Ajker Patrika

অপমানে গৃহবধূর আত্মহত্যা

মনিরামপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১৫: ১৩
Thumbnail image

গ্রাম্য সালিসে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় বিচার না করে উল্টো অপমান করায় এক গৃহবধূ (৪৫) আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মনিরামপুরে।

এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গৃহবধূর স্বামী ৫ জনের নামে মামলা করেছেন। পুলিশ সালিসে বসা মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ফকিরকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, গত সোমবার নিজ বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যা করেন ওই গৃহবধূ। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাঁর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। ওই গৃহবধূর তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

এদিকে ধর্ষণচেষ্টার ঘটনার সালিস করার অভিযোগে চারজনকে মামলার আসামি হয়েছে। তাঁরা হলেন মনোহরপুর ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিরাজুল ফকির, ওই ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য গোলাম মোস্তফা ও মনোহরপুর গ্রামের স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহায়ক আবুল সরদারসহ চারজন। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।

আর ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকিরের চাচাতো ভাই মিজানুর ফকিরের বিরুদ্ধে। পুলিশ সিরাজুল ফকির ও আবুল সরদারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছে। তাঁদের বাড়ি মনোহরপুরের কাচারিবাড়িতে।

এর আগে গত সোমবার রাতে সিরাজুল ফকির, আবুল সরদার ও আসাদুজ্জামান আসাদ নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেফাজতে নেয় থানা-পুলিশ। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ আসাদুজ্জামান আসাদকে ছেড়ে দেয়।

জানা গেছে, গত শনিবার রাতে মনোহরপুর ঋষিপল্লির বাসিন্দা ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান মিজানুর ফকির। পরের দিন রোববার ওই নারী স্বামীকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে যান। অভিযোগপত্র লেখার পর তাঁর স্বামীর কাছে এলাকা থেকে ফোন করেন মনোহরপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল ফকির। সিরাজুল ফকির ধর্ষণের চেষ্টায় অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরের চাচাতো ভাই। তাঁরা ওই দম্পতিকে এলাকায় ডেকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে সমাধানের কথা বলে অভিযোগপত্র ছিঁড়ে ফেলেন।

মামলার আসামি বলেন, ‘আমরা ফিরে গেলে অভিযুক্ত মিজানুর ফকিরকে ছাড়া রোববার রাতে সালিসে বসেন সিরাজুল, মোস্তফা ও আবুল সরদারসহ কয়েকজন। সালিসে তাঁরা পূর্ণিমাকে অপমানজনক নানা কথা বলেন। অভিযুক্ত মিজানুর উপস্থিত না থাকায় পরে সালিসে কোনো সুরাহা হয়নি।’

ঘটনাটি জানাজানি হলে পরের দিন এলাকায় হইচই পড়ে যায়। বিচার না পেয়ে সোমবার সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করেন পূর্ণিমা। পরে তাঁকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিলে তিনি গৃহবধূকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে পুলিশ তাঁর মরদেহ হেফাজতে নেয়।

গ্রেপ্তার সিরাজুল ফকিরের স্ত্রী দিলরুবা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী টানা দুই বারের ইউপি সদস্য। তিনি মনোহরপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান। খুব ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ তিনি। অভিযুক্ত মিজানুর আমার স্বামীর চাচাতো ভাই। ঘটনার পর থেকে মিজানুর পলাতক। সেদিনের সালিসে আমার স্বামী যেতে চাননি। মিজানুরের ছেলে আল আমীন এসে হাত-পা জড়িয়ে ধরে আমার স্বামীকে সালিসে নিয়েছে। আমার স্বামী এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত না।’

এদিকে খবর পেয়ে মঙ্গলবার বিকেলে দলিত পরিষদের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার বিচারের দাবিতে আজ বুধবার মানববন্ধনের কথা জানিয়েছেন দলিত পরিষদের মনিরামপুর উপজেলা সভাপতি শিবনাথ দাস।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নেহালপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুজ্জামান বলেন, ‘ধর্ষণচেষ্টা এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে ৫ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছেন। আটক সিরাজুল ইসলাম ফকির ও আবুল সরদারকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টুঙ্গিপাড়া থানা-পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে রাতভর সেনাবাহিনীর পাহারা

গণ-অভ্যুত্থান ও পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম

ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন সিরামিক শিল্পের মালিকেরা

বগুড়ায় আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

ভারতকে নিয়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশীদের এত সন্দেহ কেন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত