজয়ী শিল্পই নিরক্ষর শিল্পীদের মুখে মুখে তৈরি। এই শিল্প যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিনোদন দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। এ ক্ষেত্রে আজকের তথাকথিত শিক্ষিত কিছু কিছু ইউটিউবার কতটা সৃষ্টিশীল হতে পেরেছেন? এ বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেউ তর্কের খাতিরে তর্ক এবং ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণে তাঁরা দিনরাত অস্ত্র শাণ দিয়ে চলেছেন।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু মাধ্যম মানুষের কাজেও লাগে। আমাদের সমাজে দুর্বৃত্তায়ন খুবই লক্ষণীয় বিষয়। সেটা রাজনীতিতে হোক, শিক্ষায় হোক, শিল্পে হোক, ব্যবসায় হোক—সর্বত্র এটিকে যদি আমরা স্বচ্ছভাবে না দেখতে পাই তাহলে এক ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। খুব সহজে সস্তা বিনোদন পেয়ে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। তাদের সামনে নদী লুট হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখার শক্তি ক্রমেই তারা হারিয়ে ফেলছে। স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অভিভাবকেরা সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ করছেন না। ক্লাসে না পড়িয়ে কিছু শিক্ষক বিকেলবেলা কোচিংয়ে একই বিষয় পড়াচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। সেই শিক্ষক সরকার থেকে এবং ছাত্রদের কাছ থেকেও বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের প্রাকৃতিক নদীর বালু উত্তোলন করে নানা উপায়ে কিছু লোক অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে। একেবারে পরিকল্পনাহীন এই বালু উত্তোলন নদীর গতিপথকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটিকে রোধ করা কি ইউটিউবারদের বক্তব্য? না, তাঁদের কর্তব্য না; বরং তাঁরা একে আড়াল করেছেন আর সুস্থ সংস্কৃতিমান ব্যক্তি এটার প্রতিবাদ করছেন। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের দশকে, এমনকি আশির দশকেও মানুষকে শোষণ-নির্যাতন বোঝানো যেত, এখন মানুষের কাছে মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর তথ্য আছে। কিন্তু এর প্রতিরোধ করার নৈতিক শক্তি কি আছে? এই নৈতিক শক্তিটা কোথা থেকে আসে? যথার্থ শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে আসে।
যখনই কোনো দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে বিপ্লবীরা প্রথমেই অনুধাবন করেছেন, মানুষের শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য প্রয়োজন। তাই তাঁরা প্রচুর বই প্রকাশ করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন, ভাস্কর্য ও শিল্পকলার জন্য প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, বর্তমানে কিউবা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এসব আয়োজন করেছে সব সময়। কিন্তু যখনই এসবের ঘাটতি দেখা যায়, ডুবে যায় সস্তা বিনোদনের সামগ্রীতে, তখনই সে দেশের মানুষের মধ্যে বিকৃতি আসে। সুস্থ সংস্কৃতির বদলে উপজীব্য হয়ে উঠতে দেখা যায় বিকৃতি ও অস্থিরতা। বর্তমানে আমাদের দেশকেও তা স্পর্শ করেছে। সর্বত্র টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা এবং অসুস্থ অর্থ, অসুস্থ ভোগেরও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বলছেন, জ্ঞানের বাজার কমে গেছে। এটা সত্যি কিন্তু কোন বাজারটা বাড়ছে? ভোগের বাজারটা বাড়ছে। সেই ভোগ আসে অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে।
আজকের দিনে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মিডিয়া। এই মুক্ত মিডিয়ায় যে কেউ একটি বিনোদনের লাড্ডু ফেলে দিতে পারে, সেখানে খাওয়ার লোকের অভাব হচ্ছে না। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধেই কিছু কথা চারদিক থেকে হচ্ছে। কিন্তু এত সুবিধাবাদী মহল তৈরি হয়েছে যে তাদের লোভ-লালসার কাছে সত্যকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও এ কথা অমোঘ সত্য যে পৃথিবীতে খুব অল্পসংখ্যক লোকই সত্যকে ধরে রাখে। ছোট ছোট লোভ তার সঙ্গে খোঁড়া যুক্তিবাদ, ক্ষমতার কাছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা—সবটা মিলে একটা জগৎ তৈরি হয়েছে; যা শুধুই রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে দেয়। রুচির দুর্ভিক্ষের সঙ্গে চিন্তার দুর্ভিক্ষ, শিল্পের দুর্ভিক্ষ দিন দিন বাড়ছেই। এই দুর্ভিক্ষ রোধে দেশের সচেতন মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কয়েক দিন আগে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষক পড়াতে পারেন না বলে। ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে—তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইকে বাতিল করা হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকদের ত্রুটি সংশোধন করে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থাও যে কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল। যাঁরা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, তাঁরা যথার্থই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মানুষ প্রতি মুহূর্তে সমাজের নানাবিধ লোকের কাছে সুবিচার কামনা করে। সেই সুবিচার না পেয়ে তারাও নৈরাজ্যবাদী হয়ে পড়ে। তাই এই নৈরাজ্যেরকালে সাদাকে সাদা বলা এবং কালোকে কালো বলা এক কঠিন সংকটে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্য দিয়েই নানান কৌশলে মানুষকে শুধু শোষণ নয়, তার চিন্তার যে মেরুদণ্ড, তাকেও ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সংস্কৃতির এই সংকটে এবং রুচির দুর্ভিক্ষে আমরা কি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।
অধিকাংশই ভিত্তিহীন এবং প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। দুটি দৈনিক পত্রিকায় উপসম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্তারিতভাবে লিখেছেন। তাঁদের লেখা ও সমর্থনে অনেকেই নতুন নতুন বিষয় যোগ করেছেন। এর মধ্যে একদল সমর্থক বলতে শুরু করেছেন, বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেই ভালো হতো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, সস্তা বিনোদন এখন সময়ের দাবি। শিল্প-সাহিত্য পড়ে বা কোনো বিষয়ের গভীরে গিয়ে বিনোদন পাওয়া মানুষ দারুণভাবে কম। চিন্তাহীন একেবারে স্থূল বিনোদনে ব্যাপকসংখ্যক দর্শক বিশ্বাস করে। যে কারণে দেখা যায় মননসমৃদ্ধ কাব্য, সাহিত্য, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র এসবের আবেদনও কমে যাচ্ছে। আর যাঁরা স্থূল বিনোদন সৃষ্টি করেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ভিউ, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি। কাজেই ওই নামগুলো উচ্চারিত হলে তাঁদের ভিউ বেড়ে যাবে এবং টাকা আসতে থাকবে। তাই এসব ব্যাপার বা ব্যক্তিকে এড়িয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই পথ অনুসরণ করে অনেক বুদ্ধিজীবী এবং সুরুচিবান মানুষ মুখ খোলেননি এবং এটিকে তাঁরা কোনো আলোচনার বিষয় বলেও মনে করেন না। বিপরীত দিকে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, তাঁরা বিষয়টির সত্যতা বিবেচনা করেই যৌক্তিক আলোচনার পথ ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। ফেসবুক এ ধরনের আক্রমণের জন্য অত্যন্ত চমৎকার ব্যবস্থা। যখন খুশি যাকে-তাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যাচার করা যায়। তাঁদের মধ্যে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোকও আছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকও আছেন। আর আছেন নিরাপদে বসবাসকারী কিছু প্রবাসী। নিজেদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা পরিচয় দিয়ে যাঁরা অ্যাসাইলাম পেয়েছেন। তাঁদের কোনো লোকলজ্জার ভয়ও নেই। একটা মন্তব্য ছুড়ে দেওয়ার পর যখন চারদিক থেকে প্রতিবাদ আসে, তখন তাঁরা নিজেদের ফেসবুক আইডি, পেজ বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ থাকেন। আবার সুযোগ বুঝে দুটো কথা বলে ছিনতাইকারীর মতো পালিয়ে যান।
প্রশ্ন উঠেছে—জনপরিচিতি আর জনপ্রিয়তা কি এক? চুরি করে, ডাকাতি করে বা একটা ঘৃণ্য কাজ করে কেউ কেউ পরিচিতি লাভ করতে পারে। সেই পরিচিতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভালো কাজ করে জনপ্রিয় হওয়া কঠিন। কারণ, তার সঙ্গে থাকে জনগণের গ্রহণযোগ্যতা, শিল্পের উৎকর্ষ এবং থাকে ঈর্ষা। আমার এক বন্ধু একটি ফারসি বয়েতের কথা প্রায়ই বলে থাকেন—যখন ভালো কাজের জন্য সুখ্যাতি আসে, তখন বন্ধুরা শীতের পাতার মতো ঝরে যায় আর শত্রুরা বসন্তের পাতার মতো গজাতে থাকে।
এ ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। যাঁরা এই সব কর্মের সমঝদার, তাঁরা নিজেরা এসব দেখেন না, নিজের ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে কখনো দেখার জন্য পাঠানও না। কিন্তু ওই দুষ্কর্মের পক্ষে সাফাই গেয়ে নিজেকে জাহির করতে চান।
আরেক ধরনের মানুষ আছেন—ব্যর্থ বাম। তাঁদের একাংশ কোনো বাম কর্মকাণ্ডে এখন আর নেই। কোনো একটি ক্ষমতাসীন দলে লেজুড় হয়ে বর্তমানে জীবনযাপন করেন। তাঁদের মাথার এক কোণে হয়তো বসবাস করে নিম্নবর্গ-উচ্চবর্গ এই সব। কারণ শ্রেণিসংগ্রাম থেকে তাঁরা বহু আগেই অবসর নিয়েছেন। তাঁরা জানেন না শিল্প-সাহিত্য নিম্নবর্গের মানুষেরই সৃষ্টি। নগরজীবন শুরু হওয়ার আগে থেকেই এই নিম্নবর্গের মানুষেরাই শিল্প সৃষ্টি করত, তাদের শিল্প কালজয়ী হয়ে থাকত। আমাদের দেশের প্রায় কালজয়ী শিল্পই নিরক্ষর শিল্পীদের মুখে মুখে তৈরি। এই শিল্প যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিনোদন দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে। এ ক্ষেত্রে আজকের তথাকথিত শিক্ষিত কিছু কিছু ইউটিউবার কতটা সৃষ্টিশীল হতে পেরেছেন? এ বিষয়গুলো উপেক্ষা করে কেউ তর্কের খাতিরে তর্ক এবং ব্যক্তিগত কোনো কারণ ছাড়াই আক্রমণে তাঁরা দিনরাত অস্ত্র শাণ দিয়ে চলেছেন।
অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বেশ কিছু মাধ্যম মানুষের কাজেও লাগে। আমাদের সমাজে দুর্বৃত্তায়ন খুবই লক্ষণীয় বিষয়। সেটা রাজনীতিতে হোক, শিক্ষায় হোক, শিল্পে হোক, ব্যবসায় হোক—সর্বত্র এটিকে যদি আমরা স্বচ্ছভাবে না দেখতে পাই তাহলে এক ভয়াবহ পরিণতি আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। খুব সহজে সস্তা বিনোদন পেয়ে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। তাদের সামনে নদী লুট হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখার শক্তি ক্রমেই তারা হারিয়ে ফেলছে। স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে না পড়িয়ে মাসের পর মাস বেতন নিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু অভিভাবকেরা সংগঠিত হয়ে এর প্রতিবাদ করছেন না। ক্লাসে না পড়িয়ে কিছু শিক্ষক বিকেলবেলা কোচিংয়ে একই বিষয় পড়াচ্ছেন অর্থের বিনিময়ে। সেই শিক্ষক সরকার থেকে এবং ছাত্রদের কাছ থেকেও বেতন পেয়ে যাচ্ছেন।
আমাদের প্রাকৃতিক নদীর বালু উত্তোলন করে নানা উপায়ে কিছু লোক অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছে। একেবারে পরিকল্পনাহীন এই বালু উত্তোলন নদীর গতিপথকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এটিকে রোধ করা কি ইউটিউবারদের বক্তব্য? না, তাঁদের কর্তব্য না; বরং তাঁরা একে আড়াল করেছেন আর সুস্থ সংস্কৃতিমান ব্যক্তি এটার প্রতিবাদ করছেন। পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের দশকে, এমনকি আশির দশকেও মানুষকে শোষণ-নির্যাতন বোঝানো যেত, এখন মানুষের কাছে মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর তথ্য আছে। কিন্তু এর প্রতিরোধ করার নৈতিক শক্তি কি আছে? এই নৈতিক শক্তিটা কোথা থেকে আসে? যথার্থ শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে আসে।
যখনই কোনো দেশে বিপ্লব হয়েছে, সেখানে বিপ্লবীরা প্রথমেই অনুধাবন করেছেন, মানুষের শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য প্রয়োজন। তাই তাঁরা প্রচুর বই প্রকাশ করেছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনের ব্যবস্থা করেছেন, ভাস্কর্য ও শিল্পকলার জন্য প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, বর্তমানে কিউবা, লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এসব আয়োজন করেছে সব সময়। কিন্তু যখনই এসবের ঘাটতি দেখা যায়, ডুবে যায় সস্তা বিনোদনের সামগ্রীতে, তখনই সে দেশের মানুষের মধ্যে বিকৃতি আসে। সুস্থ সংস্কৃতির বদলে উপজীব্য হয়ে উঠতে দেখা যায় বিকৃতি ও অস্থিরতা। বর্তমানে আমাদের দেশকেও তা স্পর্শ করেছে। সর্বত্র টাকা, টাকা এবং টাকা। টাকা এবং অসুস্থ অর্থ, অসুস্থ ভোগেরও জন্ম দিচ্ছে। আমাদের বিজ্ঞজনেরা বলছেন, জ্ঞানের বাজার কমে গেছে। এটা সত্যি কিন্তু কোন বাজারটা বাড়ছে? ভোগের বাজারটা বাড়ছে। সেই ভোগ আসে অসুস্থ বিনোদনের মাধ্যমে।
আজকের দিনে বিনোদনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম মিডিয়া। এই মুক্ত মিডিয়ায় যে কেউ একটি বিনোদনের লাড্ডু ফেলে দিতে পারে, সেখানে খাওয়ার লোকের অভাব হচ্ছে না। এই বাস্তবতার বিরুদ্ধেই কিছু কথা চারদিক থেকে হচ্ছে। কিন্তু এত সুবিধাবাদী মহল তৈরি হয়েছে যে তাদের লোভ-লালসার কাছে সত্যকে ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। যদিও এ কথা অমোঘ সত্য যে পৃথিবীতে খুব অল্পসংখ্যক লোকই সত্যকে ধরে রাখে। ছোট ছোট লোভ তার সঙ্গে খোঁড়া যুক্তিবাদ, ক্ষমতার কাছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা—সবটা মিলে একটা জগৎ তৈরি হয়েছে; যা শুধুই রুচির দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে দেয়। রুচির দুর্ভিক্ষের সঙ্গে চিন্তার দুর্ভিক্ষ, শিল্পের দুর্ভিক্ষ দিন দিন বাড়ছেই। এই দুর্ভিক্ষ রোধে দেশের সচেতন মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
কয়েক দিন আগে দেখা গেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র ক্লাস বর্জন করেছে শিক্ষক পড়াতে পারেন না বলে। ঘটনাটি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তবে এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে। প্রাথমিক স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে—তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আমাদের সামনে আছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইকে বাতিল করা হয়েছে এবং অন্যান্য বিষয়েও শিক্ষকদের ত্রুটি সংশোধন করে পড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যবস্থাও যে কতটা কার্যকর হবে, তা বলা মুশকিল। যাঁরা পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন, তাঁরা যথার্থই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। মানুষ প্রতি মুহূর্তে সমাজের নানাবিধ লোকের কাছে সুবিচার কামনা করে। সেই সুবিচার না পেয়ে তারাও নৈরাজ্যবাদী হয়ে পড়ে। তাই এই নৈরাজ্যেরকালে সাদাকে সাদা বলা এবং কালোকে কালো বলা এক কঠিন সংকটে পরিণত হয়েছে।
এর মধ্য দিয়েই নানান কৌশলে মানুষকে শুধু শোষণ নয়, তার চিন্তার যে মেরুদণ্ড, তাকেও ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে। সংস্কৃতির এই সংকটে এবং রুচির দুর্ভিক্ষে আমরা কি কোনো ভূমিকা পালন করতে পারব?
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের
০৬ এপ্রিল ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের
০৬ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের
০৬ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি উক্তি নিয়ে সমকালের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করার ফলে পক্ষে যাঁরা বলেছেন, তাঁরা বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখেছেন বিপক্ষের প্রায় সবাই প্রাসঙ্গিকতা ত্যাগ করে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথে এগিয়ে গেছেন। সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের সঙ্গে আমার বক্তব্যের কোনো ধরনের
০৬ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫