Ajker Patrika

ভ্রমণকালীন সতর্কতা

ডা. অদিতি সরকার
ভ্রমণকালীন সতর্কতা

গত আগস্টের শেষ থেকে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে করোনা পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল ছিল। তবে এর পর থেকে অন্য দেশের মতো আমাদের দেশেও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রভাব শুরু হয়েছে। যদিও বাংলাদেশে এখনো অতিমাত্রায় সংক্রমণ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কিন্তু সংক্রমণের হার ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়েও দ্রুত ছড়াচ্ছে। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, এটি তাঁদেরও আক্রান্ত করছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হওয়ার আগেই সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। দেশে এখন সবাই যে খুব সচেতন, তেমন বলা যাচ্ছে না। অনেকেই বের হচ্ছেন ঘুরতে। কেউবা অবকাশযাপনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। করোনাকালীন কিংবা করোনা-পরবর্তী সময়ে ভ্রমণে রয়েছে কিছু আবশ্যকীয় বিষয়।

ভ্রমণের আগে সতর্ক হোন

যেকোনো ভ্রমণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে থেকে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। বিদেশযাত্রার আগে এই সতর্কতা আরও আগে থেকে নিতে হবে। বিদেশযাত্রার তিন দিন আগে কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়। ফলে ওই পরীক্ষার তিন সপ্তাহ আগে থেকে সতর্ক হতে হবে, যাতে কোনোভাবেই তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন। কারণ টেস্টে পজিটিভ হলে তাঁর যাত্রা পিছিয়ে যাবে। আপনি গন্তব্যস্থলে যেখানে উঠবেন যাঁর বা যাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, সেখানে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগী থাকলে তাঁদের ঝুঁকিতে ফেলবেন না।

ভ্রমণের সময় সতর্কতা

গণপরিবহন এড়িয়ে নিজস্ব পরিবহন বা ব্যক্তিগত গাড়িতে চলাচল করা ভালো।
গণপরিবহনে সব আসনেই যাত্রী বহন করা হয়। তাই যাত্রীদের সতর্ক হতে হবে। টিকিট কেনা থেকে শুরু করে ওঠানামা বা আসনের ক্ষেত্রে যেন পাশের যাত্রীদের সঙ্গে শারীরিক স্পর্শ না হয়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

সব সময় মাস্ক ব্যবহার

ভ্রমণের শুরু থেকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সঠিক নিয়মে মাস্ক পরতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন নাক-মুখ ঢাকা থাকে। মাস্ক কোনোভাবেই খোলা যাবে না। অনেকে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করেন, কিন্তু সেটা শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না।
তাই ভ্রমণের সময় এন-৯৫ বা কেএন-৯৫ মাস্ক পরা উচিত।
বাইরের খাবার গ্রহণ অনুচিত
বাইরে মাস্ক খুলে খাবার গ্রহণ করা যাবে না। যাত্রার আগে খেয়ে যাত্রা করুন বা পৌঁছে খাবার খাওয়া ভালো। একান্তই খেতে হলে ভিড় থেকে দূরে বসে খাওয়া উচিত।
হাত চোখ ও মুখের কাছে আনা যাবে না। যানবাহনে চলাচলের সময় সিট, হাতল স্পর্শ করা উচিত নয়। স্পর্শ করে ফেললে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। যাঁরা লঞ্চে বা ট্রেনের কেবিনে ভ্রমণ করবেন, তাঁরা একটি চাদর বা কাপড় বহন করতে পারেন। ট্রেন বা লঞ্চের কেবিনে উঠে স্যানিটাইজার স্প্রে করে 
নিতে পারেন। পাশের সিটের সহযাত্রীকেও সচেতন করতে হবে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ নয়

যেহেতু ওমিক্রন খুবই সংক্রামক, তাই খুব প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ করা ঠিক নয়।

  • দেশে করোনার টিকার কার্যক্রম চলছে। সবারই উচিত টিকা গ্রহণ করা। এমনকি বুস্টার ডোজও শুরু হয়েছে। যাঁরা এর আওতায় পড়বেন, তাঁদের টিকা নিয়ে নিতে হবে হবে।
  • জ্বর-কাশি থাকলে ভ্রমণ বাতিল করুন। যেকোনো জ্বর-কাশির রোগীর কাছ থেকে অন্তত ৬ ফুট দূরে থাকতে হবে। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে। কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি দিতে হবে।
  • যেখানে-সেখানে থুতু ফেলবেন না।
  • শরীর আবৃত করে পোশাক পরুন।
  • রেস্টুরেন্টে খেতে হলে খাবার টেবিল, ট্রে, ওয়াশরুম পরিষ্কার কি না, তা নিশ্চিত হতে হবে। টিস্যু পেপার সঙ্গে রাখুন।
  • কোথাও ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন হঠাৎ করেই প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে যেকোনো সময়। তাই গ্যাস স্টেশন, পার্ক বা রেস্তোরাঁয় যেতে হতে পারে। সেসব জায়গায় টয়লেট পেপার না থাকার আশঙ্কা আছে। কিংবা থাকলেও করোনার সময় কতটুকু নিরাপদ, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তাই ভ্রমণের সময় টয়লেট পেপার সঙ্গে রাখুন।
  • বাসে ওঠার লাইনে দাঁড়াতে হলে সব ধরনের সুরক্ষার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

ভ্রমণের সময় শিশুদের জন্য সতর্কতা

করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শিশুদেরও আক্রান্ত করতে পারে। তাই তাদের নিয়ে ভ্রমণে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের মাস্ক পরতে হবে। বড়দের জন্য যে স্বাস্থ্যবিধি, সেটাই মেনে চলতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। আক্রান্ত ব্যক্তি কিছু উপসর্গ থেকে প্রাথমিক ধারণা পেতে পারেন এবং বুঝতে পারেন ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন কি না।

উপসর্গ

  • অল্প জ্বর
  • গলায় খুসখুসে ভাব
  • হঠাৎ গলার স্বর বদলে যাওয়া
  • গলাব্যথা
  • ভীষণ ক্লান্তি ভাব
  • অবসাদ
  • শুকনো কাশি
  • মাথায় যন্ত্রণা
  • শরীর ব্যথা
  • রাতে শরীর ঘেমে যাওয়া

জেনে রাখা ভালো, ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি বদলের মতো উপসর্গ ব্যাপক হারে দেখা যায় না। ওমিক্রনকে মৃদু বা হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ডেলটা ও ওমিক্রন মিলে ডেলমিক্রন ভ্যারিয়েন্টও সামনে তাণ্ডব চালাতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বে, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই করোনা থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

লেখক: চিকিৎসক, সহকারী সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কেশবপুর, যশোর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত