সানজিদা সামরিন
‘প্রাণের একটি ঝরনা তলা’—কথাটা কদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একই কথা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কখন যে মনের দরজায় টোকা দেয়, তা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। জোড়াসাঁকোর বাড়ির দক্ষিণের বারান্দাকে প্রাণের ঝরনাতলা ভাবতেন রবীন্দ্রনাথ। এই বারান্দার সামনে যে বাগান ছিল, আর তাতে শরতের মন- কেমন-করা রোদ্দুর এসে পড়ত। কবি তখন বাধ্য হতেন নতুন গান বাঁধতে।
আমাদের মনেরও তো বাড়ি আছে। ওই যে মেডিটেশনের সময় ১০০ থেকে উল্টো গুনে মনের বাড়িতে পৌঁছাতে হয়। সেই মনের বাড়িও থাকে নিজের পছন্দসই উপকরণে সাজানো। সেখানে যাঁদের বসবাস, বস্তুত তাঁদেরই আমরা প্রিয় মানুষ বলতে ভালোবাসি। সেই বাড়ির উষ্ণ বারান্দায় প্রিয় মানুষেরা মন কেমন করা রোদ্দুর ফেলেন; সেই রোদ্দুরে উবে যায় বছরকে বছর জমা হওয়া স্যাঁতসেঁতে গন্ধের জরা-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট সবকিছু। উবে যায় কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ, চোখের তলের রাত্তির।
প্রিয় মানুষেরা একেকজন হয়ে ওঠেন প্রাণের একেকটি ঝরনাতলা। কী দিয়ে কী মেলাচ্ছি; তবে খেই হারিয়ে ফেলার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন, রবীন্দ্রনাথের আরও একটি কথা—‘হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব।’ এই ‘হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভবের’ অনুভূতি কখনো কাউকে একা হতে দেয় না। হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে থাকা সাধ্য়ের মধ্যে বোধ হয় সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে গভীর ব্যাপার। আবার এর অন্যথা হলে ওই যে প্রাণের ঝরনাতলা, তার স্রোত একটু করে কমে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। হৃদয়ের ওজন বেড়ে যায়, চোখের তলে রাত নেমে আসে। তখনো কাছেপিঠে লোকের কমতি হয় না। জীবন যে কত কঠিন, কত সামনে যে এগোতে হবে, কত ঝড়ঝাপ্টা যে সামলে নিতে হবে, তা বোঝানোর লোকের কমতি কোনো দিনও হয়নি, হয়ও না। শুধু এদের কেউই জানতে পারে না, চোখে রাত্তির নেমে আসা মানুষটির হৃদয়ে প্রাণের একটি ঝরনাতলা শুকিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে কাজের প্রয়োজনে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কথায় কথায় বললেন, ‘আমরা আমাদের দুঃখবোধ শরীরেও অনুভব করি। তাই দুঃখবোধের দিনগুলোয় নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন যত্নের।’ তাঁর এ কথা শোনার পর মনে পড়ল, একবার বাড়ির পাশেই এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম। তখন ডাক্তার বলছিলেন, ‘মানুষ যখন মানসিক চাপে থাকে বা যখন তাঁর অ্যাংজাইটি হয়, তখন পেটে গোলযোগ দেখা দেয়। আইবিএস এর বড় উদাহরণ। কিন্তু কেউ তো আর ডাক্তারের কাছে এসে বলে না সে মনে কষ্ট পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে, দুশ্চিন্তা করছে। বলে পেটে সমস্যা।’
আহা, এখানেও ওই হৃদয় উপেক্ষিত। শরীর দৃশ্যমান তাই শরীরের ব্যথা, বেদনা, ভঙ্গুরতা, মৃত্যু গুরুত্ব বহন করে। আর দেখা যায় না বলে হৃদয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঝরনার মুখ, মরে যাওয়া নদীর মানচিত্র অলক্ষেই রয়ে যায়। শুষ্ক হৃদয় নিয়ে রোজ সকালেই আমরা ফিনিক্স পাখির মতো গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠি। প্রিয় মগটি খুব করে মেজে গরম চা ঢেলে নিই। রুটি গোল হলো কি না মেপে দেখি। মনে করে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠের হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো তুলে দিই, গৃহকর্মীকে বলি, ‘কাচার সময় শার্টের কলারে যেন এতটুকুও ময়লা না থাকে।’ শাড়ির কুঁচিতে ভাঁজ ফেলার সময় একটু ঝুঁকতেও বুকের ওজন অনুভূত হয়। চোখের তলার কালি আর কাজলের রং প্রায় কাছাকাছি হয়ে এলেও তো পারিপার্শ্বিক দায়িত্ব-কর্তব্যের এতটুকু কমতি হতে আমরা দিই না।
কেবল অন্তঃপুরবাসী আমার আমিকে ঠেলে দিই আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন কামরায়। কোনোভাবেই যেন মনের অবস্থা ঠিকরে বেরিয়ে না আসে, তার জন্য পুরু কাজল আর রংচঙা লিপস্টিক বুলিয়ে নিই। কারণ, আমাদের পারিপার্শ্বিকতা শুধু শিখিয়েছে কেবল শরীর খারাপ করলেই, মানে শরীর খুব বেশি খারাপ করলেই বিছানাকে আশ্রয় করা যায়। ‘মনে কষ্ট হচ্ছে, আর পারছি না। এবার একটু বিশ্রাম চাই। একটু কাঁদা প্রয়োজন’—এ কথা বলার অনুমতি আছে কি? এসব তো আড়ালের বিষয়, বিষয় লজ্জার। এসব হতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে, দরজার ওপারে, গভীর রাতে যার
খবর বালিশ ছাড়া আর কেউ জানবে না! জানবে তখন, যখন অনেক অনেক দিন বাদে স্ট্রোকের পর বা হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে আপনার জন্য আইসিইউর বেড খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অথবা হাঁটুর ব্যথায় সিঁড়িতে পা ফেলতে পারবেন না। অবশ্য তখনো ওই অতগুলো চামড়ার পরতের নিচে অবস্থান করা হৃদয়ের খোঁজও কেউ পাবেন না।
হৃদয়ের মৌনপাড়ে কেউ ভিড়তে পারুক বা না পারুক, এবার নিজের যত্ন নিন। দুঃখবোধ, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি আমাদের শরীরে ব্যথা, কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রাণের ঝরনাতলার স্রোত শুকিয়ে যেতে দিলে চলবে কেন?
লেখক: সানজিদা সামরিন, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘প্রাণের একটি ঝরনা তলা’—কথাটা কদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একই কথা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে কখন যে মনের দরজায় টোকা দেয়, তা ব্যাখ্যা করা মুশকিল। জোড়াসাঁকোর বাড়ির দক্ষিণের বারান্দাকে প্রাণের ঝরনাতলা ভাবতেন রবীন্দ্রনাথ। এই বারান্দার সামনে যে বাগান ছিল, আর তাতে শরতের মন- কেমন-করা রোদ্দুর এসে পড়ত। কবি তখন বাধ্য হতেন নতুন গান বাঁধতে।
আমাদের মনেরও তো বাড়ি আছে। ওই যে মেডিটেশনের সময় ১০০ থেকে উল্টো গুনে মনের বাড়িতে পৌঁছাতে হয়। সেই মনের বাড়িও থাকে নিজের পছন্দসই উপকরণে সাজানো। সেখানে যাঁদের বসবাস, বস্তুত তাঁদেরই আমরা প্রিয় মানুষ বলতে ভালোবাসি। সেই বাড়ির উষ্ণ বারান্দায় প্রিয় মানুষেরা মন কেমন করা রোদ্দুর ফেলেন; সেই রোদ্দুরে উবে যায় বছরকে বছর জমা হওয়া স্যাঁতসেঁতে গন্ধের জরা-ব্যাধি, দুঃখ-কষ্ট সবকিছু। উবে যায় কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ, চোখের তলের রাত্তির।
প্রিয় মানুষেরা একেকজন হয়ে ওঠেন প্রাণের একেকটি ঝরনাতলা। কী দিয়ে কী মেলাচ্ছি; তবে খেই হারিয়ে ফেলার আগে বলে নেওয়া প্রয়োজন, রবীন্দ্রনাথের আরও একটি কথা—‘হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব।’ এই ‘হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভবের’ অনুভূতি কখনো কাউকে একা হতে দেয় না। হৃদয় দিয়ে হৃদয় ছুঁয়ে থাকা সাধ্য়ের মধ্যে বোধ হয় সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে গভীর ব্যাপার। আবার এর অন্যথা হলে ওই যে প্রাণের ঝরনাতলা, তার স্রোত একটু করে কমে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। হৃদয়ের ওজন বেড়ে যায়, চোখের তলে রাত নেমে আসে। তখনো কাছেপিঠে লোকের কমতি হয় না। জীবন যে কত কঠিন, কত সামনে যে এগোতে হবে, কত ঝড়ঝাপ্টা যে সামলে নিতে হবে, তা বোঝানোর লোকের কমতি কোনো দিনও হয়নি, হয়ও না। শুধু এদের কেউই জানতে পারে না, চোখে রাত্তির নেমে আসা মানুষটির হৃদয়ে প্রাণের একটি ঝরনাতলা শুকিয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে কাজের প্রয়োজনে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কথায় কথায় বললেন, ‘আমরা আমাদের দুঃখবোধ শরীরেও অনুভব করি। তাই দুঃখবোধের দিনগুলোয় নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন যত্নের।’ তাঁর এ কথা শোনার পর মনে পড়ল, একবার বাড়ির পাশেই এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েছিলাম। তখন ডাক্তার বলছিলেন, ‘মানুষ যখন মানসিক চাপে থাকে বা যখন তাঁর অ্যাংজাইটি হয়, তখন পেটে গোলযোগ দেখা দেয়। আইবিএস এর বড় উদাহরণ। কিন্তু কেউ তো আর ডাক্তারের কাছে এসে বলে না সে মনে কষ্ট পাচ্ছে, ভয় পাচ্ছে, দুশ্চিন্তা করছে। বলে পেটে সমস্যা।’
আহা, এখানেও ওই হৃদয় উপেক্ষিত। শরীর দৃশ্যমান তাই শরীরের ব্যথা, বেদনা, ভঙ্গুরতা, মৃত্যু গুরুত্ব বহন করে। আর দেখা যায় না বলে হৃদয়ে শুকিয়ে যাওয়া ঝরনার মুখ, মরে যাওয়া নদীর মানচিত্র অলক্ষেই রয়ে যায়। শুষ্ক হৃদয় নিয়ে রোজ সকালেই আমরা ফিনিক্স পাখির মতো গা ঝাড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠি। প্রিয় মগটি খুব করে মেজে গরম চা ঢেলে নিই। রুটি গোল হলো কি না মেপে দেখি। মনে করে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠের হাতে প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো তুলে দিই, গৃহকর্মীকে বলি, ‘কাচার সময় শার্টের কলারে যেন এতটুকুও ময়লা না থাকে।’ শাড়ির কুঁচিতে ভাঁজ ফেলার সময় একটু ঝুঁকতেও বুকের ওজন অনুভূত হয়। চোখের তলার কালি আর কাজলের রং প্রায় কাছাকাছি হয়ে এলেও তো পারিপার্শ্বিক দায়িত্ব-কর্তব্যের এতটুকু কমতি হতে আমরা দিই না।
কেবল অন্তঃপুরবাসী আমার আমিকে ঠেলে দিই আরও অন্ধকারাচ্ছন্ন কামরায়। কোনোভাবেই যেন মনের অবস্থা ঠিকরে বেরিয়ে না আসে, তার জন্য পুরু কাজল আর রংচঙা লিপস্টিক বুলিয়ে নিই। কারণ, আমাদের পারিপার্শ্বিকতা শুধু শিখিয়েছে কেবল শরীর খারাপ করলেই, মানে শরীর খুব বেশি খারাপ করলেই বিছানাকে আশ্রয় করা যায়। ‘মনে কষ্ট হচ্ছে, আর পারছি না। এবার একটু বিশ্রাম চাই। একটু কাঁদা প্রয়োজন’—এ কথা বলার অনুমতি আছে কি? এসব তো আড়ালের বিষয়, বিষয় লজ্জার। এসব হতে হয় লোকচক্ষুর আড়ালে, দরজার ওপারে, গভীর রাতে যার
খবর বালিশ ছাড়া আর কেউ জানবে না! জানবে তখন, যখন অনেক অনেক দিন বাদে স্ট্রোকের পর বা হার্ট অ্যাটাকের পর হাসপাতালে আপনার জন্য আইসিইউর বেড খুঁজে পাওয়া যাবে না।
অথবা হাঁটুর ব্যথায় সিঁড়িতে পা ফেলতে পারবেন না। অবশ্য তখনো ওই অতগুলো চামড়ার পরতের নিচে অবস্থান করা হৃদয়ের খোঁজও কেউ পাবেন না।
হৃদয়ের মৌনপাড়ে কেউ ভিড়তে পারুক বা না পারুক, এবার নিজের যত্ন নিন। দুঃখবোধ, স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি আমাদের শরীরে ব্যথা, কিডনির অসুখ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রাণের ঝরনাতলার স্রোত শুকিয়ে যেতে দিলে চলবে কেন?
লেখক: সানজিদা সামরিন, সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৮ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৮ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৮ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫