Ajker Patrika

সাপপ্রেমী সহিদুল

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান
সাপপ্রেমী সহিদুল

তিনি একাই প্রায় সাড়ে তিন শ সাপ উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথম রেড কোরাল কুকরি সাপ উদ্ধার করেছেন তিনি। অসংখ্য অসুস্থ সাপ চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলেছেন। তিনবার বিষধর ওয়ালস ক্রেইটের ছোবল খেয়ে বেঁচে গেছেন। পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার ঝলই শালশিড়ি ইউনিয়নের নতুনহাট গ্রামে বসবাস করা এই সাপপ্রেমীর নাম মো. সহিদুল ইসলাম। পেশায় তিনি একজন গণিত শিক্ষক। ২০১৯ সাল থেকে নিয়মিত সাপ উদ্ধার শুরু করেন সহিদুল।

বাংলাদেশে মাত্র ছয়জন প্রশিক্ষিত সাপ উদ্ধারকারী আছেন। তাঁদের মধ্যে সহিদুল অন্যতম। তিনি ২০২০ সালে ভেনম রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এ ছাড়া তিনি ইউটিউব দেখে সাপ ধরার কৌশল রপ্ত করেন। তাঁর এ কাজে সাহস, অনুপ্রেরণা, পরামর্শ নিয়ে পাশে থাকেন ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস। সাপ ধরার জন্য নিজের টাকায় বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করেছেন সহিদুল। সংগ্রহে আছে সাপের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ওষুধ।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজারের কাছে বাঁশবন থেকে বিরল রেড কোরাল কুকরি সাপ উদ্ধার করেন সহিদুল। এর আগে এই সাপ বাংলাদেশে পাওয়ার রেকর্ড ছিল না। আঘাত পাওয়া সাপটি বাসায় এনে ক্ষতস্থানে ৯টি সেলাই দেন সহিদুল। কিছুদিন পর উন্নত চিকিৎসা ও গবেষণার জন্য সেটিকে গবেষক বোরহান বিশ্বাসের কাছে পাঠিয়ে দেন। সে বছরের ১ সেপ্টেম্বর এশিয়া প্যাসিফিক বায়োডাইভার্সিটি জার্নালে সহিদুলের রেড কোরাল কুকরি সাপ উদ্ধারের কথা প্রকাশিত হয়। স্নেক কনজারভেশন সেন্টার, রাজশাহীতে গেলে সাপটি দেখা যাবে। এরপর আরও ৩৫টির মতো রেড কোরাল কুকরি উদ্ধার করেছেন তিনি।

সাপ উদ্ধার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। একটুখানি অসতর্কতায় প্রাণও চলে যেতে পারে। জেনেশুনে এই কাজ বেছে নিয়েছেন সহিদুল। তিনি জানান, সাপ ছাড়া অন্য বন্য প্রাণী নিয়ে প্রচুর মানুষ কাজ করছে। স্বেচ্ছাসেবক আছে। আছে সংগঠনও। ভয়ে সাপ উদ্ধারে তেমন কেউ এগিয়ে আসে না বলেই তিনি এ কাজে এগিয়ে এসেছেন। এলাকায় সাপ উদ্ধারে সহিদুলের যেমন ডাক পড়ে তেমনি দূর-দূরান্তের মানুষও তাঁকে ডাকে সাপ উদ্ধারের জন্য। ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পঞ্চগড়ে সাপ উদ্ধারে কেউ সাহায্য চাইলেও ডাক পড়ে তাঁর।

মো. সহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিপদগ্রস্ত বন্য প্রাণী রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য ও খাদ্যশৃঙ্খল ঠিক রাখার কাজে ভূমিকা রাখতে চান তিনি। মানুষের হাত থেকে সাপ ও সাপের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে চান তিনি।

সহিদুল ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেকস রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের বর্তমান সভাপতি। সংগঠনটি ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও অফিশিয়ালি কার্যক্রম শুরু হয় ২০২০ সালে। সংগঠনটির বর্তমানে ২৫ জেলায় ৫৫ জন সক্রিয় রেসকিউয়ার, ভলান্টিয়ার, তথ্য প্রদানকারী রয়েছে। ফেসবুক গ্রুপে ৫ হাজারের বেশি সদস্য আছে গ্রুপটির। এই টিমের সদস্যরা বিভিন্নভাবে বন্য প্রাণী রক্ষায় সহযোগিতা করে চলেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত