আবু তাহের খান

জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

আবু তাহের খান

জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি, অর্থাৎ বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় সাড়ে ৮ গুণ।
তো, পণ্য বা সেবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়লে রাষ্ট্রের একটি আপাত-সুবিধা এই যে এতে রাজস্ব আহরণের সুযোগ ও পরিমাণও বাড়ে। সে ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে থেকেও ফেসবুক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে যে এগিয়ে থাকল, তাতে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণও বহুলাংশে বেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু অ্যাটকোর (অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স) তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানাচ্ছে, গুগল, ফেসবুক, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর বিপরীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর আদায় করতে পেরেছে মাত্র ৫৮ কোটি টাকা, যা উল্লিখিত আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ এ-জাতীয় আয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য জানাচ্ছে, ২০১৯ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে দেশের পাঁচটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোট ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়েছে, যা থেকে এনবিআরের রাজস্ব আহরিত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। কিন্তু চরম পরিতাপের বিষয় এই যে এনবিআর বলছে, গুগল গংকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩৮৫ কোটি টাকার। তো, এনবিআর নিজেই যদি নিজ আয়ের উৎসকে অস্বীকার করে, তাহলে আর তার রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়বে কেমন করে?
এনবিআর ভালো করেই জানে, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত কোম্পানি হিসেবে বাংলাদেশে কোনো নিবন্ধনই নেয়নি। এর মানে হচ্ছে, তারা এখানে ব্যবসা করছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। সে ক্ষেত্রে এনবিআর বা যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর কর্তৃক বহু আগেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা, এটি যে করা দরকার বা করলে যে সরকারের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ব্যাপক পরিসরে বেড়ে যাবে, সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র কোনো চৈতন্যবোধ আছে বলে মনে হয় না। তাদের নির্বিকারতার ধরন দেখলে বোঝার কোনো উপায় থাকে না যে রাষ্ট্রের পক্ষে সমুদয় রাজস্ব আহরণের দায়িত্ব এনবিআরের ওপর ন্যস্ত। তো এই যদি হয় এনবিআরের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান, তাহলে এই এনবিআরকে দিয়ে রাষ্ট্রের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কেমন করে?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এনবিআর নিয়তই যেখানে বাড়তি রাজস্বের সন্ধানে গলদঘর্ম হচ্ছে এবং দেশের অর্থনীতিবিদ ও পেশজীবীরাও যেখানে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর জন্য অহর্নিশ তাগাদা দিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে এরূপ নাগালের কাছে নগদ পাওয়া উৎস কেন এনবিআর অবলীলায় হাতছাড়া করে দিচ্ছে, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। আসলে এ ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে কর আদায় করার ব্যাপারে এনবিআরের প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য ও দক্ষতায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং এই ঘাটতির মধ্যে প্রযুক্তিগত ঘাটতি তো রয়েছেই। তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সেখানে কর্মরত জনবলের মানসিকতার মধ্যে অগ্রসর চিন্তার ঘাটতি। তাঁদের প্রচলিত ধাঁচের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ার মূল সুর হচ্ছে, ঐতিহ্যিক সূত্রে যে করদাতাদের তাঁরা চেনেন, বাড়তি কর আদায়ের সহজ কৌশল হিসেবে নানাভাবে বারবার তাঁদের ওপরই সওয়ার হওয়া, যাঁদের মধ্যে সহজতম লক্ষ্যজনগোষ্ঠী হচ্ছে সাধারণ ভোক্তা জনগণ (পরোক্ষ করের জন্য)। সে ক্ষেত্রে তাঁরা সামনে দিয়ে একটি পিঁপড়াকেও বিনা করে যেতে দিতে রাজি নন, যদিও ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজন ইত্যাদির মতো ডিজিটাল দুনিয়ার অসংখ্য হাতি তাঁদের পেছন দিয়ে নির্বিকারে হেঁটে চলে যাচ্ছে।
আসলে এ ক্ষেত্রে এনবিআরের কর্মীদের মধ্যে চলনসই মানের ও ন্যূনতম স্তরের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের ঘাটতি এতটাই প্রবল যে সেখানকার প্রচলিত ধাঁচের সেকেলে মানসিকতার জনবল দিয়ে ডিজিটাল দুনিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব। করদাতাদের হয়রানি করে কর আদায়ের মধ্যে তাঁদের যতটা আনন্দ ও তৃপ্তি, প্রতিষ্ঠানটিকে উদ্যোক্তাবান্ধব তথা জনবান্ধব করে তোলার ব্যাপারে তাঁদের ততটাই অনাগ্রহ। এনবিআরকে মানুষ পুলিশের চেয়েও বেশি ভয় পায়। অথচ দেশের কর ও শুল্ক কাঠামোটিকে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে সাজাতে পারলে এটি খুব সহজেই একটি জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠতে পারত। এনবিআরের অদক্ষতা ও জনবিমুখতায় মানুষ এতটাই বিরক্ত যে খোদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনও (এফবিসিসিআই) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে যে তারা কর আদায় বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অনাগ্রহী।
সিপিডি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উদ্ধৃত করে জানাচ্ছে, ২০২৬ সাল নাগাদ দেশে ই-কমার্সের বাজার আকৃতি দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০ কোটি ডলার, যা বর্তমানে মাত্র ৬৬০ কোটি ডলার। এর সঙ্গে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, আমাজান, লিংকডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদির মতো আন্তর্জাতিক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যুক্ত হলে তা ২ হাজার কোটি ডলারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই বিশালায়তন বাজার থেকে রাজস্ব আহরণের মতো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কি এনবিআরের রয়েছে? মোটেও না। এ ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তুতি তো নেই-ই, এমনকি তাদের যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, সে ব্যাপারেও তাদের মধ্যে কোনোরূপ চিন্তাভাবনা আছে বলে মনে হয় না, যার প্রমাণ নিচের তথ্য; যা ওপরেও একবার উল্লেখ করা হয়েছে।
বিটিআরসি যেখানে বলছে, তাদের পাঁচ মোবাইল অপারেটর পূর্ববর্তী পাঁচ বছরে ফেসবুক গংকে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, সেখানে এনবিআর বলছে, এই পরিমাণ মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা; অর্থাৎ দেশ ও দুনিয়ায় সর্বশেষ চলমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের কোনোরূপ খোঁজখবর বা আগ্রহ কোনোটাই আছে বলে মনে হয় না। এ অবস্থায় বিদ্যমান কাঠামোর এনবিআরকে দিয়ে আর যা-ই হোক, একুশ শতকের ডিজিটাল দেশ ও দুনিয়ার উপযোগী রাজস্বব্যবস্থা কিছুতেই গড়ে তোলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ৫০ বা ৫২ বছর পূর্তির মূল্যায়নে বিভিন্ন অর্জনের পাশাপাশি যেসব অনর্জন বা পশ্চাৎমুখীনতা মানুষকে পীড়া দেয়, এর মধ্যে এনবিআরের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর অদক্ষতা ও জনবিমুখতা অন্যতম। শিক্ষার মানোন্নয়ন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সামাজিক সংহতি ও মূল্যবোধ সংরক্ষণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে গত ৫০ বছরের অর্জন যেমন হতাশাজনক, তেমনি হতাশাব্যঞ্জক একটি গণমুখী রাজস্বব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়াসটিও। এ বিষয়গুলো থেকে যত দ্রুত বের হওয়া যাবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়


গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।


জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি
২২ মে ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]


জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি
২২ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।


জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি
২২ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।


জনসংখ্যার হিসাবে পৃথিবীর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অষ্টম। কিন্তু ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে তৃতীয়। শেষোক্ত ক্ষেত্রে ভারত ও ফিলিপাইনই কেবল বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মোট ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে ভারতের মোট জনসংখ্যা এখন ১৩৮ কোটি
২২ মে ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫