Ajker Patrika

রায়পুরে কলেরার প্রকোপ?

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২২, ১১: ২৭
রায়পুরে কলেরার প্রকোপ?

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ডায়রিয়া নয়, কলেরার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এত দিন একে ডায়রিয়া বলা হলেও চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন নতুন এই তথ্য। তাঁদের মতে, এই জীবাণুর ধরন পুরোনো কলেরা রোগের মতোই। দ্রুত এই জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। তা ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তি অল্পতেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়পুরে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০-৩৫ জন রোগী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তিন সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০ জন রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অন্যরা বেসরকারি হাসপাতাল ও মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। দুই সপ্তাহ আগে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃত্যুও ঘটে।

চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবির চিকিৎসক চন্দ্র শিখর রায় বলেন, রায়পুর থেকে এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে আটজনের নমুনা পরীক্ষা করে পাঁচজনের শরীরে কলেরার জীবাণু পাওয়া গেছে। এ কারণে এটি পুরোনো কলেরা হিসেবেই আমরা শনাক্ত করেছি। তারপরও লোকজন আতঙ্কিত হতে পারে জেনে আমরা এটি প্রচার করতে চাচ্ছি না। রোগটি পানি থেকে ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি। তাই লোকজন সচেতন না হলে এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সবার সমন্বিত প্রয়াস ও সচেতনতাই পারে এই জীবাণুর আক্রমণ ঠেকাতে। যেহেতু আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ-ছয় ঘণ্টার মধ্যেই রোগী ঝুঁকির মুখে পড়ে, তাই তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এরপর আমাদের এখানে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গত রোববার মধ্যরাত থেকে গতকাল সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। গত তিন দিনে এখানে ৬৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের অন্তত ৯০ ভাগ পৌর এলাকার বাসিন্দা। এই রোগ ধীরে ধীরে উপজেলার অন্য এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। আতঙ্কে পৌর নাগরিকদের বৃহৎ একটি অংশ পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানি পান করা থেকে বিরত রয়েছেন। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের পানিতে কোনো সমস্যা নেই।

পৌরসভার কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আতঙ্কিত অনেক পৌর নাগরিক পানির বিষয়টি আমাদের জানিয়েছেন। তবে আমাদের পানিতে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের সরবরাহ লাইন ও জলাধার পরিষ্কার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. বাহারুল আলম বলেন, ‘এটি কোনো সাধারণ ডায়রিয়া নয়, এক ধরনের কলেরার জীবাণু। আমাদের চিকিৎসা অব্যাহত আছে। লোকজনকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কলেরার টিকা দেওয়া সম্ভব হলে হয়তো এর প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।’

লক্ষ্মীপুরের জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবদুল গফুর বলেন, ‘আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য বিভাগ সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। লোকজন সচেতন হলে আশা করি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে।’

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অন্জন দাশ বলেন, ‘ভয় কাটানোর পাশাপাশি জীবাণু থেকে রক্ষা পেতে লোকজনকে সচেতন করতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত