Ajker Patrika

মেলার বাইরে বইয়ের মেলা

কাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা
মেলার বাইরে বইয়ের মেলা

ছুটির দিনে বইমেলা। বিপুল লোকসমাগম, প্রচণ্ড ভিড়।

শাহবাগ মোড় থেকে জাতীয় জাদুঘরের সামনের ফুটপাত ধরে হাঁটছি বইমেলার দিকে। পাশের রাস্তার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। রিকশা আর গাড়ির প্রচণ্ড ভিড়। এই ভিড় বইমেলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে পেটমোটা অজগরের গতিতে। ঘড়িতে বেলা তিনটা। ফাল্গুনের এ সময় রাস্তায় দাঁড়িয়েও ঘুম পায়। তাই চা খেয়ে ঘুম দূর করে বইমেলায় যাব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ওয়ান টাইম চায়ের কাপ হাতে ফুটপাতে বসা বইয়ের দোকানগুলোর দিকে পা বাড়াই।

সাদা চুল-দাড়িওয়ালা এক বই বিক্রেতা বসে আছেন। দূর থেকেই বোঝা গেল, ক্রেতার সঙ্গে দরদাম চালাচ্ছেন তিনি। মূল দাম থেকে ১০০ টাকা কমে রফা হলো অবশেষে। বোঝা গেল, দাড়ি-গোঁফের আড়ালে থাকা ঠোঁটে হাসি ফুটেছে বিক্রেতার। ক্রেতার প্রস্থানের পর ঘাড়ের গামছা নামিয়ে বইয়ের ধুলো ঝাড়ায় মন দিলেন তিনি।

সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনের ফুটপাতের এই বই বিক্রেতার নাম হাবিবুর রহমান। ফুটপাতে প্রায় ২৬ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন তিনি। তবে তাঁর বই বিক্রির অভিজ্ঞতা ৩৮ বছরের। ২৬ বছরে শাহবাগের অনেক বইপ্রেমী পথচারী, পাঠক আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘হাবিব চাচা’ হয়ে উঠেছেন তিনি। হাবিবুর রহমান নরসিংদী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন প্রায় ৪০ বছর আগে। জীবিকার তাগিদে চালের ব্যবসা করতেন একসময়। কথায় কথায় জানালেন, বই পড়তে নিজেরই ভালো লাগে তাঁর। একটা সময় খুব টানাপোড়েনের সংসারে বই কেনার সামর্থ্য ছিল না। তারপর ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন।

বই বিক্রির ফাঁকে বসে বসে বই পড়েন হাবিবুর রহমান। ইতিহাসধর্মী বই পড়তে ভালোবাসেন। সকাল ১০টায় দোকান খুলে বন্ধ করেন রাত ১০টায়।

যাত্রাবাড়ীতে পরিবারের ১২ জন সদস্যের সঙ্গে থাকেন হাবিবুর রহমান। স্ত্রী, ছেলে, ছেলেবউ, নাতি-নাতনি নিয়ে এই সংসার। নীলক্ষেত ও বাংলাবাজার থেকে বই কেনেন তিনি। কিছু বই অনেকে দিয়েও যান। হাবিবুরের দোকান থেকে বেশি বিক্রি হয় বিখ্যাত মানুষদের জীবনী, ইংরেজি মোটিভেশনাল বই আর কিছু উপন্যাস। এ পি জে আবদুল কালামের ‘উইংস অব ফায়ার’, ‘টার্নিং পয়েন্ট’, ডা. রমেশ পোখরিয়ালের ‘স্বপ্ন যা ঘুমাতে দেয় না’সহ বেশ কয়েকটি ইংরেজি মোটিভেশনাল বই এবং বেশ কিছু উপন্যাস সাজানো রয়েছে তাঁর দোকানে। বইমেলার সামনের ফুটপাতের বেশির ভাগ দোকানে প্রায় একই ধরনের বই বিক্রি হয়।

এবার ভিড় ঠেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটের নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে ঢুকে পড়ি বইমেলায়। প্রতি শুক্র ও শনিবার শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন থাকে। এ দুদিন মেলায় আসে হালুম, ইকরি, শিকু ও টুকটুকি। বাবা-মায়েদের সঙ্গে এসে এ দুই দিন বইমেলায় রাজত্ব করে শিশুরা। সিসিমপুরের এই আয়োজন তাদের দারুণ পছন্দের। তবে সংবাদকর্মী ও অভিভাবকদের এখানটায় আরেকটু সতর্ক হওয়া দরকার। তাদের চাপে শিশুরা কখনো কখনো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়।

বইমেলার ভিড় ঠেলে বের হয়ে চারুকলার সামনের ফুটপাত ধরে শাহবাগের দিকে এগোচ্ছি, ফিরতি পথে। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আবারও চোখাচোখি হলো। হাসলেন তিনি। মনে পড়ল, জীবনের পড়ন্ত বেলায় পৌঁছে যাওয়া এই বই বিক্রেতা কথার এক ফাঁকে বলছিলেন, ‘আমি চাই, সবাই বই পড়ুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত